"একটা পাসপোর্ট, একটুখানি সাহস, আর ইউরোপ-আমেরিকায় সহ উন্নত দেশে কাজের একটা সুযোগ পাবো — আজকের বাংলাদেশের হাজারো তরুণ-তরুণীর স্বপ্নের মানচিত্র এভাবেই আঁকা।"
ড. ইউনুস, বাংলাদেশি অভিবাসন, বিদেশে চাকরি, ইউরোপে কাজ, আমেরিকায় কর্মসংস্থান, স্কিল্ড ভিসা, প্রবাসে যাওয়ার সুযোগ, অভিবাসন বাস্তবতা ২০২৫, ব্লু-কার্ড জার্মানি, এক্সপ্রেস এন্ট্রি কানাডা, বাংলাদেশি প্রবাসীদের সমস্যা, নিরাপদ অভিবাসন,
প্রশ্ন হলো, সেই স্বপ্ন কি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে?বিশ্ব রাজনীতির পালাবদলে যখন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিলেন, তখন বহু বাংলাদেশি বিশ্বাস করতে শুরু করল—হয়তো এবার ইউরোপ কিংবা আমেরিকার দরজা একটু বেশিই খুলবে আমাদের জন্য।
কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই তেমন?
এই নতুন অধ্যায় কি অভিবাসনের পথ আরও উজ্জ্বল করেছে, না কি পুরনো জটিলতার নতুন সংস্করণ তৈরি হয়েছে?
চলুন, বিশ্লেষণ করি—বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপ ও আমেরিকার শ্রমবাজারে সুযোগ, সীমাবদ্ধতা আর সম্ভাবনার আসল চিত্র।
📌 এই লেখায় আপনি জানবেন:
👉 ইউরোপ ও আমেরিকায় বাংলাদেশিদের জন্য বর্তমান কর্মসংস্থানের বাস্তব চিত্র
👉 কোন দেশে স্কিল্ড শ্রমিকদের জন্য চাহিদা বাড়ছে
👉 ড. ইউনুসের নেতৃত্ব আন্তর্জাতিকভাবে কতটা প্রভাব ফেলছে
আর কীভাবে আপনি নিজেকে প্রস্তুত করবেন এই নতুন অভিবাসন বাস্তবতায় টিকে থাকার জন্য
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি – ইউরোপ ও আমেরিকায় কর্মসংস্থানে তার প্রভাব কতটা বাস্তব?
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশজুড়ে এক ধরনের আশাবাদের বাতাস বইতে শুরু করে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ভেবেছিল, তার আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা বাংলাদেশের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থানের নতুন দরজা খুলে দিতে পারে।
তার প্রতি মানুষের প্রত্যাশা ছিল – হয়তো ইউরোপের শ্রমবাজারে প্রবেশ সহজ হবে, কিংবা আমেরিকায় বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে সময়ের পরীক্ষায় প্রশ্ন জাগে, এই প্রত্যাশাগুলো কি বাস্তবে রূপ নিয়েছে? নাকি ব্যবস্থাগত জটিলতা এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি আগের মতোই রয়ে গেছে?
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্ব কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নত করতে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু অভিবাসন সহজতর করতে হলে শুধুমাত্র কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, প্রয়োজন প্রশিক্ষণ, স্কিল উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন, এবং আইনি সহায়তা।
বাংলাদেশ সরকার নতুন করে "মাইগ্রেশন সাপোর্ট সেল" চালুর কথা ভাবছে, যেখানে বিদেশ যেতে আগ্রহীদের জন্য গাইডলাইন ও প্রস্তুতি সহযোগিতা দেওয়া হবে — এটি কার্যকর হলে বাস্তবে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
🌍 প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি: এক সুযোগের জানালা?
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুদিন ধরেই পরিচিত একজন মানবতাবাদী নেতা। মাইক্রোক্রেডিট ধারণার জন্য তার নোবেল পুরস্কার এবং সামাজিক ব্যবসা মডেল পশ্চিমা দুনিয়ায় অত্যন্ত সমাদৃত। ফলে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে।
🔹 ফলাফল:
ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের অভিবাসী নীতির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে শুরু করেছে।
প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং ন্যায্য মজুরির বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অগ্রগতি।
🛂 ভিসা ও অভিবাসন প্রক্রিয়া: এখনো কি সহজ?
