শহরের ভেতর বৃষ্টি নামলে, প্রতিটি ফোঁটার শব্দ যেন অন্যরকম হয়ে যায় কেউ শোনে প্রেমের আহ্বান, কেউ শোনে বিদায়ের সুর। আর মোবাইলের ছোট্ট স্ক্রিনে ভেসে ওঠা কিছু শব্দ, ঠিক সেদিনের মতো, হয়ে ওঠে কারও জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা।
সাতটা মাত্র শব্দ, তবুও তার ভেতরে জমে থাকে না-বলা ইতিহাস, গোপন ভয়, আর অদেখা ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।
যে বার্তাটি পাঠানো হয়, তা শুধু ডেলিভার্ড বা রিড টিকের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকে না সে ঢুকে পড়ে মানুষের হৃদস্পন্দনে, বদলে দেয় মিনিটের হিসাব, শ্বাসের ছন্দ, দরজা খোলার বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত।
এই গল্প তাই শুধু একটি ‘মেসেজ’ নিয়ে নয়; সময়ের তিন মিনিটের ভেতরে ঘটে যাওয়া হাজারো অনুভূতির প্রতিধ্বনি।
এখানে সময় থমকে দাঁড়ায়, মানুষের ভেতরের গিঁট আর দূরত্বের হিসাব মিলে যায় এক বেগুনি ছাতার ছায়ায়, কষা-মিষ্টি চায়ের উষ্ণতায়, আর এক নিঃশব্দ আমন্ত্রণের ভেতরে।
যেখানে “শেষ” শব্দটি কখনোই শেষ নয় বরং হয়তো আরেকটা নতুন শুরু, তিন মিনিট অপেক্ষার পর, ভেজা দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকে আসা হাওয়া আর আলোর মতো।
আমি যখন 'সেন্ড বাটন'টায় চাপ দিলাম, ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটাটা যেন একটা চিকচিকে শব্দ করে নড়ে উঠল টিক, টিক, টিক। আমার বুকের ভেতরে তখন একটা খটখটে নীরবতা। বার্তাটা ছিল স্রেফ সাতটা শব্দ: “আমার দিকে ফিরে তাকিও না… বেশি দেরি।”
কে যেন একদিন বলেছিল
কথার ভেতরেও থাকে বরফ, থাকে আগুন।
কখনো সে বরফ কারো হাতে গিয়ে ধীরে ধীরে গলে যায়, আর কখনো সে আগুন নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
আমার সেই বার্তাটা ঠিক কোনটার মতো ছিল, আমি নিজেও জানতাম না বরফের মতো নিঃশব্দে গলে যাওয়ার, নাকি আগুনের মতো জ্বালিয়ে দেওয়ার।
শুধু জানতাম, এ বার্তাটা পৌঁছাবে যার কাছে, তার জীবনে এর একটা ঢেউ উঠবেই।
হয়তো সেই ঢেউ শান্ত করবে,
হয়তো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সবকিছু।
জীবন এমনই একটা বাক্য, একটা শব্দ, কখনো পুরো গল্পটাই বদলে দেয়।
কথা বলার আগে তাই ভেবে নিতে হয়,
কারণ কারো হৃদয়ে তা হয়তো আশ্রয় হয়ে থাকবে,
আবার কারো জীবনে তা হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে ভয়ংকর ঝড়।
মোবাইলের স্ক্রিনটা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে এল। বাইরে সিরাজুদ্দৌলা রোডের দিনটা তখন প্রায় ফুরিয়ে আসছে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল ছুঁই ছুঁই। একটা রিকশা তার পরিচিত ঠুনঠুন বেল বাজিয়ে চলে গেল, যেন কোনো পুরনো গীতিকার তার আবছা হয়ে যাওয়া সুরটাকে আবারও মনে করিয়ে দিল। আমি বারান্দার কংক্রিটে পা ঝুলিয়ে বসে আছি, পায়ের নিচে কেমন এক অদ্ভুত ঠান্ডা অনুভূতি। রাস্তার ওপারে মোড়ের চাস্টলে কেতলি থেকে ধোঁয়া উঠছে, আর বাতাসে ভেসে আসছে বৃষ্টির এক আলগা গন্ধ। আজ সারাদিনই শহরটা যেন একটা গুমোট বিষণ্ণতায় মোড়া। আমি জানতাম, রিয়াদ আমার এই বার্তাটার প্রাপক এটা পড়বেই। হয়তো সঙ্গে সঙ্গে না, একটু পরে, বা অন্য কোনো কাজে আটকে থাকার পর। কিন্তু পড়লেই যে ও বুঝবে, এমনটা নয়। আর না বুঝলেই বরং ভালো।
কারণ, বোঝা মানেই তো এখানে ছুটে আসা, নড়ে ওঠা, এমন সব প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া যা নেওয়ার মতো ক্ষমতা বা সাহস আমার আজ আর নেই। আমি আজ সেই গলার কাছে বেঁধে রাখা গিঁটটাকে আলগা করে ফেলতে এসেছি, একান্তই নিজের জন্য।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি: চলে যাব। এই চলে যাওয়ার অর্থ কিন্তু শহর ছেড়ে পালানো নয়। এর মানে, নিজের ভেতরের যে জটিল জালটা আমি বুনেছি, সেটাকে ছিঁড়ে অন্য কোনো তীরে পা রাখা। এক নতুন শুরুর দিকে এগিয়ে যাওয়া।
মোবাইলটা বারান্দার টেবিলে উল্টো করে রেখে আমি ঘরে ঢুকলাম। দেয়ালের দিকে তাকালাম, যেখানে একটা পুরনো ক্যালেন্ডারের পাতায় আমার জন্মতারিখটা লাল কলমে গোল করা। মা ক’দিন আগে ফোনে বলেছিল, "এবার বাসায় আয়, পিঠা করব।" আমি বলেছিলাম, "ব্যস্ত।" আসলে, আসতে ভয় লাগে। বাড়িতে গেলে বাবার নীরব চোখ, মায়ের শাড়ির আঁচলে মিশে থাকা পরিচিত গন্ধ সবকিছু মিলে হৃদয়ে এক অতিরিক্ত শব্দ তৈরি হয়। আমি জানি, আমি দুর্বল। এই শহরের দ্রুততার সঙ্গে আমার ভেতরের ধীরতার যে সংঘর্ষ, তাতে আমি কিছুতেই টিকতে পারব না। তাই, পালানোটা হয়তো আমার জন্য একমাত্র পথ।
“সেন্ড”। শব্দটা চাপা দিতেই যেন মনে হলো একটা অদৃশ্য হাত আমার গলা চেপে ধরল। নিঃশ্বাস আটকে এল। এরপর আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। ৩ মিনিট। মাত্র ১৮০ সেকেন্ড। একটা ক্ষুদ্র ব্রহ্মাণ্ড, যেটা আমার ভেতরে যেন সবকিছু ধারণ করে ফেললএতকিছু যে মনে হলো আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না। এই তিন মিনিটের মধ্যে কি সবকিছু বদলে যেতে পারে?
