বসন্তের শেষরাতে একলা প্রতীক্ষার গান: যেখানে প্রেম আর প্রার্থনা একাকার
বসন্তের শেষরাত। প্রকৃতিতে এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে এসেছে। বাতাস থমকে গেছে, যেন কোনো এক অজানা বেদনায় সেও শোকাহত। বসন্তের শেষবেলার মিষ্টি আমেজ আর ফুলের ঘ্রাণেও আজ প্রাণ নেই, সব যেন নিষ্প্রাণ। ঠিক যেমন এক দালানের অভ্যন্তরে বসে থাকা এক নারীর হৃদয়। তার হাতে এখনও মেহেদির রঙ শুকায়নি, যা ভালোবাসার এক নতুন শুরুকে স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু সেই দালানে তার ভালোবাসার মানুষের পদচিহ্ন পড়েনি। শূন্যতা আর নীরবতা আজ তার একমাত্র সঙ্গী।
"বসন্তের শেষরাতে বাতাস থমকে গেছে,
গোলাপজলের ঘ্রাণেও জেগে ওঠে না প্রাণ।
হাতের মেহেদি আজও শুকায়নি,
কিন্তু সে চরণ রাখেনি আমার দালানে।"
এটি শুধু এক নারীর ব্যক্তিগত যন্ত্রণা নয়, এটি প্রতিটি অপেক্ষারত হৃদয়ের এক সর্বজনীন চিত্র। আমাদের জীবনে এমন অনেক মুহূর্ত আসে, যখন আমরা কিছু একটা বা কাউকে ফিরে পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। সেই প্রতীক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত যেন এক একটি যুগ। সময় থমকে দাঁড়ায়, চারপাশের সব আনন্দ-উৎসব অর্থহীন মনে হয়। শুধু মনে হয়, কেন সেই প্রতীক্ষার শেষ হচ্ছে না? কেন সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটি আসছে না?
রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা পোলাওর সুবাস এই অপেক্ষাকে আরও বেশি কষ্টকর করে তোলে। সুবাসটি যেন কেবল পোলাওর নয়, এটি সেই সমস্ত সুখস্মৃতির সুবাস, যা প্রিয়জনের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোকে মনে করিয়ে দেয়। এই সুবাসে মিশে আছে তার প্রিয় খাবারের স্মৃতি, তাদের একসাথে কাটানো ভালোবাসার মুহূর্তগুলো। এই পোলাও শুধু খাবার নয়, এটি এক ধরনের ভালোবাসার প্রতীক, এক ধরনের আশা যে হয়তো আজ হলেও সে ফিরবে।
"রান্নাঘরে পোলাওর সুবাস ভাসে—
যেন তারই প্রিয় খাবারের স্মৃতি।
কাঁধে ওড়না, হাতে চুড়ি, চোখে কাজল—
আর মোনাজাতে শুধু একটি নামই উঠি।"
ভালোবাসার মানুষটি দূরে থাকলেও, তার স্মৃতি আর ভালোবাসার স্পর্শে নারীটি নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে। কাঁধে ওড়না, হাতে চুড়ি, চোখে কাজল – এই সাজ কেবল সৌন্দর্যের জন্য নয়, এটি ভালোবাসার এক নীরব প্রকাশ। এটি এক ধরনের আশা যে হয়তো আজ সে ফিরে আসবে, আর এই সাজ দেখে মুগ্ধ হবে। কিন্তু এই সাজের আড়ালে লুকিয়ে আছে গভীর বেদনা, যা কেবল তার চোখেই দৃশ্যমান। তার মোনাজাতে (প্রার্থনায়) শুধু একটি নামই উচ্চারিত হয়, যা তার ভালোবাসার গভীরতা আর বিশ্বাসের দৃঢ়তাকে প্রমাণ করে।