যদিও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হয়েছে, বাস্তব অভিবাসনপ্রক্রিয়া এখনো অনেকাংশে আগের মতোই জটিল।
ইউরোপের অনেক দেশেই স্কিলড ওয়ার্কারদের চাহিদা বাড়লেও, ভাষাগত দক্ষতা, প্রাসঙ্গিক সনদ, ও অভিজ্ঞতা এখনো প্রধান বাধা।
আমেরিকার অভিবাসন নীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি; যদিও H1B বা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে।
জার্মানি:
বাংলাদেশিদের জন্য কাজের সুযোগ ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে স্কিলড শ্রমিকদের জন্য ব্লু-কার্ড প্রক্রিয়া আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রিশিয়ান, নার্সিং ইত্যাদি পেশায় চাহিদা বেশি।
কানাডা:
সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল। "এক্সপ্রেস এন্ট্রি" এবং "প্রভিন্সিয়াল নমিনেশন প্রোগ্রাম (PNP)" আগের মতোই কার্যকরভাবে চলমান। IELTS স্কোর ভালো হলে এবং অভিজ্ঞতা থাকলে কানাডায় যাওয়ার সম্ভাবনা এখনো যথেষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্র:
এখানে সুযোগ কিছুটা সীমিত। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, কিন্তু চাকরির ভিসা (বিশেষ করে H1B) পাওয়ায় কঠোরতা আগের মতোই রয়ে গেছে। প্রযুক্তি খাতে প্রতিযোগিতা বেশি।
ইতালি:
বাংলাদেশিদের জন্য সুযোগ বাড়ছে। বিশেষ করে কৃষি ও মৌসুমি খাতে শ্রমিকের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ইতালি সরকার প্রতিবছর নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিককে ভিসা দেয়ার যে কোটা রাখে, তাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমলে অভিবাসন প্রত্যাসীদের স্বপ্ন: ইউরোপ–আমেরিকায় চাকরি, আশা না বাস্তবতা?
বাংলাদেশের তরুণ–কর্মসংস্থানপ্রত্যাশীদের মনে নতুন আশার উজ্জল আলো জ্বলেছিল যখন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণ করেন। অনেকে ভাবতে শুরু করেছিলেন, ‘প্রফেসর ড. ইউনুস এর নেতৃত্বে তো আমাদের দেশ বদলে যাবে, বিদেশে সহজভাবে চাকরি মিলবে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন নানা গুজব ছড়িয়েছিল: ইউরোপ–আমেরিকা এবার বাংলাদেশিদের জন্য দরজা খুলে দেবে, বিদেশি শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ দেবে, আর যুবসমাজ সহজে ভিসা পাবে। নানা চাঞ্চল্যকর ভিডিও–বক্তব্য, জল্পনাপত্র তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সেই স্বপ্ন অনেকটাই অসম্ভবের সঙ্গেই মিশে গিয়েছে, হতাশার রূপ নিয়েছে। আকাশচুম্বী প্রত্যাশার বদলে লোকের মনে কেবল বিভ্রান্তি ও দুঃখ। আসলে এ গুজব কিংবা আশাবাদীর পেছনে প্রমাণ কী? বাস্তবপটে কি সত্যিই সুযোগ তৈরি হতে পারে?
বাঙালি অভিবাসীর আশা ও হতাশা
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের হার দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিশ্বব্যাংকের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত দশকে শিক্ষিত বেকারত্ব প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে অগণিত স্নাতক–স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তরুণ দেশীয় চাকরিপ্রতিযোগিতার চাপ সামলাতে পারছেন না। অন্যদিকে, বিদেশ থেকে অধ্যয়ন-চাকরির আশায় চলে যান বহু শিক্ষার্থী। ইউনেস্কো বলছে, ২০০৮ সালের মাত্র ১৬,৮০৯ শিক্ষার্থী থেকে ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২,৮০০! এদের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ইত্যাদি উন্নত দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ খুঁজছে। কিন্তু ডিপ্লোমা নিয়ে ফিরে সবার জন্য পদে-পদে চাকরি নেই, পরিবেশ আর সংস্কার অনুপাতে নয়। শিক্ষিত যুবরা দেশে কাজের সুযোগ না পেয়ে হতাশার অতলে ডুবে যাচ্ছে। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আইয়াজের কথা উল্লেখ করা যায়। এখনও স্নাতক শেষ করতে দু সেমেস্টার বাকি, তবু সে বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য দেশে তিনটি পথ: বিসিএস, ব্যাংক পরীক্ষা বা আইইএলটিএস দিয়ে বিদেশ”। বিসিএসে পদের সংখ্যা তো অতি নগন্য, ব্যাংকেও সুযোগ কম। তাই অনেকের কাছে ভালো বিদেশি চাকরিই সোনার শাম্ভুর স্বপ্ন। কিন্তু বাস্তব কি তা?