ঠিক সেই মুহূর্তে রিয়াদের ফোনটা কেঁপে উঠল। ও তখন কাজী নজরুল অ্যাভিনিউয়ের ট্রাফিক সিগন্যালে আটকা। গাড়ির কাচের ওপারে বৃষ্টির পর আলো ঝলমল করছে, কিন্তু গাড়ির হর্নের একঘেয়ে জলসা যেন কানে তালা ধরিয়ে দিচ্ছে। রিয়াদ যখন ট্রিপল রেড লাইট দেখল, একহাত স্টিয়ারিংয়ে রেখে অন্য হাতে ফোনটা তুলতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠল আমার সাতটা শব্দ: “আমার দিকে ফিরে তাকিও না… বেশি দেরি।”
ওর মনে হলো, শব্দগুলো যেন কিসের এক মন্থন। একটা গভীর গোলমাল। ও মাথা নেড়ে একটু হাসতে চেষ্টা করল। ওর অভ্যাস আছে, মাঝেমধ্যে আমি শব্দের ভেতর নাটক ঢুকিয়ে দিই। কিন্তু এরপরই ওর মনে পড়ল, আজ সারাদিন ধরে আমি ছোট ছোট আলো নিভিয়েছি আমার মেসেজে: “আজ নয়”, “পরে দেখা হবে”, “থাক না”। ওর চোখে একধরনের হালকা উৎকণ্ঠা জমল। সিগন্যাল সবুজ হলো, গাড়ি এগোল। কিন্তু রিয়াদের ভেতরের কোথাও যেন একটা লাল বাল্ব জ্বলতেই থাকলবিপদের ইঙ্গিত।
“কিসের দেরি?” ও টাইপ করতে গেল। কিন্তু আঙুলগুলো থেমে গেল, আবার মুছে ফেলল বাক্যটা। রিয়াদ জানে, আমি প্রশ্ন করলেই কোন গভীর ছায়ার আড়ালে সেঁধিয়ে যাই। সে জানে, আমাকে ধরে রাখার চেষ্টা করলেই আমি কেমন একটা দায়ের মতো ভার হয়ে উঠি, যেন একটা বাঁধাধরা গলার কাছে চেপে বসি। তাই ও চুপ করে রইল, কিন্তু ভেতরের অস্থিরতা বাড়তে লাগল।
সেই মুহূর্তে, রিয়াদের গাড়ির পাশে দাঁড়ানো একজন ডেলিভারি রাইডার, যার গায়ে ভেজা রেইনকোট, হেলমেটের ভিতরে আঙুল বুলিয়ে নিল। তার চোখ কিছুটা ঝাপসা। একটা ছোট ডেলিভারি ব্যাগ, সম্ভবত ভেতরে কারো অপেক্ষার রাতের খাবার। সেও ফোনে একটা নোটিফিকেশন পেল: “পিকআপ ৩ মিনিটে।” সে একটু কষ্টেসৃষ্টে হাসল, নিজের সঙ্গে নিজেই কথা বলল, "জীবনের সবকিছুই কিভাবে তিন মিনিটে সংক্ষিপ্ত হয়!" যেন এক বিরাট দার্শনিকতার ভার তার কাঁধে চাপল।
রিয়াদ আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করল না। নিয়ম ভেঙে গাড়ি ঘুরিয়ে দিল। তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার আমি। তার গন্তব্যওই বারান্দার কংক্রিট, যেখানে বসে আমি এখন শামুকের মতো শরীর গুটিয়ে রেখেছি, নিজেকে পৃথিবীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে।
আমার জানালার খসে পড়া রংয়ের খাঁজে বৃষ্টির আলগা দাগ। আমি হাত বুলিয়ে দেখি, কিছু কিছু দাগ থেকে যায় শুধু আলগা আলগা স্মৃতি হয়ে। সেগুলো মুছতে চাইলেও মোছা যায় না, বরং আরও গভীরে গেঁথে যায়। বালিশের নিচে এখনো একটা পুরনো চিঠি রাখা কাগজে লেখা, হাতে ছোঁয়ানো। সেটার নিজস্ব একটা ঘ্রাণ আছে, অনেকটা স্মৃতির মতো। আমরা যখন প্রথম দেখা করেছিলাম, তখন কাগজের ভেতরে লুকিয়ে নিয়েছিলাম বেসুরো সব আনন্দ। সেই আনন্দগুলো তখন ছিল কাঁচা, অকৃত্রিম। তারপর ধীরে ধীরে সবকিছু স্ক্রিনে সরে এলোইমেজ, ভয়েসনোট, ইমোজি। আনন্দেরও ইমোজি আছে বটেদুটি হাত জোড়া, লাল হৃদয়, একটা হাঁসিমুখ। কিন্তু দুঃখের ইমোজিরা কখনোই সঠিক লাগে না; তারা কেবল চওড়া, কার্টুনচোখে কান্না দেখায়, বাস্তবের সেই লবণাক্ত অশ্রুর স্বাদ, সেই গভীর ব্যথা তারা ধারণ করতে পারে না।
শেষ বার্তাটা পাঠিয়ে আমি যে নিঃশ্বাসটা ফেললাম, সেটা যেন সারা শরীর জুড়ে বাতাসের নতুন এক নকশা আঁকল। মনে হলো, কেউ একজন আমার পাশে বসে আছে, সম্ভবত আমিই, অন্য কোনো সময়ের আমি। সে বলল, “তুই ঠিক করেছিস?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, দেরি হয়ে গেছে। যে দেরি অপেক্ষা করা যায় না, সেই দেরি।”
সে হেসে উঠল। "দেখ, দেরি আমরা নিজেরাই আবিষ্কার করি। ঘড়িও তো আমাদের বানানো। তবু প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একটা করে অনিঃশেষ দেরি থাকে যেটা কেউই পুষিয়ে দিতে পারে না। আর সেখানেই হয়তো সত্যিকারের গল্পের শুরু।"
আমি মাথা নেড়ে চুপ হয়ে রইলাম। তার কথাগুলো যেন কেমন এক অদ্ভুত সত্য নিয়ে এল। দেরি কি আসলেই একটা আবিষ্কার? নাকি বাস্তবতা?