একবার আমার এক প্রতিবেশী দম্পতি ছিলেন, যাদের নাম ছিল রেহানা এবং হাসান। হাসান বিদেশে কাজ করতেন, আর রেহানা দেশে তার জন্য অপেক্ষা করতেন। প্রতি বছর তাদের বিবাহবার্ষিকীতে রেহানা পুরো বাড়ি সাজাতেন, হাসানের পছন্দের সব খাবার রান্না করতেন। এক বছর হাসান আসতে পারেননি। রেহানা সেদিনও তার পছন্দের পায়েস আর পোলাও রান্না করেছিলেন। আমি সেদিন তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। রেহানা আমাকে হাসিমুখে খাবার পরিবেশন করলেন, কিন্তু তার চোখ দেখে আমি বুঝতে পারলাম, তার ভেতরের কষ্টটা কতটা গভীর। তিনি কেবল রান্নাঘরে পোলাও আর পায়েসের ঘ্রাণে হাসানকে খুঁজছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, "হাসান যখন ফিরবে, এই সুবাসটা যেন তাকে মনে করিয়ে দেয়, আমি তার জন্যই অপেক্ষা করছি।" সেই দিন আমি বুঝেছিলাম, রান্নার সুবাস কেবল খাবার নয়, এটি ভালোবাসার এক নীরব ভাষা, যা দূরত্বের বাঁধন অতিক্রম করে চলে যায়।
কবিতার সবচেয়ে করুণ অংশটি হলো অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতি। ভালোবাসার মানুষটি কথা দিয়েছিল, "ইনশাআল্লাহ ফিরব, রাতে মাগরিবের পরেই, কেক কাটা হবে দুইজনে।" কিন্তু সেই রাত আর আসেনি। রাতের পর সকালের সেহরির আজান বেজে উঠেছে, কিন্তু সেই মানুষটি আজও ফিরে আসেনি।
"বলেছিল— “ইনশাআল্লাহ ফিরব,
রাতে মাগরিবের পরেই, কেক কাটা হবে দুইজনে।”
কই সে রাত? কোথায় সে কেক?
এই তো সেহরির আজান, অথচ সে নেই কারো সনে।"
এই লাইনগুলো আমাদের সেই সমস্ত অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেয়, যা আমরা জীবনে কখনো পূরণ করতে পারিনি। কখনো পরিস্থিতি, কখনো ভাগ্য, কিংবা কখনো জীবন আমাদের থেকে সবকিছু কেড়ে নেয়। কিন্তু সেই অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতির স্মৃতি আমাদের মনে এক স্থায়ী ক্ষত তৈরি করে। বিবাহবার্ষিকীর কেকটি আজ টেবিলে ঠান্ডা পড়ে আছে, যেন তা এক গভীর দুঃখের ঢেউ বয়ে চলেছে। এই কেক শুধু কেক নয়, এটি সেই ভালোবাসার প্রতীক, যা পূরণ হতে পারল না। এটি সেই স্বপ্ন, যা বাস্তব হওয়ার আগেই ভেঙে গেল।
আমি আমার এক বন্ধুর গল্প জানি, যার স্বামী একটি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। তাদের বিয়ের মাত্র এক বছর হয়েছিল। তাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে তার স্বামী একটি সারপ্রাইজ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সেই দিনই তিনি মারা যান। বন্ধুটি তার স্বামীর পরিকল্পনা অনুযায়ী কেক কিনে রেখেছিলেন, নতুন জামাকাপড় পরেছিলেন। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি। পরের দিন যখন তিনি কেকটি দেখলেন, তার চোখ থেকে অঝোরে জল ঝরতে শুরু করলো। সেই কেকটি যেন তার সমস্ত অসমাপ্ত স্বপ্নের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। সেদিন তিনি বুঝেছিলেন, জীবনের কিছু প্রতিশ্রুতি কখনো পূরণ হয় না। কিছু স্বপ্ন মাঝপথেই শেষ হয়ে যায়।
"নিঃসঙ্গ শহরের গলিপথে
কারো পায়ের আওয়াজ নেই—
বিবাহবার্ষিকীর টেবিলে কেক
ঠান্ডা পড়ে আছে, যেন দুঃখের ঢেউ বইছে বুকে গোপনে।"
এই লাইনগুলো এক নিঃসঙ্গ শহরের চিত্র তুলে ধরে। শহরের প্রতিটি গলি যেন নীরব, সেখানে কারো পায়ের আওয়াজ নেই। এই নীরবতা শুধু শহরের নয়, এটি এক নারীর মনের নীরবতা। এই নীরবতা তার একাকীত্ব, তার বেদনা, আর তার দীর্ঘ প্রতীক্ষার এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি। বিবাহবার্ষিকীর টেবিলের ঠান্ডা কেক যেন সেই নীরবতার এক চরম বহিঃপ্রকাশ। এই কেক যেন শুধু দুঃখের ঢেউ বয়ে চলছে না, এটি এক গভীর বেদনার কথাও বলছে, যা কেউ শুনতে পায় না।