ইউনূসের ক্ষমতাগ্রহণের আগে অবস্থা যেমন ছিল, সে তুলনায় কোন বড় পরিবর্তন দেখছেন শিক্ষিত বেকাররা? কর্পোরেট চাকরিতে থাকা এক তরুণ ফয়সল বলেন, “অন্যান্য দেশে নতুন কর্মসংস্কৃতি আসছে, অথচ এখানে প্রতিপাদিত নিয়মই ভুলে যায় নাই। শ্রম আইনেরও যথাযথ প্রয়োগ হয় না। ওখানে তুলনায় বেতন ও সুযোগ সুবিধা অনেক উন্নত”। ফলে তিনি বিবেচনা করেন, বিদেশে গেলে হয়তো সময়মতো তার মেধা-মূল্য পাওয়া যাবে। বাস্তবদৃষ্টিতে, এমন তরুণদের বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়; গবেষক ড. নুসরাত জানান, “অনেকেই দেশে ফেরার ইচ্ছা রাখে না, কারণ তারা উপলব্ধি করে যে দেশে তাদের দক্ষতা কাজে লাগবে না”। অর্থাৎ, চূড়ান্ত সত্য হচ্ছে: দেশে বিকল্প কম থাকায় অনেক তরুণই বিদেশের স্বপ্ন দেখছে, তবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন।
ইউনূসের নেতৃত্বে প্রত্যাশা ও অঙ্গীকার
অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বভারতীর অঙ্গনে ক্ষুধামুক্তি-স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন; পরবর্তীতে গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসায় বিশ্বজয়ী হয়েছিলেন। অতীতের অভিজ্ঞতা দেখলে বিশ্বাস ছিল, তিনি দিলেন যা, রেখেছেন তা। তাই অনেকেই ভাবেছিলেন, তার নেতৃত্বে দেশের অবক্ষয় ঘটানো রাষ্ট্র কাঠামো এবং মেরুদণ্ডহীন অর্থনীতি দ্রুতই সঠিক পথে ফিরবে। খাঁটি বিপ্লবের আবেগে অনেকে কল্পনা করছিলেন, উচ্চশিক্ষিতদের জন্য বিদেশি কর্মসংস্থান সুবিধা আসবে, বিদেশি কোম্পানিগুলি বাংলাদেশকে আকৃষ্ট করবে। অনলাইন-ভাইরাল কথাবার্তায় তো বলা হচ্ছিল, ইউরোপ-আমেরিকা দেশে দূতাবাস পাঠাবে বিশেষ আরজি নিয়ে, দলাদলি চলবে না, হাই-স্কিল ভিসার নিরাপদ চালচলন হবে।
একটি তালপাতার গুজবও ছড়িয়েছিল, ইউরোপের ২৭ দেশ এলে ইউনূসের হাতে আড্ডা দেবে, বাংলাদেশিদের চাকরি বানিয়ে দেবে। এমন ভুয়া পোস্টের পেছনে একটা মন্ত্রনা রয়েছে: জনতা খুব দ্রুত আলোকিত হতে চায়, আর আশা করে যিনি (ইউনূস) এসেছেন, তিনি নিশ্চিত পরিবর্তন করবেন। অবশ্য, ইউনূস নিজেও বেশ কয়েকবার বিদেশ সফরে বাংলাদেশি কর্মশক্তি নিয়ে আলোচনার কথা বলেছেন – উদাহরণস্বরূপ, সিঙ্গাপুর-চীন-জাপানে বলেছিলেন উন্নয়ন-সহযোগিতার জন্য আসছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক যোগসূত্র তৈরি হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাকরির দরজা খুলবে তা নয়।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তার সব উদ্যোগ নিয়ে হয়নি কর্মসংস্থানের চমকপ্রদ ঘোষণা। বরং নিউজে দেখলেন, যুক্তরাষ্ট্র–জাপানের মতো দেশে উন্নয়নসহায়তার চুক্তি বাড়ানো হচ্ছে। যাই হোক, জনমানসে তখন একটা আশাবাদ ছড়িয়েছিল। এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বলতে পারি: দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল অপার, কিন্তু বাস্তবতা গোঁড়া।
ইউরোপে সুযোগ কি সত্যিই বেড়েছে?