গাড়ির ধাতব লাঠি ওয়াইপার বৃষ্টির ফোঁটা মুছছে দ্রুত। আর রিয়াদের মাথায় অবিরাম ধাক্কা দিচ্ছে একই প্রশ্ন: “কেন দেরি?” সে জানে, দেরি অনেকরকম হয়। সময়ের দেরি, বিশ্বাসের দেরি, ভালোবাসার স্বীকারোক্তির দেরি। সে নিজেও তো কত দেরি করেছে আমাকে আশ্বাস দিতে, নিজের ভুল স্বীকার করতে, নির্ভয়ে বলতে, “আমি ভয় পাই।” সেই ভয়, যা প্রতিটি মানুষের ভেতরেই কমবেশি থাকে।
একটা মানুষ কি সবসময় সাহসী থাকে? না। সাহস বলে আমরা যেটা মনে করি, সেটা আসলে ভয়েরই একটা খোলস। ওই খোলসটাই মাঝে মাঝে রাস্তার সাদা লেনের মতো টেনে দেয়, যেন বলে, “এপারে যাচ্ছি, কিন্তু পার হচ্ছি না।” রিয়াদ সেই খোলস ছিঁড়ে বের হতে চাইছে, আমাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য।
রিয়াদ চট করে সাইড দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিল, সিগনাল অগ্রাহ্য করে। সামনে যে রিকশাটা, তার হ্যান্ডেলে একটা রঙচটা রিবন উড়ছে বাতাসে। রিকশাওয়ালার শরীর শীর্ণ, কিন্তু তার চোখে অদ্ভুত এক স্থিরতা, যেন সে জীবনের সব ঝড়কে মেনে নিয়েছে। “ভাই, একটু সাইড দেন,” রিয়াদ হর্ন দিল। রিকশাওয়ালার চোখ কিন্তু স্থির, ঘাড় না ঘুরিয়ে সে সহজভাবে বলল, “হর্নে বৃষ্টি থামে না।”
এই সামান্য বাক্যটা রিয়াদের কপালে যেন একটা নতুন আঘাত করল। সে জোর করে হাসল। রিকশাওয়ালার কথাগুলো তার মনের গভীরে এক নতুন চিন্তার জন্ম দিল। যাই হোক, সে তবু এগোল, তার ভেতরের অস্থিরতাকে সঙ্গী করে।
বৃষ্টির ফোঁটায় বারান্দার টিনে একটানা টকটকে বাজনা। আমি একটা কাপ মগে চা ঢাললাম। চাটা দুধ-চিনি ছাড়াএমন চা আমি আগে খেতাম না। কিন্তু আজকাল কষা কষা একটা টান চাই, যা মুখে দিলে মনে হয় মুখ আর অদেখা পাহাড় হয়ে যায়, রুক্ষ আর দৃঢ়।
নেটওয়ার্কের সিগন্যাল কখনো পূর্ণ, কখনো অনুপস্থিত। বার্তাটা ওর কাছে পৌঁছেছে তো? ওয়াটসঅ্যাপের ‘ডেলিভার্ড’, ‘রিড’ টিক, মেসেঞ্জারের ছোট চেহারামানুষ আমরা আজকাল কতটা ছোট চিহ্ন দিয়ে বুঝি, “তুমি আছ।” আছো মানে কি? একটুখানি চোখ নামিয়ে নেওয়া? না, কানে হেডফোন গুঁজে বসে থাকা? আছো মানে কি শুধু শারীরিক উপস্থিতি? নাকি মনের উপস্থিতি?
এই সময়টা আমি হঠাৎ মায়ের কথা ভাবলাম। মায়ের শাড়ির কোল থেকে যে গন্ধটা আসে সিজনের বাইরে আম্রপল্লবের মতো। মা জানে না আমি ভিতরে ভিতরে কীসের সঙ্গে লড়ছি। আমি জানি না মা কীভাবে বাইরের দিকে এত স্থির থাকেন, যেন পৃথিবীর কোনো কিছুই তাকে নাড়াতে পারে না।
আমি জোরে নিঃশ্বাস নিলাম। মাথার ভেতরে একটা কণ্ঠখুব চেনাবলল, "যদি রিয়াদ এসে পড়ে?" আমি বললাম, "তাহলে বারান্দার কংক্রিটের ফাঁটে জমা পানি তাকে দেখাব। ও যেন দেখে আমি এখানে কতক্ষণ বসে ছিলাম। তবু… হয়তো দরজা খুলব না।"
দরজার কপাটের গায়ে আমি হাত রাখলাম সেখানে কেমন একটা মানবিক উষ্ণতা লেগে আছে, হয়তো আমারই হাতের ছোঁয়া। আমি জানি, এই দরজা একদিন এমনভাবে খুলব, যে আর কেউ বন্ধ করতে পারবে না। কিন্তু আজ নয়। আজ এই দরজাটা বন্ধই থাক।
যে বাইকওয়ালাটি একটু আগে রিয়াদের পাশে ছিল, তার নাম শিপন। তার হাতে এখন ম্যাপ খোলা। গন্তব্য আমার বাড়ির এক গলি পেরিয়ে। শিপনের ফোনে তার নিজের বাড়ির ছবি একটা ভাড়াটে ঘরের নীল রং ফিকে হয়ে গেছে। একটি ছোট মেয়ে, তৃতীয় শ্রেণি। বৃষ্টি হলে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। আজ মেয়েটি ফোনে বলেছে, "আব্বু, ময়ূরের মতো ছাতা এনে দাও।" শিপন হাসল। তার জীবনে বিলাসী কেনাকাটার সুযোগ কম, তবু সে চান্স খোঁজে কোনো ফুটপাতে রঙিন ছাতা ২০০ টাকার মধ্যে মিললে কিনবে। মেয়ের মুখে হাসি দেখার জন্য এই সামান্য চেষ্টা।
সে হঠাৎ ব্রেক কষল। সামনে পিচের ওপর একটা মরা শুঁয়ো পোকা পানিতে ভিজে কালচে। শিপন ভাবল, "এটার জীবনও তো জীবন ছিল। হয়তো সেও কারও ডাকে চলতি ছিল, কোনো এক গন্তব্যের দিকে।" তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে আবার এগোল। এই শহরে জীবন আর মৃত্যু পাশাপাশি হাঁটে, আর ছোট ছোট ঘটনাও বড় দার্শনিকতার জন্ম দেয়।
ঠিক সেই মুহূর্তে শিপনের ফ্ল্যাট টায়ারে লুকোনো একটা কীলক চেঁচিয়ে উঠল চ্যাঁচ চ্যাঁচ। সে ভাবল, "জীবনে কত কীলক!" তবু সে এগোতে লাগল৩ মিনিটের ডেডলাইন, ৫০ টাকা টিপ, ১০ টাকা চায়ের পয়সা। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই যেন এক কঠিন হিসাব।
রিয়াদ আমাকে আবার লিখল: "তুই আছিস?" পাঠাল না। আবার লিখল: "আমি আসছি।" পাঠাল না। শেষে লিখল: "দরজা খুলিস" এইটুকু পাঠাল। পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে যেন বুকের ভেতর ধূপের রোদ ঢুকে গেল জ্বলজ্বল, কাঁপা কাঁপা। এই সামান্য বাক্যটিতেই তার ভেতরের সবটুকু আকুলতা প্রকাশ পেল।
ও একসময় আমাকে বলেছিল, "তুই নিজের বিষণ্নতাকে খুব সুন্দর করে সাজাস।" আমি রেগে গিয়েছিলাম, বলেছিলাম, "সাজাই কারণ এটা ছাড়া আমার আর কিছু নেই।" রিয়াদ সেদিন নিশ্চুপ থাকল। পরে বলেছিল, "আমার আছে। আমি তোর পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করি। এটা যদি সাজাইয়া বলা হয়, তবু শোন।"
সেদিন আমি শুনিনি। আজ, তিন মিনিটের ভেতর, সেই পুরনো কথাগুলো বৃষ্টিজলে গলে আবার স্পষ্ট হচ্ছে। প্রতিটি শব্দ যেন নতুন করে অর্থ নিয়ে ফিরে আসছে।
দরজা খুলব নাকি? আমি ভেতরে-বাইরে দুই দিকের শব্দ শুনি। বাইরেরিকশা, বৃষ্টির মিউমিউ শব্দ, দূরের মসজিদে আজান। ভিতরেআমার হৃদস্পন্দনের মৃদু ঢিপঢিপ, ফ্লাস্কে ঢালা চায়ের টুংটাং। এই দুই বিশ্বের মাঝখানে আমি দাঁড়িয়ে, এক দ্বিধার যুদ্ধক্ষেত্রে।
তখনই টেবিলে উল্টো করে রাখা ফোনটা কেঁপে উঠল। তীক্ষ্ণ, সংক্ষিপ্ত। আমি ঘুরে তাকালাম। "দরজা খুলিস"রিয়াদের মেসেজ।
আমি চোখ বুঁজলাম। "এখনই?" আমি টাইপ করতে চাই। তারপর মনে হলো, এইসব কথা তো আমরা হাজারবার বলেছি। তার কি আর দরকার আছে? একই কথা বারবার বলে কি কোনো লাভ হবে?