এই কবিতাটির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো নারীটির পরিচয়। তিনি শুধু একজন প্রেমিকা নন, তিনি একজন স্ত্রী, একজন মুসলিমা, এবং একজন প্রেমে প্রতীক্ষাকারী। তার পরিচয়গুলো তার বেদনাকে আরও বেশি গভীর করে তোলে। তিনি তার বিশ্বাসে অটল, তার প্রেমে অবিচল, এবং তার প্রতীক্ষায় দৃঢ়।
"আমি স্ত্রী, আমি মুসলিমা, আমি প্রেমে প্রতীক্ষা—
আমি সেই চোখ, যেথায় অশ্রু ও দোয়া মিলে।"
তার চোখে যে অশ্রু, তা শুধু বেদনার নয়, তা দোয়ারও। তার প্রার্থনা শুধু তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য নয়, তা আল্লাহর কাছে তার দৃঢ় বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। তিনি জানেন, তার জীবন আল্লাহর হাতে, এবং তার সব বেদনাও আল্লাহর কাছেই সমর্পিত। এই বিশ্বাস তাকে শক্তি দেয়, এই বিশ্বাস তাকে আশান্বিত রাখে। এই বিশ্বাস তাকে বলে, ভালোবাসার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রকাশ হলো প্রার্থনা।
আমি আমার এক খালামনির গল্প জানি। তার স্বামী প্রায় ৩০ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যান। অনেকেই ভেবেছিল তিনি আর বেঁচে নেই। কিন্তু খালামনি কখনো বিশ্বাস হারাননি। তিনি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন, তার স্বামীর জন্য দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, "আমার চোখের অশ্রু শুধু তার জন্য নয়, এটি আমার আর আল্লাহর মধ্যকার এক নীরব চুক্তি। আমার অশ্রু আর দোয়া যদি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, তাহলে তিনি একদিন ঠিকই ফিরবেন." ৩০ বছর পর একদিন তার স্বামী ফিরে এলেন। খালামনির বিশ্বাস জয়লাভ করেছিল। সেদিন আমি বুঝেছিলাম, কিছু বিশ্বাস আর ভালোবাসা এতটাই শক্তিশালী হয় যে তা মৃত্যুর চেয়েও বেশি শক্তিশালী।
রাব্বানা, তাকে ভুলতে না দিও হে আল্লাহ তাআলা, এই দিল থেকে কখনো
কবিতার শেষ অংশটি এই পুরো লেখার কেন্দ্রবিন্দু। নারীটি জানে যে তার ভালোবাসার মানুষটি হয়তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু তার প্রার্থনা এই নয় যে, সে তাকে ফিরে পাক। তার প্রার্থনা হলো, আল্লাহ যেন তাকে কখনো ভুলতে না দেন।
"সে ফিরে আসে না, আসবেও না হয়তো,
তবু অন্তর বলে—
"রাব্বানা, তাকে ভুলতে না দিও হে আল্লাহ তাআলা,
এই দিল থেকে কখনো।"
এই প্রার্থনাটি ভালোবাসার এক নতুন সংজ্ঞাকে তুলে ধরে। ভালোবাসা শুধু কাছে থাকার নয়, ভালোবাসা হলো মনে রাখার। ভালোবাসা হলো সেই স্মৃতি, যা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকে। এই প্রার্থনাটি প্রমাণ করে, সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না। এটি শুধু পরিবর্তিত হয়, এটি নতুন রূপ ধারণ করে। এটি জীবনের অংশ হয়ে যায়, যা আমাদের চলার পথে শক্তি যোগায়।