পরিসংখ্যান বলছে, এখানে অসফলতা অবারিত। ইউরোপের অনেক দেশে কাজের বাজারে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া বিপরীতমুখী হচ্ছে। ফিচার্ড অনলাইন সংবাদদ্বারা The Business Standard-এ প্রকাশিত রিপোর্ট মতে, ২০২৪ সালে ইউরোপে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ হার ৫২% কমে গেছে। রোমানিয়া, পোল্যান্ড, মাল্টা, ক্রোয়েশিয়া, আলবেনিয়া সহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা। কারণ, পূর্বে কাজ শেষ করে অন্য দেশে চলে যাওয়া ও স্থানীয় না বোঝা সংস্কৃতির কারণে ইউরোপিয়ান নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে এখন আগ্রহী হচ্ছেন না। দূতাবাস-সহায়তাও এই অবস্থা সামলাতে পারেনি; একটি উদাহরণ—ক্রোয়েশিয়ার দেয়া ১২,৪০০টি ওয়ার্ক পারমিটের মধ্যে ৮,০০০ জনই পৌঁছায়নি, বাকি অর্ধেকও এখন অধিকাংশই কাজ করছে না! এই ঘটনা ইউরোপিয়ারা দেখেছেন এবং হুংকার দিয়েছেন, বাংলাদেশি নিয়োগ শর্তশীল হচ্ছে। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, ইউরোপিয়ান চাকরির বাজারে বাংলাদেশের জায়গাই হ্রাস পাবে।
এবার কল্পনা করুন: আপনি ভাবছেন ইউরোপ-বাতাসে খবর আসবে “বাংলাদেশিদের জন্য সময়ের সেরা সুযোগ।” কিন্তু বাস্তবে ইউরোপের নিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না বরং কমছে। কারণে বলা হচ্ছে দক্ষ জনসংখ্যার অভাব ও কঠিন ভিসা নীতি। অর্থাৎ, ইউরোপে বাজার আছে, কিন্তু তা আমাদের পুরোপুরি গ্রহণ করতেও রাজি নয়।
নিয়মিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, অভিবাসীর জন্য ইতালিতে ফের নিয়মিত ভিসার চালু হচ্ছে, পোল্যান্ডের দরকার শ্রমিক, তবু তারা বাংলাদেশিদের ব্যাপারে অতিমাত্রায় সতর্ক। এ ধরনের বাস্তব উপাত্ত থেকে বোঝা যায় যে ইউরোপবাসীদের জনস্বপ্নের বায়না পূরণ করতে বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ কাজ।
জার্মানি ও অন্যান্য দেশে এগিয়ে আসার স্বপ্ন ও বাস্তব
জার্মানির অবস্থা একটু আলাদা। ইউরোপের সবথেকে বড় অর্থনীতিতে বছরে প্রায় ৪ লাখ শ্রমিকের ঘাটতি – বিশেষ করে আইটি, নির্মাণ, স্বাস্থ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে। জার্মানি অভিবাসন নীতি ২০২৪ সালে সহজ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী এবং ট্রেড স্কিল কর্মীদের জন্য পুরস্কারমূলক আইন আনা হয়েছে। তবে এখানে বাংলাদেশিদের জন্য বিশেষ কোনো কোটা বা চুক্তি নেই। বরং জার্মান দফতর জানিয়েছে, আমরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকেও লক্ষ্য করেছি, কিন্তু ভারত–পাকিস্তান–নেপাল-ভুটানের মতো নির্দিষ্ট চুক্তিতে নাম নেই আমাদের তালিকায়। জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, অনুমোদনের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে ইমিগ্রেশন অথরিটি, তবে সবকিছুই শর্তসাপেক্ষ।
গল্পের ভালো দিক: গোথে ইনস্টিটিউটের একটি “প্রি-ইন্টিগ্রেশন ও ট্রানজিশন” প্রোজেক্ট চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য, যেখানে আগ্রহী কেউ জার্মান ভাষার শিক্ষণ এবং কাজের প্রস্তুতি পাবেন। বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ২২ হাজার, যার অনেকেই আবাসিক ওষুধ, খাদ্যতালিকায় কাজ করছেন। তবে অনেকেই ভাষার অভাবে পেশাগত কাজে প্রবেশ করতে পারেন না। তাই জার্মানির পথপাতালে ভাষা দক্ষতা বড় বাধা – যেমন একজন গবেষক বলেন, B2 স্তরের জার্মান জানা না থাকলে নার্স বা কেয়ারগিভিং-এর মতো চাকরি পাওয়া কঠিন।