আমি জানি, আমার আজকের বার্তা ওকে হয়তো আঘাত দিয়েছে। "ফিরে তাকিও না"এই কথাটা মাঝে মাঝে আমি নিজেকেই বলি। কারণ, আমি জানি আমি ফিরলেই থেমে যাব। আমি ভেবেছিলাম, ও যেন না থামে। ওর একটা করপোরেট চাকরি, ওর বাবা অসুস্থ, ওর ছোট বোন এ বছর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে। আমার প্রশ্ন আর দোলাচলের ভেতর ও মোচড় খেতে খেতে ক্লান্ত। আমি চাইনি, ও থেমে যাক। ওর সামনে যে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, আমি সেই পথে কোনো বাধা হতে চাইনি।
কিন্তু মানুষ আমরা কার প্রতি কতটা দায়ী, আর কার প্রতি কতটা? নিজের প্রতি দায়? নাকি অন্যের প্রতি? এই ভারসাম্যই আমাকে কষ্ট দেয়, আমাকে প্রতিটি পদক্ষেপে থামিয়ে দেয়।
তবু আমি চৌকাঠে দাঁড়ালাম। হাতটা কপাটের ওপর। কানে কি যেন শিস বাজলহয়তো বৃষ্টি, হয়তো আমার ভেতরেরই কোনো এক অজানা সুর।
রিয়াদ দ্রুত লেন বদলাচ্ছে। একটি ছাউনিওয়ালা ফুটপাতে পাঁচ-ছয়জন ভিজে মানুষ গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। এক নারী নিজের ছেলেকে গভীর মমতায় জড়িয়ে রেখেছে, শিশুটির কপালে চুমু খাচ্ছে। রিয়াদ দেখল আর ভাবল, "মানুষের এই জড়িয়ে ধরার দৃশ্যটাই কি শেষ পর্যন্ত সব? বাকিটা শুধু কোলাহল, নিরর্থক শব্দ?" তার মনে যেন এক ঝলক ছবি ভেসে উঠলআমি কাঁধে মাথা রেখে নীরবে বসে আছি। সেই ছবিটা তাকে আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করল।
সে গতি বাড়াল। কিন্তু এই শহর গতি এড়িয়ে চলে। মোড়ে মোড়ে সাদা দাগ, লালবাতি, কনক্রিটের বেড়া। রিয়াদ হঠাৎ ব্রেক কষলসামনে একটা বাইক পড়ে গেছে। হেলমেট পরা লোকটাশিপনমাটিতে বসে হাঁটু চেপে ধরেছে, বাইকের চাকা বাঁকা।
রিয়াদ গাড়ি থামিয়ে নেমে গেল। "ভাই, ঠিক আছেন?"
শিপন হাসল। "আছি। স্রেফ টাইমিং খারাপ।"
টাইমিংশব্দটা যেন এ বিকেলের থিম। রিয়াদ তার কাঁধে হাত রাখল। "কোথায় যাবেন? ভেতরে উঠবেন? আমি পৌঁছে দিই।"
শিপন দ্বিধা করল, তবুও ওঠে বসলো। গাড়ির ভেতরে বৃষ্টির গন্ধ, ভেজা কাপড় থেকে ভেজা ধোঁয়া বের হচ্ছে। রিয়াদ ড্যাশবোর্ডে রাখা টিস্যু এগিয়ে দিল। শিপন কৃতজ্ঞ চোখে তাকাল, তার হাতে কাঁপুনি সামান্য কমল।
"ভাই, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?" শিপন জিজ্ঞেস করল।
রিয়াদ এক সেকেন্ড থেমে বলল, "যে দরজাটা হয়তো আজ খুলবে না।" তার গলার স্বর কিছুটা ভারী শোনাল।
শিপন মৃদু হাসল, যেন জানে দরজা কখনো কখনো নিজে থেকেই খুলে যায়, শুধু ডোর চেইনের শব্দটা একটু সময় নেয়, অথবা যাকে খুলতে হবে, তার ভেতরের প্রস্তুতিটা একটু দেরি হয়।
আমি বারান্দায় যেতে যেতে হঠাৎ পড়ে থাকা একটা মুদ্রা কুড়িয়ে নিলামএকটাকা। পাশের বাসার বাচ্চারা কখনো কখনো বারান্দার রেলিংয়ে জলরঙ ছিটিয়ে দেয়; আজ কালো, নীল আর সবুজ একে অন্যের ভেতরে ঢুকে আছে, মিলেমিশে একাকার। আমি সেই ছোপগুলো দেখে ছোটবেলার এক বৃষ্টির দিনের কথা মনে করলামবাবা আমাকে কাঁধে তুলে ধরেছিলেন। আমি বলেছিলাম, "বাবা, আকাশে কি এতদূর?" বাবা বলেছিলেন, "আকাশ সবসময় কাছে। শুধু আমরা দূরে দাঁড়াই।"
আমি দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বুঝলাম, আজ আমি নিজেই দূরে দাঁড়িয়েছি। অথচ আমি নিকটে যেতে চেয়েও থেমে গেছিকারণ ভয়, কারণ গলার গিঁট। সেই অদৃশ্য গিঁট আমাকে বারবার পিছিয়ে দেয়।
তখনই দরজায় হালকা আঘাত। চেন না খুলেও বোঝা যায়ভদ্র, একটু নরম, তবু দৃঢ়। রিয়াদের শব্দ। আমি নীরবে দাঁড়াই। ভেতর থেকে কণ্ঠ ভেসে আসে, "দয়া করে দরজা খুলিস।"
আমি কিছু বললাম না। আমি কেবল ভিতরের বাতাসে উত্তর লিখলাম: "আমি এখনই পারছি না।"
রিয়াদ শিপনকে গন্তব্যে নেমে যেতে দিল। বিলটা সে নিজেই পরিশোধ করল"যাও, আগের জনের খাবার পৌঁছে দাও।" শিপন আঁচলে হাত মুছে রিয়াদকে সম্মান জানাল, যেমন মাটির মানুষরা করে, তাদের সহজ সরল কৃতজ্ঞতায়। সে কোথা থেকে একটা রঙিন ছাতা বের করলবেগুনি রঙের, তাতে আঁকা ছোট ছোট সবুজ পালক। এটা রিয়াদের দিকে বাড়িয়ে দিল। "ভাই, এটা আমার মেয়ের জন্য কিনেছিলাম। কিন্তু ওতো সস্তা; আরেকটা কিনে দেব। আপনি ছাতাটা নিয়ে যান, আজ বৃষ্টি আপনাকে ভিজুক না।" তার চোখে এক অদ্ভুত আন্তরিকতা।