এই প্রার্থনাটি একটি সর্বজনীন প্রার্থনার প্রতীক। যখন আমরা আমাদের প্রিয়জনকে হারাই, তখন আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় হয় যে আমরা তাকে ভুলে যাব। কিন্তু আমরা জানি, সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো ভোলা যায় না। এটি আমাদের হৃদয়ে এক স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। এই স্মৃতি আমাদের জীবনের অংশ হয়ে যায়, যা আমাদের শক্তি যোগায়, আমাদের আশাবাদী রাখে। এই প্রার্থনাটি সেই সমস্ত মানুষের জন্য, যারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছেন। এই প্রার্থনাটি তাদের জন্য, যারা জানেন যে তাদের ভালোবাসা কখনো শেষ হবে না।
এই কবিতাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভালোবাসা শুধু হাসি, আনন্দ আর ভালোবাসার মুহূর্ত নয়। ভালোবাসা হলো কষ্ট, অপেক্ষা, এবং বিশ্বাস। ভালোবাসা হলো সেই মোনাজাত, যা আমরা আমাদের প্রিয়জনের জন্য করি। ভালোবাসা হলো সেই অশ্রু, যা আমাদের চোখের কোণে জমে, কিন্তু আমাদের প্রার্থনাকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলে। এই কবিতাটি আমাদের শেখায় যে, ভালোবাসার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো সেই হৃদয়, যা ভালোবাসার মানুষকে না পেয়েও তাকে সারাজীবন ধরে মনে রাখে। এবং এর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে।
প্রিয় পাঠক, আপনার জীবন যদি এমন কোনো অপেক্ষার গল্প হয়ে থাকে, তাহলে মনে রাখবেন, আপনার একাকীত্ব কেবল আপনার নয়। এই নীরবতার ভাষা, এই দৃঢ় বিশ্বাস, আর এই প্রেম-প্রতীক্ষার গল্প পৃথিবীর প্রতিটি কোণে কোনো না কোনো হৃদয়ে বাস করে। আপনার চোখের অশ্রু, আপনার মোনাজাত, আর আপনার হৃদয়ের সেই অবিচল বিশ্বাসই আপনার ভালোবাসার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
🌙 কবিতার নাম: "ফিরে এলে না আজও"
লেখিকা: রাবেয়া মজুমদার
বসন্তের শেষরাতে বাতাস থমকে গেছে,
গোলাপজলের ঘ্রাণেও জেগে ওঠে না প্রাণ।
হাতের মেহেদি আজও শুকায়নি,
কিন্তু সে চরণ রাখেনি আমার দালানে।
রান্নাঘরে পোলাওর সুবাস ভাসে—
যেন তারই প্রিয় খাবারের স্মৃতি।
কাঁধে ওড়না, হাতে চুড়ি, চোখে কাজল—
আর মোনাজাতে শুধু একটি নামই উঠি।
বলেছিল— “ইনশাআল্লাহ ফিরব,
রাতে মাগরিবের পরেই, কেক কাটা হবে দুইজনে।”
কই সে রাত? কোথায় সে কেক?
এই তো সেহরির আজান, অথচ সে নেই কারো সনে।
নিঃসঙ্গ শহরের গলিপথে
কারো পায়ের আওয়াজ নেই—
বিবাহবার্ষিকীর টেবিলে কেক
ঠান্ডা পড়ে আছে, যেন দুঃখের ঢেউ বইছে বুকে গোপনে।
আমি স্ত্রী, আমি মুসলিমা, আমি প্রেমে প্রতীক্ষা—
আমি সেই চোখ, যেথায় অশ্রু ও দোয়া মিলে।
সে ফিরে আসে না, আসবেও না হয়তো,
তবু অন্তর বলে—
"রাব্বানা, তাকে ভুলতে না দিও হে আল্লাহ তাআলা,
এই দিল থেকে কখনো।"
“প্রতীক্ষার অন্ধকারে জমে থাকা আলো”
বসন্তের শেষরাতে থমকে যাওয়া বাতাসের মতো, কখনো কখনো আমাদের জীবনের পথও থেমে যায়। যেখানে একসময় প্রাণবন্ত ছিল, সেখানে নীরবতা এসে দম ফেলা কঠিন করে তোলে। এই নীরবতার মধ্যে লুকিয়ে থাকে গভীর এক প্রত্যাশা, এক দীর্ঘশ্বাস, আর অনুরোধ—কখনো যেন হারিয়ে না যায় সেই ভালোবাসার নাম।
