ভরসার ছুরিকাঘাত

ভরসার ছুরিকাঘাত

“এ ক্ষত শত্রুর নয়, নয় কোনো ঝড়ের আঘাত,
এ হলো চেনা হাতের, ভরসার ছুরিকাঘাত।
যে বুকে রেখেছিলাম আমার পৃথিবীটাকে,
সে বুকেই রক্ত ঝরে আজ চুপচাপ, নীরবে।


তোমাকেই আকাশ ভেবে মেলেছিলাম ডানা,
তোমার দেখানো পথেই ছিল আমার সীমানা।
তোমার চোখে নির্ভুল পৃথিবীটাকে দেখে,
অন্ধ বিশ্বাসে রেখেছিলাম হাত, হাতে রেখে।
ভাবিনি সে হাতেই লুকোনো ছিল এত ছলনা,
আমার সরলতার ছিলো কি এটাই পাওনা?
এ ক্ষত শত্রুর নয়, নয় কোনো ঝড়ের আঘাত,
এ হলো চেনা হাতের, ভরসার ছুরিকাঘাত।

কখন যে হাসির আড়ালে ধারালো হলো ছায়া,
বুঝিনি তো, সবই ছিল তোমার সাজানো মায়া।
একটা কথাও হলো না, হলো না কোনো অভিযোগ,
শব্দহীন সে আঘাতেই ভাঙলো সকল প্রতিরোধ।
কেন এমন হলো? মেলেনি আজও সে প্রশ্নের বোধ।

এখন চারদিকে কেবলই শূন্যতার দীর্ঘশ্বাস,
নিজের ছায়াকেও করতে পারি না আর বিশ্বাস।
যেখানে গড়েছিলাম স্বপ্নের এক রঙিন ঘর,
সেখানেই আজ দেখি অবিশ্বাসের ধূসর প্রান্তর।
এই ক্ষত শুকোবে না, এ যে আজীবনের দাগ,
আমার ভেতরটা জুড়ে শুধু তোমারই অনুরাগ... 
ছিলো, আর এখন আছে শুধু বিষাদ।

এ ক্ষত শত্রুর নয়, নয় কোনো ঝড়ের আঘাত,
এ হলো চেনা হাতের, ভরসার ছুরিকাঘাত।
যে বুকে রেখেছিলাম আমার পৃথিবীটাকে,
সে বুকেই রক্ত ঝরে আজ चुपচাপ, নীরবে।”

বিশ্বাসঘাতকতা মানুষকে ভেঙে দেয় ভেতর থেকে। এই গল্প সেই একজন মানুষের, যিনি তিন বছর আগে জীবনে এমন একজনকে পেয়েছিলেন, যাকে মনে হয়েছিল—এটাই নিজের মতো কেউ। অফিসে বন্ধুত্ব, নির্ভরতা, আর শেয়ারিং থেকে সম্পর্কটা গভীর হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সাথে মুখোশ খুলে যায়। প্রমোশন আটকে গেলে ছড়ায় গুজব, আর জানা যায়—সবচেয়ে কাছের মানুষটাই ছিল তার পেছনে। এই বিশ্বাসঘাতকতা শুধু সম্পর্ক ভাঙেনি, ভেঙে দিয়েছে বিশ্বাস। কারণ মানুষই আজ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র—যার হাসিমুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে স্বার্থের ছুরি। চেনা মানুষের অচেনা রূপ, মুখোশ আর ছলনার এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সতর্ক না থাকলে নিজের ভেতরের জায়গাগুলোই কারও কাছে অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। যারা “ভাই” বলে ডাকে, তারাই পিছনে ছুরি চালাতে পারে—এটাই আজকের বাস্তবতা। এমন বাস্তব অভিজ্ঞতা জানিয়ে দেয়, কেন মানুষই মানুষের সবচেয়ে বড় ভয়।