রিয়াদ হতভম্ব। নিতে চাইল না। শিপন হেসে বলল, "এই শহরে কেউ কারও জন্য ছাতা তুলে ধরলে, বৃষ্টি একটু কমে যায়। আপনি আমার বাইকও পাশে এনে দিয়েছিলেন, সেটার কৃতজ্ঞতা।"
রিয়াদ ছাতাটা নিল। ভেতরে ছোট্ট একটা কাগজখসখসে, তাতে লেখা: "আব্বু, তুমি নায়ক।" রিয়াদ কাগজটা হাতে নিয়ে থমকে গেল। তার মনে হলো, আজ যদি আমার দরজায় একটা ছোট্ট কাগজ ঠুকিয়ে দিতে পারত: "নীরা, তুই আমার নায়ক"তাহলে কি দরজা খুলত? এই প্রশ্নটা তার মনে ঘুরতে লাগল।
বৃষ্টি একটু বাড়ল। আকাশের কুসুমী আলো ম্লান হলো, শহরটা আরও বেশি ধূসর হয়ে এল। আমি দরজার কাছ থেকে সরে এসে ডেস্কে বসলাম। ড্রয়ার খুলে একটা ছোট কাগজ নিলাম। লিখলাম: "আমি দেরির ভেতরে থাকি, কিন্তু আমি হারিয়ে যেতে চাই না।"
কাগজটা ভাঁজ করে পকেটে রাখলাম। জানালার পাশে যাওয়ার সময়, চোখে পড়ল টেবিলের ওপর রাখা পুরোনো চিঠিটাযেটাতে রিয়াদ প্রথমবার লিখেছিল, "তুই থাক।" তার হাতের স্পর্শ লেগে আছে যেন এখনো সেই কাগজে।
আমি কাগজটা তুলে গন্ধ নিলাম। পুরোনো কালি, ঘামের ক্ষীণ লবণাক্ত ঘ্রাণ। তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। রাস্তার ওপারে শ্যাওলা জমেছে, বৃষ্টির জমা পানিতে আকাশ ভেঙে পড়েছে ছোট ছোট খন্ডে।
ঠিক তখনই দরজায় আবার শব্দ। এবার একটু জোরে, জরুরি। আমার বুক ভিতরে খুব মৃদু শুক শুক করে কাঁপতে লাগল।
আমি দরজার দিকে যেতে যেতে নিজেকে বললাম, "কেউ যদি বলে 'ফিরে তাকিও'তাহলে কী করব?" আমি জানি না। এই দ্বিধা আমাকে গ্রাস করে ফেলল।
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম। কাঁপা হাতে চেইন খুললাম। কপাট একটু ঠেলে দিলাম। দরজার ফাঁকে বৃষ্টির জল ও বাতাস ঢুকে পড়ল, যেন এক নতুন পৃথিবী প্রবেশ করছে আমার ঘরে। সামনে দাঁড়িয়ে রিয়াদচোখে অনিদ্রার চিহ্ন, হাতে সেই বেগুনি ছাতা। ছাতার ডগা থেকে পানি পড়ছে টপ টপ করে। তার ঠোঁটে জমে আছে অগণিত প্রশ্ন।
আমার নিঃশ্বাসে জড়ানো ভয় হঠাৎ একটু ছুটে গেল, যেন একটা অদৃশ্য পাখি খাঁচা থেকে মুক্তি পেল। আমি তাকিয়ে রইলাম। যেই শব্দটা এর আগে কখনো বলিনিসেটা বলার সাহস হলো না; কিন্তু আমি একটু পিছিয়ে দাঁড়ালামএমন দাঁড়ানো, যেটা ভেতরে ঢোকার এক নীরব আমন্ত্রণ।
রিয়াদ ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকল। দরজা ভিজে গেল। সে ছাতাটা ভাঁজ করে একপাশে দাঁড় করাল, যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস গুছিয়ে রাখছে। তারপর বলল, খুব নরম করে, তার স্বর যেন আমার কানের কাছে ফিসফিস করে উঠল"তোর বার্তাটা পড়েছি। তিন মিনিট হয়েছে।"
আমি হালকা হাসলাম এমন হাসি যা সাধারণত ভোরবেলায় পাখি ডাকলে আসে, এক নতুন দিনের আগমনী বার্তা। "আমি ভেবেছিলাম তুই আসবি না। তাই লিখেছিলামফিরে তাকিও না। দেরি হয়ে গেছে।"
রিয়াদ বলল, "দেরি কখনও এমন হয় যে, আমরা মিলে মেরামত করি। তুই যদি দরজা খুলিস, তাহলে সেই দেরিও আর দেরি থাকে না।"
আমি মাথা নেড়ে চুপ। তার চোখে আমি ছোট ছোট স্পষ্টতা দেখলাম অনুশোচনা, ভয়, আর অবশিষ্ট ভালোবাসা। ওরা একসাথে ছোট ছোট জোনাকির মতো, অন্ধকারে আলতো আলো দেয়, পথ দেখায়।
আমি বললাম, "আমি হারিয়ে যেতে চাইনি। আমি শুধু কিছু দূরত্ব চাইছিলাম যেখানে আমার নিঃশ্বাসটা নিজের মতো চলতে পারবে।"
রিয়াদ ধীরে এসে চৌকাঠে বসে পড়ল, যেন সে জানে এই মুহূর্তটা কতটা স্পর্শকাতর। সে এই কথাটা আরেকবার বলল"আমরা কি পারি না নিজের ভেতরে জায়গা করে নিতে, আবার একে-অপরকে জায়গা দিতে?" তার প্রশ্নটা আমার মনে এক নতুন ভাবনার জন্ম দিল।
বৃষ্টি তখন জানালার শিরায় শিরায় নকশা আঁকছে, যেন প্রকৃতিও আমাদের গল্পের নীরব সাক্ষী। আমাদের দু'জনের মাঝে একটা মৃদু নীরবতা। সেই নীরবতার ভেতর আমি টের পেলাম"শেষ মেসেজ" এটা আসলে "শেষ" নয়। অনেক সময় আমরা শেষ লিখি, কিন্তু কাগজের অন্য পাশে এখনো জায়গা থাকে। কলমের কালি ফুরোয় না।
আমি দাঁড়িয়ে কেটলিতে পানি চড়ালাম। চা পাতার গন্ধ উঠতে লাগল, যা ঘরের বাতাসকে এক অদ্ভুত শান্তি দিল। সে বললো, "তুই কষা চা খাস কবে থেকে?"