প্রেম শুধু দেখা কিংবা সান্নিধ্যের নাম নয়, এটি হলো অন্তরের এক অমলিন পবিত্রতা, যা বেদনার মাঝেও প্রাণ ধরে রাখে। যখন কেউ চলে যায়, হারিয়ে যায়, তখনো হৃদয় ফিরে পায় এক টুকরো আশার ছোঁয়া—ইনশাআল্লাহ, সে ফিরবে। আর এই প্রত্যাশা হয় সেই প্রার্থনা, যেটি দোয়ার ভঙ্গিতে গড়া, অশ্রুর সাথে মিশে থাকা, এবং অন্তর থেকে উঠে আসা “রাব্বানা, তাকে ভুলতে না দিও”।
এমন সময় ভালোবাসা হয় এক অনির্বচনীয় শক্তি, যা শুধুমাত্র ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নয়, বরং মনের একান্ত নিবেদন — সেই মানুষটির জন্য শান্তি, মঙ্গল এবং স্নেহ কামনা করা। ভালোবাসা যখন পূর্ণ হয় আত্মত্যাগ আর স্মৃতির মিশেলে, তখন তা হয়ে ওঠে একটি জীবন্ত প্রার্থনা, যেখানে কষ্টও এক ধরনের সৌন্দর্য।
এই কবিতার প্রতিটি লাইন যেন সময়ের ধারা থামিয়ে দেয়, এবং একটি নিঃসঙ্গ হৃদয়ের কাহিনি বলে যায়, যা নিজের সঙ্গেই কথা বলে, দুঃখের ঢেউ গোপনে বুকে মায়া জাগায়।
প্রেমের এই গভীরতা, সেই অপেক্ষার তীব্রতা, এবং অন্তরের অদম্য প্রার্থনা আমাদের শেখায়— ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না, হয় শুধু রূপ বদলের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
এই কবিতাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভালোবাসা শুধু হাসি, আনন্দ আর ভালোবাসার মুহূর্ত নয়। ভালোবাসা হলো কষ্ট, অপেক্ষা, এবং বিশ্বাস। ভালোবাসা হলো সেই মোনাজাত, যা আমরা আমাদের প্রিয়জনের জন্য করি। ভালোবাসা হলো সেই অশ্রু, যা আমাদের চোখের কোণে জমে, কিন্তু আমাদের প্রার্থনাকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলে। এই কবিতাটি আমাদের শেখায় যে, ভালোবাসার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো সেই হৃদয়, যা ভালোবাসার মানুষকে না পেয়েও তাকে সারাজীবন ধরে মনে রাখে। এবং এর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে।
প্রিয় পাঠক,
আপনার জীবন যদি এমন কোনো অপেক্ষার গল্প হয়ে থাকে, তাহলে মনে রাখবেন, আপনার একাকীত্ব কেবল আপনার নয়। এই নীরবতার ভাষা, এই দৃঢ় বিশ্বাস, আর এই প্রেম-প্রতীক্ষার গল্প পৃথিবীর প্রতিটি কোণে কোনো না কোনো হৃদয়ে বাস করে। আপনার চোখের অশ্রু, আপনার মোনাজাত, আর আপনার হৃদয়ের সেই অবিচল বিশ্বাসই আপনার ভালোবাসার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
আমাদের চারপাশের কোলাহলে আমরা কি খুব দ্রুত ভুলে যাচ্ছি সেই ভালোবাসার মুখগুলোকে, যারা হয়তো আজ আমাদের পাশে নেই কিন্তু আমাদের অস্তিত্বের পরতে পরতে মিশে আছে? একটু থেমে কি আমরা সেই স্মৃতির দুয়ারে কড়া নাড়তে পারি না? সেই অপূর্ণ প্রতিশ্রুতির যন্ত্রণাগুলো আজও কি আমাদের মনে একই গভীরতা নিয়ে বাজে না? একবার ভেবে দেখুন, আপনার হৃদয়ও কি নীরবে সেই একই প্রার্থনা করে চলে না, "রাব্বানা, তাকে ভুলতে না দিও হে আল্লাহ তাআলা, এই দিল থেকে কখনো"? এই প্রশ্নটি যদি আপনার মনেও দোলা দিয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন, কিছু ভালোবাসা কখনোই শেষ হয় না; শুধু অপেক্ষা আর প্রার্থনার রূপে তা নতুন জীবন পায়।
🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।
শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com