তিন বছর আগে, আমার জীবনে এমন একজন মানুষ এসেছিল, যাকে দেখে মনে হয়েছিল — "এই বুঝি নিজের মতো কাউকে পেলাম!"
বন্ধুত্বটা শুরু হয়েছিল একেবারে সাধারণভাবে — অফিসের কাজের সূত্রে পরিচয়, তারপর ধীরে ধীরে আড্ডা, কথোপকথন, শেয়ারিং...
একসময় ও এমন জায়গা দখল করে নেয়, যেটা পরিবার থেকেও বেশি কাছের মনে হত।
ওর সাথে সবকিছু শেয়ার করতাম — আনন্দ, দুঃখ, ভয়, স্বপ্ন... এমনকি নিজের সব দুর্বলতাও।
ও বলত, "তুই যত খারাপ হ, আমি আছি তো।"
আমি বিশ্বাস করেছিলাম।
কিন্তু ধীরে ধীরে বদলটা আমি টের পেলাম না।
ওর হাসিমুখের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক নির্মম স্বার্থপরতা।
যেদিন আমার প্রমোশন আটকে গেল, সেদিন অফিসে গুজব ছড়াল যে আমি নাকি অযোগ্য।
কিছুদিন পর জানতে পারলাম — সেই গুজবের উৎস আমার ‘সবচেয়ে কাছের মানুষ’টা।
সে চেয়েছিল আমার জায়গায় বসতে।
আর তার জন্য সে এমন কিছু কথাও বানিয়ে বলেছে, যা আমি কল্পনাও করিনি।
ভেঙে পড়েছিলাম।
যে মানুষটাকে জীবনের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় ভেবেছিলাম, সেই মানুষটাই ছুরি বসিয়েছে আমার পিঠে।
তখনই উপলব্ধি করলাম —
মানুষই আজ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর!
কারণ মানুষ রূপ বদলাতে পারে, মুখে হাসি নিয়ে বুকে ছুরি চালাতে পারে।
জানোয়ারের Fangs বোঝা যায়, কিন্তু মানুষের মুখে যে মুখোশ, তা বোঝা অসম্ভব।
আমি আজও বিশ্বাস করি না, যে আমাকে “ভাই” বলে ডেকেছিল, সে আমাকেই এত সহজে শেষ করে দিতে পারে।
কিন্তু বাস্তবতা এমনই — মানুষ হলে মুখোশধারী হতেই হয়, আর যখন দরকার ফুরোয়, তখনই বদলে যায় পরিচয়, সম্পর্ক, ভালোবাসা।
আজ তাই কাউকে বিশ্বাস করতে ভয় পাই।
ভয় পাই, আবারও কোনো মুখোশধারী ‘আপন’ হয়ে এসে আঘাত করবে না তো?
মানুষের সবচেয়ে বড় ভয় আজ মানুষই — কারণ এরা নিজেদের স্বার্থে যেকোনো রূপ নিতে পারে।


#মানুষ_নাকি_মুখোশ #বিশ্বাসভঙ্গ #বাস্তবগল্প #বাঙলাকাহিনি #আঘাত #রূপবদলেরনাটক

📌 পাঠকদের প্রতি আন্তরিক অনুরোধ

এই লেখা কল্পকথা ৩৬০-এর একটি অনুভবময়, পাঠকবান্ধব উপস্থাপন। বিষয়বস্তু ভিন্ন ভিন্ন হলেও, প্রতিটি লেখায় আমরা পাঠকের সঙ্গে ভাবনার বন্ধন গড়তে চাই। আপনার মতামত, পরামর্শ ও সংশোধন আমাদের কাজকে আরও সমৃদ্ধ করবে। অনিচ্ছাকৃত কোনো ত্রুটি বা অসঙ্গতি থেকে থাকলে, দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✍️ আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রেরণা — আপনার সংক্ষেপণ, পরামর্শ বা মতামত কমেন্টে জানালে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব। এতে আমাদের কাজ আরও নির্ভুল, মানবিক ও পাঠকবান্ধব হবে।

🤝 আপনার সহযোগিতা আমাদের চলার পথ — পাঠকই লেখার প্রাণ। ভালো লেগে থাকলে জানাতে ভুলবেন না, ত্রুটি থাকলে তা ধরিয়ে দিন। আমরা সবসময় শেখার চেষ্টা করি।

❤️ কল্পকথা ৩৬০ – পাঠকের ভালোবাসায় পথ চলে

Kalpakatha 360

কল্পকথা ৩৬০* আপনার কল্পনার জগৎ এখন বাস্তবতার ছোঁয়ায়! Kalpakatha360 একটি সাহিত্যভিত্তিক ব্লগ, যেখানে আপনি পাবেন চিন্তা জাগানো গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, এবং বাস্তব জীবনের ছায়াচিত্র। এখানে মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো ভাষা খুঁজে পায়, আর পাঠকের মনে তৈরি করে নতুন ভাবনার বিস্তার। আমাদের উদ্দেশ্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চাকে সহজ, সার্বজনীন ও আগ্রহোদ্দীপক করে তোলা। আপনি যদি সাহিত্যপ্রেমী হন—তাহলে এই ব্লগ আপনার প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে। *বিষয়সমূহ:* �� কল্পকাহিনি �� বাস্তবধর্মী গল্প �� কবিতা �� চিন্তার খোরাক �� সময়োপযোগী লেখা �� সাহিত্য বিশ্লেষণ আমাদের সাথেই থাকুন—চলুন কল্পনার জগতে হারিয়ে যাই...

Post a Comment

🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।

শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com

Previous Post Next Post