আমি বললাম, "যেদিন থেকে মনে হলো মিষ্টি আমাকে বোকা বানায়।"
সে হেসে ফেললনরম, পুরোনো দিনের মতো। "মিষ্টিও তো কথা বলে, নীরা। তুই ভয় পেলে আমি চিনি কমিয়ে দেব।"
আমি চা ঢেলে দিলামদুইটা কাপ। এবার তাতে একটু চিনি দিলাম, ঠিক দু'চামচ। এক কাপ ওর দিকে বাড়ালাম। আমাদের আঙুল ছুঁয়ে গেল না। তবু যে উষ্ণতা, সেটা এ ঘরের, এ বৃষ্টির, এ শহরেরএক অদৃশ্য বন্ধন যা আমাদের দুজনকে কাছাকাছি আনল।
আমরা বসে কথা বললাম। অনেক কথাই আসলে নাও বলা। আমরা যেমন আগের শীতে বলিনিআমি রাতে ঘুমোতে পারি না; তুই থাকলে বুকটা শান্ত হয়। আমরা যেমন আগের গ্রীষ্মে বলিনিতুই যখন রাগ করে চলে যাস, আমার ঘরের বাতাস ভারী হয়ে যায়, যেন দম বন্ধ হয়ে আসে।
রিয়াদ বলল, "তুই 'ফিরে তাকিও না' কেন লিখলি?"
আমি বললাম, "কারণ আমি ভাবলাম, আমি তোর জন্য ভার। তোর এত দায়িত্ব। আমি এমন একটা অনিশ্চয়তাআমি নিজেকে বোঝাতে পারি না, তোকে কীভাবে বোঝাব?"
রিয়াদ মাথা নাড়ল। "তুই যে নিজেকে বোঝাতে পারিস না, সেটাই তো তোকে সুন্দর করে। বুঝতে না পারা মানেই মরা গাছ নয়। বরং এটা জীবনের ধোঁয়াযেটা আমাদের চায়ের কাপে ওঠে, জানালার কাঁচে আঁকা হয়।"
আমি কিছু বললাম না। আমি শুধু চুমুক দিলাম। কষা-মিষ্টির জুতসই ভারসাম্য, যা আমাদের সম্পর্কের মতোই জটিল কিন্তু সুন্দর।
সেই সময়ে বিদ্যুৎ একটু দপদপ করে উঠল, যেন প্রকৃতিও আমাদের কথোপকথনে যোগ দিল। বাতাসে আপনা-আপনি একটা শিরশিরে সুর। বাইরে রিকশা গেলট্রিং-ট্রিংযেন বলছে, "চলো আকাশ দেখাই।"
আমরা কথা ঘুরিয়ে আনলাম ছোটখাটো প্রসঙ্গেশিপনের কথা বলল রিয়াদ। আমি শুনলাম, মনে হলো শহরের অপরিচিত একটি মুখ হঠাৎ আমাদের গল্পে ঢুকে পড়েছে, যা আমাদের দুজনকে আরও কাছাকাছি আনল। "ও আমাকে ছাতা দিল," রিয়াদ বলল। "ছোট্ট কাগজ'আব্বু, তুমি নায়ক'ওর মেয়ের লেখা।"
আমি হাসলাম। "বৃষ্টি কমিয়ে দেওয়ার মতো ছাতা। কে জানে, হয়তো ওর মেয়েই সত্যিকারের নায়ক বানিয়েছে তাকেশব্দ দিয়ে।"
রিয়াদ বলল, "তুইও তো শব্দ দিয়ে আমাকে ধরে রাখিস।"
আমি স্তব্ধ। আমি কি ধরে রাখি? আমি তো মুক্তি দিতে চাই। কিন্তু হয়তো মুক্তি আর ধরাদুটো একইসাথে সম্ভব। ঠিক যেমন জানালা খোলা রেখে পর্দা টেনে রাখা যায়। বাতাস আসে, তবু সব দেখাও হয় না। একটা অদৃশ্য ভারসাম্য।
আমরা বারান্দায় দাঁড়ালাম। বৃষ্টিটা পাতলা হলো, ধীরে ধীরে কমে এল। রাস্তার আলো পানিতে চোখ ডোবায়, গর্তে যেন ছোট ছোট জোনাকি আলো জ্বালাচ্ছে।
রিয়াদ বলল, "তুই চাইলে আমরা থেরাপিস্টের কাছে যেতে পারি। তুই চাইলেকিছুদিন দূরে থাকি। তুই চাইলেআমি প্রতিদিন রাতে কেবল 'আমি আছি' লিখে রাখি, আর কিছু না। তুই চাইলে…"
আমি বললাম, "তুই কী চাইস?"
রিয়াদ একটু ভেবে বলল, "আমি চাই তুই ভয় না পাস। আমি চাই তোর গলার গিঁটটা নিজেই খুলে ফেলিস। আমি পাশে দাঁড়িয়ে থাকব, গিঁটে হাত দেব না।"
বাকিটা আর কিছু বলার ছিল না। আমরা কেবল শুনলামছাদের উপর থেকে পানি পড়ার শব্দ, ড্রেনের গরগর, দূরের ট্রেনের হুইসেল। প্রকৃতির এই শব্দগুলো যেন আমাদের নীরবতাকে আরও গভীর করল।
স্মৃতির খাতা: পুরোনো অক্ষর, নতুন ব্যঞ্জনা
রাত বাড়তে লাগল। আমি ড্রয়ার থেকে চিঠিটা বের করে আনলাম। রিয়াদের হাতের লেখা একটু বাঁকানোএকেকটা এল, এফ, এইচ এমনভাবে চৌকাঠ পেরোয় যেন তারা নিজেদেরও অবাক করে।
আমি চিঠিটা টেবিলে রাখলাম, তার পাশে সেই ছোট কাগজটা"আমি দেরির ভেতরে থাকি, কিন্তু আমি হারিয়ে যেতে চাই না।"
রিয়াদ বলল, "লিখেছিস?"
আমি মাথা নেড়ে স্বীকার করলাম।
সে কাগজটা পড়ল। তারপর বলল, "তুই চাইলে আমরা দেরিটাকে একটা চরিত্র বানাইনামের মতো। 'দেরি' আমাদের সঙ্গে থাকবে, কিন্তু গল্প আমাদের হবে। আমরা চলব সামনে, 'দেরি' পেছনে পায়ের শব্দ গুনবে।"
আমি হাসলাম। "দেরি যদি নেশাখোর হয়? যদি সে আমাদের হাত টেনে ধরে?"