এরপরও, জার্মানির নতুন আইন (Labor Immigration Act) ঢুকিয়ে দিয়েছে কোটা/নোটিফাইড সিস্টেম– নূন্যতম বেতন মান অনেকটা নামিয়ে এনে ইউরোপীয় ব্লু কার্ড পাওয়া সহজ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, সাধারণ উচ্চশিক্ষিত বাংলাদেশির জন্য ইউরোপের প্রধান চাবিকাঠি হাতের নাগাল হয়ে উঠছে—but হ্যাঁ, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ভাষা বাধ্যতামূলক। সুতরাং, জার্মানির রূপকথা সত্যি হলেও, তারও জন্য প্রস্তুতি দরকার।
অন্যদিকে জাপান দেশের সাথে সাম্প্রতিক সময় সবচেয়ে দৃশ্যমান উন্নয়ন। মে ২০২৫-এ ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, বাংলাদেশি শ্রমশক্তি প্রশিক্ষণের জন্য একটি বিশেষ সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। মনোহরদী টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে ‘ড্রিম স্ট্রিট বিজনেস ট্রেনিং সেন্টার’ নামে একটি নতুন ইউনিট তৈরি হবে, যেখানে জাপানের টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ও স্পেসিফায়ড স্কিল্ড ওয়ার্কার প্রোগ্রাম নিয়ে প্রস্তুতি দেওয়া হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের টোকিও সফরের সময় ঘোষিত উদ্যোগ। অর্থাৎ, বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বিদেশের কাজের পেশাদারিত্ব তৈরিতে, বিশেষ করে জাপানের মতো স্বল্প জনসংখ্যার উচ্চপ্রযুক্তি বাজারে। এই পদক্ষেপগুলির মেয়াদও পাঁচ বছর ধরা হয়েছে, এবং প্রয়োগের বিষয়গুলো নজরদারি করা হবে।
বলতে হয়, ইউরোপ–আমেরিকায় সহজ চাকরি দেয়ার ঘোষণার বদলে বরং বিশেষ দেশে বিশেষ চুক্তি হচ্ছে। জাপান-বান্ধব প্রোগ্রাম, জার্মান কোটা বিপুল নয় – এগুলো শেখার কথা বলে। বিশ্বে বাংলাদেশিদের জন্য চাকরির দরজা খুলতে অনেকগুলো শর্ত পূরণ করতে হবে: উচ্চ দক্ষতা, ভাষা, স্থানীয় অভিজ্ঞতা। গল্পের সংকট: প্রবাদটি সত্য যে ইউরোপে খোলা দরজা, কিন্তু সে দরজায় ঢুকতে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের অনেককেই দেরি ও খরচ বহন করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি
আমেরিকা নিয়ে কথা বলতে গেলে, সরলিকরণ আরও কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের কোনও ফ্রি শ্রমশক্তি প্রোগ্রাম নেই, বরং সেখানকার ভিসা ব্যবস্থা প্রধানত উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ পেশাদারদের জন্য। প্রবাসী বাংলাদেশিরা সাধারণত H-1B (জরীপে স্পন্সরড কাজের ভিসা), এফ-১ (শিক্ষার্থী) বা পারিবারিক গ্রীন কার্ডের পথে যান। H-1B-র ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা অতীব; বিশ্বব্যাপী লটারিতে মাত্র কয়েক শতাংশই সুযোগ পায়। সাধারণ শ্রমিকদের (যেমন নির্মাণ, পরিষেবা) জন্য কোনো বিশেষ ভিসা নেই; Diversity ভিসা বা বিনিয়োগকারীর আইনি পদক্ষেপ ছাড়া উপায় নেই। সংক্ষেপে, আমেরিকা স্বপ্নের দেশ হলেও, এখানে পৌঁছানো কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী প্রায় ২৫ বছর বয়সের পরই চাকরির বাজারে ঢোকেন – তখন হায়, দেখেন বিদেশে সেমিস্টার ফি-র বদলে আয়-ব্যয় ভারসাম্য ভালো। একটি উদাহরণ—একজন হার্ভার্ড বিজনেসের ছাত্র বলেছেন, দেশে থাকলে ভাগ্যমাত্র পেতেন, আর সেখানে পার্টটাইম কাজ করে বছরে $৫০–৬০ হাজার আয় করছেন। তবে তিনি নিজেই জানেন, সেখানে থাকার সুযোগ পেতে কঠিন লটারির মধ্য দিয়ে আসতে হয়েছে।