রিয়াদ বলল, "তাহলে আমরা তাকে চা খাওয়াব, আর বলব'শুন, আমাদের হাতে সময় কম, কিন্তু আমাদের সাহসে মাপ নেই।'"
আমি অনুভব করলাম, বুকের কোথাও সত্যি সত্যি একটু আলগা হলো। গিঁটটা যেন নিজে থেকেই ধীরে ধীরে নরম হলো, হালকা হয়ে এল। ভেতরে যেন এক শিশির ভেজা বৃষ্টি ঝরল।
পরদিন: সকাল না হয়েও একটু সকাল
ভোরে ঘুম ভাঙতেই দেখি রোদ উঠেছে। বারান্দার কংক্রিটে ছোট ছোট সোনালি খণ্ড খেলা করছে। আমি কফি ঢালতে ঢালতে খেয়াল করলাম, গতরাতে আমরা যেভাবে কথা থামিয়েছিলামসেটা যেন গান থামানো নয়, নিশ্বাস টানা। একটা নতুন সুরের প্রস্তুতি।
রিয়াদ সোফায় আধশোয়া, চোখে ঘুমের উপকূল। আমি এসে বললাম, "চা না কফি?"
সে বলল, "তোর যা। কিন্তু আজ একটু চিনি বাড়িয়ে দিস।"
আমি হাসলাম। চিনি বাড়ালাম। দুজনের জন্য। তারপর বললাম, "আমরা কি একটা নিয়ম বানাব?"
রিয়াদ চোখ মেলে"কী নিয়ম?"
আমি বললাম, "যখনই 'শেষ মেসেজ' পাঠাবযখন মনে হবে সবকিছুর সমাপ্তিতখন তিন মিনিট অপেক্ষা করব। ওই তিন মিনিটে আমরা শুধু শ্বাস নেব, বারান্দায় দাঁড়াব, হাত ধোব। তারপর দেখবশেষটা শেষই থাকে কি না।"
সে মাথা নেড়ে বলল, "চল, করি।" তার চোখে একটা নতুন অঙ্গীকার।
সেদিন সন্ধ্যায় শিপন আবার আমাদের রাস্তায় এলো। তার বাইকের চাকা এবার নতুন, আগের ভাঙা চাকার কোনো চিহ্ন নেই। সে ফুটপাতে রাখা এক ছাতা দোকানে থামল। বেগুনি রঙের মতই আরেকটা ছাতা পেল না। কিন্তু সে কিনল একটা নীল ছাতাতাতে ছোট ছোট সাদা শঙ্খ আঁকা। বিক্রেতা বলল, "ভাই, ডিসকাউন্ট।" শিপন হাসল। কাগজের এক কোনায় লিখল"মেয়ে, তুই আকাশে শঙ্খ বাজাস, আব্বু আসছে।" তার মেয়ের জন্য এই সামান্য উপহার।
তার পাশ দিয়ে রিকশা গেলরিবন বাতাসে উড়ে। রিকশাওয়ালা বলল, "বৃষ্টি থামল, ট্রিং… জীবনও।"
শিপন মাথা তুলে দেখল, এক ফ্ল্যাটের বারান্দায় দুইটা ছায়াএকটি নারী, একটি পুরুষবসে আছে পাশাপাশি। তাদের সামনে দুটো কাপ। বৃষ্টি নেই, তবু ভেজা গন্ধ বাতাসে। শিপন ভেবে নিল, "ভালো আছে তারা।" তারপর সে বাইকে চড়ে চলে গেলআর একটা ডেলিভারি, আর একটা জীবনের ছোট্ট টিপ।
আমি আর রিয়াদ একটা দেয়ালে একটা ক্যালেন্ডার টাঙালামছবি নেই, শুধু দিনের নাম। আমরা সেখানে ছোট ছোট দাগ দিই। যেদিন আমরা ভয় পেলেও কথা বলেছিমার্ক। যেদিন আমরা রাগ করে নীরব থাকিনিমার্ক। যেদিন আমরা দেরিকে চা খাইয়েছিমার্ক। প্রতিটি ছোট ছোট অর্জন যেন এক নতুন মাইলফলক।
রাতে আমি একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি ফোনে আমার সেই সাতটা শব্দের বার্তাটা খুলে দেখলাম"আমার দিকে ফিরে তাকিও না… বেশি দেরি।" আমি তাতে ছোট্ট একটা নীল স্টার দিলামআর্কাইভে ঢুকিয়ে রাখলাম।
শব্দগুলোই সাক্ষী থাকবেযে আমরা একদিন শেষ লিখেছিলাম, কিন্তু তারপর তিন মিনিট শ্বাস নিয়ে দেখেছিলামশেষটা শেষ নয়।
রিয়াদ এসে কাঁধে হালকা হাত রাখল। "ভয়?"
আমি বললাম, "হালকা।"
সে বলল, "ভয়ের জন্য একটা কম্বল আছে। নামআমরা।"
ডিসেম্বরের ধুলো, জানুয়ারির ঠাণ্ডা, বৈশাখের ঝড়সব আমাদের পায়ের তলা দিয়ে যাবে। আমরা মাঝে মাঝে থামব। কোনোদিন ঝগড়া করবকেন করব না? কোনোদিন দরজা বন্ধ থাকবেকেন থাকবে না? কোনোদিন আমি আবার লিখে ফেলব"ফিরে তাকিও না"কারণ ভেতরের কেউ কাঁদবে। কিন্তু আমরা নিশ্চয়ই শিখে ফেলেছিতিন মিনিটের ঠিক পরেই দরজায় নরম ধাক্কা দেওয়া যায়, দুই কাপ কষামিষ্টির চা বানানো যায়, কথা না বলেও পাশাপাশি বসে থাকা যায়।
সেই বসে থাকার মধ্যে আঙুলগুলো ধীরে ধীরে কাছাকাছি আসেধরা না ধরার মধ্যকার দূরত্ব কমতে থাকে। আমরা জানিমানুষরা এমনই। আমরাই তো শহরের রোডক্রসিং, আমরাই ফুটপাতের ছোট দোকান, আমরাই বৃষ্টিতে ভেজা কংক্রিট। আমরা একেকজনের গল্পে অন্যজনের মতোই কমা, সেমিকোলন। ফাইনাল ফুলস্টপ খুব কমই আসেবুঝে গেছে?
কখনো কখনো "শেষ" শব্দটা দরজা নয়, জানালার পর্দা। এটা কেবল দৃশ্য বদলায়, পথ আটকায় না।
দেরি আমাদের শত্রু নয়; সে কেবল ধীর পাঠক। আমাদের গল্পটা সে মন দিয়ে পড়তে চায়।
বৃষ্টি যতটা ভেজায়, ততটাই শুকোয়ও, যদি কেউ ছাতা তুলে ধরেকারও দিকে। সহানুভূতিই সবচেয়ে বড় ছাতা।
"ফিরে তাকিও না" বলার সাহস যেমন থাকে, "ফিরে এসো" বলার সাহসও তেমনি দরকার। দুটোই শক্তির ভিন্ন রূপ।
সেদিন, সেই বারান্দার কংক্রিটে, "সেন্ড" চাপার ঠিক তিন মিনিট পর আমি দরজা খুলেছিলাম। আসলে আমি নিজের ভিতরের দরজাই খুলে দিয়েছিলাম। রিয়াদ বা আমিকেউই 'শেষ' চায়নি; আমরা শুধু একটা হালকা থামা চেয়েছিলাম, যেখানে শ্বাস নিয়ে জেনে নেওয়া যায়কতজন আমরা, কতখানি আমি।
এখন, যখন শহর ঘুমিয়ে যাচ্ছে, আমি টেবিলের উপর একটা ছোট নোট রেখে দিই, রিয়াদের জন্য:
"যদি কখনো আবার 'শেষ' লিখি, তাহলেও তুই তিন মিনিট অপেক্ষা করিস। প্রথম মিনিটে চা বসাবি। দ্বিতীয় মিনিটে জানালা খুলবি। তৃতীয় মিনিটে দরজায় নক করবি। তারপর দেখিসশেষটা কোথায় পালায়।"
রিয়াদও একদিন আমার বইয়ের ভেতর একটা ছোট কাগজ ঢুকিয়ে দিল:
"তিন মিনিট খুব কম, তবু সেটাই যথেষ্টকারণ সেই তিন মিনিটেই আমরা ফিরে তাকাতে শিখেছি। ভয়কে 'টিস্টল' করিয়েছি, ভালোবাসাকে 'হ্যান্ডেল' ধরাতে বলেছি, আর দেরিকে বলেছিচল, শেষের দিকে দৌড় নয়, হাঁটা।"
বৃষ্টিহীন এক বিকেলে আমরা ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আকাশ পরিষ্কার, তবু নীচে শহর তার নিজের মতো নোংরা-সুন্দর। দূরে কোথাও একটা ক্লাসিক গিটার বাজছে, তার সুর বাতাসে ভেসে আসছে। আমি রিয়াদের দিকে তাকালাম। ও বলল, "কি?"
আমি বললাম, "কিছু না। শুধু মনে হচ্ছে, শেষ মেসেজটা পাঠানোর তিন মিনিট পর যে দরজা খুলেছিলাম, সেটা আসলে এখানেই এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে সেটাই খুলছি, জীবনের প্রতিটি নতুন মুহূর্তে।"
রিয়াদ হেসে বলল, "আর যদি কোনোদিন আটকে যায়?"
আমি বললাম, "তখন তিনটা শব্দ'আমি আছি, তুই?'পাঠাব। তিন মিনিট অপেক্ষা করব। তারপর হাসব। তারপর খুলে দেব।"
শহর তখন আমাদের দিকে তাকায়নি। আমরা আর শহরদুটো আলাদা সত্তা, তবু এক সুতোয় বাঁধা। সুতোটা একেকদিন শিথিল, একেকদিন টানটান। কে জানে, কোনদিন আবার আমি ভয় পেয়ে যাব, কোনদিন আবার ও হারিয়ে যাবে নিজের গুটিয়ে রাখা নোটের ভেতর। তবু এইটুকু জানিযে "শেষ" আমরা লিখি, সেটা আর আমাদের শেষ নয়। আমরা ততদিন বেঁচে থাকব, যতদিন তিন মিনিটে আমরা শ্বাস নিতে পারব, আর একে অপরের দিকে ফিরে তাকাতে পারব।
আর যদি কোনোদিন সত্যিই শেষ এসে যায়যে শেষ থেকে ফিরে তাকানো যায় না তবু আমরা শেষ বার্তায় লিখে রাখব:
"তুই জানিস তো, আমরা শেষ পর্যন্তও তিন মিনিটের আশ্রয় খুঁজেছিলাম। সেখানে আমরা কষা-মিষ্টি চা রেখেছিলাম, একটা বেগুনি ছাতা রেখেছিলাম, আর একটা কাগজে লিখেছিলাম'হারিয়ে যেতে চাই না।'"
এটাএই কথাগুলোহয়তো কখনো পাঠানো হবে না। হয়তো আলমারির ভেতরে অন্য কোনো চিঠির পাশে টিকে থাকবেকালি একটু মুছে, অক্ষরের গায়ে সময়ের আঁশটে ধুলো জমে। তবু জানা থাকবেযে দিন, যে মিনিট, যে সেকেন্ডএকটা মানুষ "সেন্ড" চাপার পর তিন মিনিট অপেক্ষা করে দরজা খুলেছিল, আর আরেকটা মানুষ বৃষ্টি থেকে ভেজা ছাতা ভাঁজ করে ভিতরে ঢুকেছিল।
তারপর তারা দু'জনএ শহরের কোটি মানুষের মতোপৃথিবীর সবচেয়ে সাধারণ কাজটি করেছিল:
পাশাপাশি বসে নিঃশব্দে চা খেয়েছিল।
আর খালি চোখে দেখেছিলশেষটা কেমন করে নিত্যদিনের ভেতর গলে গিয়ে নতুন শুরু হয়ে ওঠে।
আমাদের জীবনে কত সিদ্ধান্ত, কত সম্পর্ক, কত অনুভূতি সবই কি না প্রায়শই নির্ধারিত হয় কয়েকটি মুহূর্তে, কয়েকটি শব্দে। “শেষ” বলা যতটা সহজ, তার পরে দরজায় নক দেওয়ার সাহস দেখানো ততটাই কঠিন। অথচ হয়তো সেই তিন মিনিটের অপেক্ষাই বদলে দিতে পারে সমাপ্তির রঙ, ঠান্ডা বারান্দায় এনে দিতে পারে কষা-মিষ্টি চায়ের উষ্ণতা।
আজকের এই গল্পে আমরা দেখলাম সময় শুধু ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা নয়; সময় হল সেই সাহস, যা ভয়কে ছাড়িয়ে বলে, “আমি আছি”। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি প্রস্তুত সেই তিন মিনিটকে সুযোগ দেওয়ার জন্য? আমরা কি ভিড়ের শহরেও কারও দরজায় দাঁড়িয়ে বলতে পারি, “ফিরে এসো”?
প্রিয় পাঠক, আপনার জীবনের কোন দরজাটি হয়তো কেবল তিন মিনিটের অপেক্ষা চায় আপনি কি সেই সময়টুকু দেবেন, নাকি চিরদিনের জন্য বন্ধ হতে দেবেন?
আবেগঘন গল্প, বাংলা ছোটগল্প, সম্পর্ক, শহুরে জীবন, অপেক্ষা, প্রেম, ভয়, মানবিকতা, বার্তা, ঢাকা, রিয়াদ, নীরা,
🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।
শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com