অতএব, অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাজ ভিসার কথা শুনলেও সাময়িকভাবেই প্রত্যাশা থাকে; প্রকৃতপক্ষে এটি সহজ নয়। এ কারণেই, আমাদের পরবর্তী আলোচনায় পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি-এর গুরুত্ব জোর দিয়ে বলতে চাই।
চলমান দেশের অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র
ইউরোপ–আমেরিকার সুযোগ খুঁজতে গিয়ে দেশের ভিতরে যা হচ্ছে তা ভুলবেন না। ইউনূসের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে কঠোর নীতিমালা নিয়ে এসেছে– ব্যাংক খাতে সংস্কার, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এ ছাড়া বাণিজ্য-বিনিয়োগের অংশীদারিত্বে গুরুত্বারোপ করেছে। এ কারণে অর্থনৈতিক অনুবর্তিতা মিলছে। উদাহরণস্বরূপ, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০.৩৯ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারে উঠে গেছে। মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়েছে ১২% থেকে ৯%-এ। এ সব পরিবর্তন অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতা দিচ্ছে, তবে এই সময়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে এমন তথ্য নেই। সেখানে, জিডিপি বৃদ্ধির ফলে নতুন প্রশিক্ষিত কর্মীও দরকার হবে– যদি তত স্বচ্ছল হতো।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উন্নয়নের উদ্যোগও চলছে: শিক্ষা–প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে, প্রযুক্তি খাত বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার অভাবী ও স্বল্পবিত্তদের স্ব-উদ্যোগে উৎসাহ দিচ্ছে। কিন্তু এসবের ফল প্রকাশ পেতে সময় প্রয়োজন। এই সময়ের মাঝে বিদেশি চাকরির লোভে দেশের ট্যালেন্ট গলিয়ে দেওয়া মানে অন্তত কিছুক্ষণের জন্য জাতীয় উন্নয়নের ঝালাই গুটিয়ে দেওয়া। তাই অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদেশ চেয়ে দেশে উদ্যোক্তা হওয়া ও নতুন উদ্যোগ শুরু করাই শ্রেয়। যেমন সমাজ ব্যবসার দিকেও ইউনূস অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন বলে সবাই জানে।
অবশ্য ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ঔদ্ধত্য নয়; বাস্তব দেখেই বলতে হয়, দেশের জনগণের অনেকেই বেকারত্ব ও নিম্ন বেতনে সংকটাপন্ন। শুধু ভিসা নয়, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও আছে। এক মহিলার কথায় বুঝিয়ে দেয়া যায়: “দেশে নারীদের কাজের পরিবেশ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ, সমমানের কাজ করেও সিজেল ব্রেক পাওয়া কঠিন। তাই বিদেশে নিরাপদ পরিসরে পড়াশোনা-চাকরি অনেক বেশি আকর্ষণীয়”। অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ইত্যাদির জন্যও অনেকের মনের আকাঙ্খা উন্নত বিদেশের দিকে।
তবুও, এই সত্য ভুলে যাওয়া কঠিন: অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান পরিকল্পনা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে দেশ ধাক্কা খাবে। সেকারণেই, শুধুমাত্র বিদেশির সুবিধার জন্য নয়, দেশের নিজের অর্থনীতিকে সক্রিয় রাখতে সরকারের নানা উদ্যোগ চলমান। যেমন জাপান ও বিশ্বব্যাংকের ঋণ, প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগ, ক্ষুদ্রঋণ। প্রবাসীদেরও অবদান চাওয়া হচ্ছে।
পরামর্শ ও পথপ্রদর্শন
তাই আমারা এটুকু স্বীকার করি: সহজে ইউরোপ-আমেরিকায় চাকরি পাওয়ার কোন “দরজা খোলার মন্ত্র” নেই। ভুয়া বিজ্ঞাপন ও সংশয়জনক এজেন্টদের নেশায় ভুগলে দ্বারস্থ হবে না। বিপরীতে, কিছু বাস্তবধর্মী প্রস্তুতি নিতে হবে:
নিজের দক্ষতা বাড়ান: ইংরেজি ও প্রয়োজনীয় ভাষায় (উদাহরণস্বরূপ, জার্মান বা জাপানি) পারদর্শী হোন। আন্তর্জাতিক চাকরিতে যা দরকার, সেই ট্রেড বা প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ নিন।
বৈধ পথে আবেদন করুন: বাংলাদেশ থেকে বিদেশি চাকরির ভিসার জন্য নিয়মিত কর্মশালা ও এজেন্সির তালিকা থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান ভর্তি নিন অথবা সরাসরি দূতাবাস-নিয়ন্ত্রণাধীন BMET-র মাধ্যমে আবেদন করুন। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নেওয়া ভুলে যান।
উদ্যোক্তা হোন: সব কিছুর প্রতি নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখুন। যদি বিদেশে না যেতে পারেন, দেশেই ক্যারিয়ার গড়ে তুলুন। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং/অনলাইন কাজের সুযোগ বাড়ছে – এই দিকেও নজর দিন।
দেশভক্তি উদ্দীপনায় আগ্রহ: প্রবাসে অবস্থান সত্ত্বেও, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখুন। দেশে বিনিয়োগ করুন, দক্ষতা ভাগ করে দিন।
বিকল্প পথ খুঁজুন: ইউরোপের বদলে জাপান বা কোরিয়া’র প্রোগ্রাম আছে। কানাডার ইমিগ্রেশন চেষ্টা করতে পারেন। তবে এসব ক্ষেত্রেও বিপুল প্রস্তুতি ও সময় লাগবে।
তাছাড়া, বিশ্ব পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। কেউ অবাধ মার্কিন বা ইউরোপ ভিসার আশ্বাস দিলে সঠিক যাচাই করুন। মনে রাখবেন, ভাল জীবন মানের জন্য শুধু ভিসা-ই নয়, মর্যাদাবোধের চাকরি প্রয়োজন, এবং সেটা নিজের সদিচ্ছা, পরিশ্রম ও পরিকল্পনায় অনেকটাই নিহিত।
অল্প গল্পে বোঝা যাক। মেহেরপুরের মটকা পাইকার আলমগীরের ছেলে জয়। ঢাকায় কলেজে পড়ে, গ্যার্মেন্টসে সাময়িক কাজ করতো। ইউনূস ক্ষমতা নেয়ার পর শুনেছিল, “আইটি বা প্রযুক্তিতে পড়লে আমেরিকায় চাকরি মিলবে।” ছেলে যায় ঢাকায় কোডিং কোর্স করে। শেষে সে উদ্যোক্তা হয়ে একটা ওয়েবসাইট বানাতে চায়। কিন্তু বিদেশ ভিসার ডালপালা জটিল দেখলে হতাশ হয়। মেয়ের মতো প্রবাসী নাতি দেখার স্বপ্নও ছিল, এখন বুঝতে পারে চাকরি ছাড়া সংসার কষ্টকর। সে এখন নিজে প্ল্যান করছে, দেশে কোডিং শেখাবে বেকারদের, যাতে দেশের চাকরি বাড়ে। এমন অনেক কাল্পনিক গল্প আমাদের চারপাশে পাওয়া যাবে, যা আমাদের শিক্ষা দেয়: প্রত্যাশার অটলতা নয়, বাস্তবিক পরিশ্রমই শক্তি।
প্রবাসে সহজ চাকরি নেই: ইউরোপ ও আমেরিকা সরল পথে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা-খোলার কথা বললেও বাস্তবে ভিসা সীমিত ও দক্ষতা-নির্ভর। শতপ্রতিযোগিতার কারণে সরকারের কোনো দখলে না পেয়ে স্বপ্ন হারানোর সম্ভাবনা আছে।
একজন নেতা শুধু সুযোগ তৈরি করে: প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস হচ্ছেন বিশ্বস্ত নেতা, কিন্তু বিদেশি চাকরির গ্যাজেট নয়। তাঁর প্রশাসনে বিদেশি বিনিয়োগ–প্রশিক্ষণ উদ্যোগ শুরুর চেষ্টার কিছু স্ফূর্তি আছে , কিন্তু সরাসরি সবাইকে বিদেশ পাঠানোর গ্যারান্টি নয়।
বাস্তব উদ্যোগ আছে, প্রস্তুতি দরকার: জাপানের সঙ্গে প্রশিক্ষণ চুক্তি, জার্মানির স্কিল সিমুলেশন– এসব ভবিষ্যতের পথনির্দেশ। শিখতে হবে ভাষা ও দক্ষতা, এজেন্ট-মিথ্যার বড়শি নয়।
দেশের অর্থনীতির গুরুত্ব: প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশে সমস্যাগুলো অতিক্রমে সাহায্য করেছে। দেশেই অবকাঠামো গড়ার কাজ চলছে। দেশের অর্থনীতি শুদ্ধ হলে নতুন চাকরি বাড়বে, সেজন্যই দেশে অবদান রাখতে অভিবাসীদের আহ্বান।
বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি: প্রবাসে গেলে জীবন মান বাড়বে বলেই অনেকের আগ্রহ, কিন্তু বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষিতদের প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। তাই আমাদের পড়াশোনা ও দক্ষতা উন্নয়ন, নিজস্ব উদ্যোগ গ্রহণ, এবং সতর্কভাবে সুযোগ মূল্যায়ন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রবাসের স্বপ্ন দেখতেই হবে যদি সত্যিই প্রয়োজন মনে হয়, কিন্তু অযথা ভুল ধারনা এড়িয়ে চলতে হবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আশার আলো এসেছে, কিন্তু চুড়ান্ত পথ দেখাতে বা আর্থিক জয়গান করতে নয় – বরং দেশকে ধারাবাহিক উন্নয়নের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কথা। দেশের মানুষ ও প্রবাসীরা কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলে আর্থ-সামাজিক সুফল বাড়বে। তাই আশা থাকুক, কিন্তু ধরে রাখুন বাস্তবতার দিকটি। প্রবাস না, নিজেদের দেশটিই আমাদের পরবর্তী গন্তব্য হওয়া উচিত, যেখানে সবাই মিলে নতুন স্বপ্ন গড়তে পারি।
প্রফেসর ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কিছুটা ইতিবাচকভাবে পশ্চিমা দেশগুলোতে উপস্থাপিত হচ্ছে, কিন্তু অভিবাসন বাস্তবতা এখনো অনেক চ্যালেঞ্জিং। যাদের প্রস্তুতি, স্কিল এবং কৌশল সঠিক — তাদের জন্য সুযোগের দরজা খানিকটা বেশি খোলা।
🕊️ একটি বিনীত আহ্বান – প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি
প্রিয় প্রফেসর ড. ইউনুস,
এমন বাস্তব, আইনি ও নিরাপদ অভিবাসন পথ তৈরি করুন, যাতে আর কোনো তরুণ নদী বা সমুদ্রপথে ইউরোপ যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে জীবনের বাজি না ধরে।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে যেন আর কেউ লিবিয়ার মরুভূমি বা ভূমধ্যসাগরের বুকে নিথর হয়ে না পড়ে।
আমরা আশাবাদী—আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশি শ্রমিকের মর্যাদা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও আরও সুদৃঢ় হবে।
আপনার কাছে এটুকুই চাওয়া—আমাদের স্বপ্নগুলোর দিকে একটুখানি নজর দিন।
বিঃদ্রঃ এই লেখাটি তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ এবং সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার চেষ্টা মাত্র। কোনো অসঙ্গতি, ভুল তথ্য বা উপস্থাপনার ঘাটতি থাকলে তা অনিচ্ছাকৃত। ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন, এবং আপনার মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে আমাদেরকে আরও ভালো লেখার অনুপ্রেরণা দিন।
উৎস: বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত এবং প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে উপস্থাপিত।
📌 পাঠকদের প্রতি আন্তরিক অনুরোধ
এই লেখা কল্পকথা ৩৬০-এর একটি অনুভবময়, পাঠকবান্ধব উপস্থাপন। বিষয়বস্তু ভিন্ন ভিন্ন হলেও, প্রতিটি লেখায় আমরা পাঠকের সঙ্গে ভাবনার বন্ধন গড়তে চাই। আপনার মতামত, পরামর্শ ও সংশোধন আমাদের কাজকে আরও সমৃদ্ধ করবে। অনিচ্ছাকৃত কোনো ত্রুটি বা অসঙ্গতি থেকে থাকলে, দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✍️ আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রেরণা — আপনার সংক্ষেপণ, পরামর্শ বা মতামত কমেন্টে জানালে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব। এতে আমাদের কাজ আরও নির্ভুল, মানবিক ও পাঠকবান্ধব হবে।
🤝 আপনার সহযোগিতা আমাদের চলার পথ — পাঠকই লেখার প্রাণ। ভালো লেগে থাকলে জানাতে ভুলবেন না, ত্রুটি থাকলে তা ধরিয়ে দিন। আমরা সবসময় শেখার চেষ্টা করি।
❤️ কল্পকথা ৩৬০ – পাঠকের ভালোবাসায় পথ চলে