শীত নেমেছে শহরে। কুয়াশায় ঢাকা গলি আর রাস্তায় স্নিগ্ধতা ছড়ালেও, ফুটপাথের পাশে শুয়ে থাকা সেই ক্ষুদ্র শরীরগুলোতে নেমেছে অসহায়তা আর কঠিন বাস্তবতা। আমরা যখন ঘরে ফিরে গরম চায়ের কাপে ঠোঁট ছুঁই, ওরা তখন কাঁথা জড়িয়ে যুদ্ধ করে জেগে থাকার সাথে—যাতে অন্তত স্বপ্নে একটু শান্তি মেলে।
ফুটপাথের শিশু, পথশিশু জীবন, শীতের শহর, দারিদ্র্য, শিশু অধিকার, মানবিক গল্প, বাস্তব জীবন, মানবতা, সমাজচিত্র,
রাত গভীর হলে শহরের আলো নিভে যায়, কিন্তু ফুটপাথের কিছু চোঁখ তখনও খোলা থাকে—কোনো ভয়, ক্ষুধা কিংবা কাঁপুনির কাছে হার মানতে চায় না বলে। আগুন ধরে থাকা সেই চোখগুলোতে ভগ্ন স্বপ্নের ছায়া, ঠোঁটে জমে থাকা নীরবতা, আর পায়ে গলে যাওয়া পথের ধুলো।
তাদের নিয়ে গল্প বলার কেউ নেই। কেউ বলে ওরা ভবঘুরে, কেউ আবার চোর-ছিনতাইকারী ভেবে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কিন্তু ওদের ভাঙা কাঁথার নিচে লুকিয়ে থাকে একেকটি অসমাপ্ত জীবনের কাব্য।
এই ব্লগে আমরা তাকিয়ে দেখি সেই মানুষগুলোকে, যারা 'মানুষ' হিসেবেই সমাজে জায়গা পায়নি কখনও। ফুটপাথে বেড়ে ওঠা শিশুদের জীবনকে দেখে ফেলা নয়, অনুভব করা দরকার। কারণ ওদের জীবন আমাদের বিবেকের আয়না।
চলুন, চোখ রাখি সেই আয়নায়—একটু গভীরভাবে, একটু মানবিক হয়ে।
ফুটপাথের ফিনিক্স
(মোজাম্মেল হোসেন মজুমদার)আমি দেখি—
ফুটপাথ-রাজপথে, শীতল গগনে,
একদল আগুন-ছেলেপুলে,
ভগ্ন স্বপ্নের গায়ে জড়িয়ে জীর্ণ কাঁথা,
ঘুমায় পাষাণ-শহরের ছায়াপথে!
কে বলে ওরা পথশিশু?
ওরাই তো রাজপুত্র ভবিষ্যতের—
রক্তে জ্বলছে আগ্নেয় লালসা,
চোখে আগামীর জ্বালা!
ওদের কান্নায় কাঁপে ধরণী,
ওদের হাসিতে সূর্য ওঠে নবীন গর্বে!
ওদের হাসিতে সূর্য ওঠে নবীন গর্বে!
খালি পা, নাড়ার পোশাক,
তবু ওদের বুকের ছন্দে বাজে ভগ্নী-সুর—
“আমি হই পথের রাজা! আমি ধুলোর ফেরেশতা!”
ওরা ভয় পায় না—
ওরা যুদ্ধ জানে ক্ষুধার বিরুদ্ধে,
ওরা বিদ্রোহ জানে পিতৃহীন পাপের প্রান্তরে!
ওরা যুদ্ধ জানে ক্ষুধার বিরুদ্ধে,
ওরা বিদ্রোহ জানে পিতৃহীন পাপের প্রান্তরে!
আমি শুনি—
একটা ছেলেপুলে চিৎকার করে ওঠে,
"আমি খাব না কারুর ভিক্ষা, আমি খাব কাজের দামে!"
আর এক কন্যা, কাচা পেট, দাঁত বের করে বলে,
"দিদি হইব, গাইবো আমি হিমালয়ের শিখরে!"
"দিদি হইব, গাইবো আমি হিমালয়ের শিখরে!"
যেখানে ফুটে না গোলাপ,
সেখানে ওরা ফুটায় জীবন—
ধুলোর ভিতর লুকানো কুসুমের মতো
জন্ম নেয় দিনের পর দিন।
ওদের পিঠে বেত নয়, রক্ত!
ওদের বইয়ে ছাপা নেই ছন্দ,
তবু ওরা গায়:
"আমি ক্ষুধা-জয়ী, বঞ্চনা-বিদ্রোহী!"
হে সভ্যতা!
তুমি ওদের দেখো—
ওরা দেয়ালে নয়, চোখে আঁকে ভবিষ্যৎ,
তুমি যাকে কুকুরের মতো তাড়াও,
সেইটিই একদিন তোমার ব্যালকনির নিচে
গেয়ে উঠবে— "আমি মানুষ! আমি বাংলার ভবিষ্যৎ!"
ওদের চিৎকার করিও না দমন,
ওরা বজ্র হয়ে ফিরে আসবে—
দাঁত নিক্ষেপ করে বলবে,
"এই পথ আমরাই গড়েছি, আমরাই ফিরাব রথ!"
যে শহর ঘুমায় এদের পাশে মুখ ফিরিয়ে,
সেই শহর জ্বলবে একদিন ওদের চুলোর আগুনে!
ওরা আর্তনাদ নয়—
ওরা অগ্নিসংলগ্ন প্রতিজ্ঞা!
যে শিশু মাটিতে ঘুমোয় আজ,
সে-ই একদিন শাসন করবে শ্রেষ্ঠ সিংহাসন।
ফুটপাথ? ওটা শুধু মাটির পথ নয়,
ওটা বীজভূমি— বিপ্লবের জন্মভূমি!
ওখানে ঝরে না শুধু কাঁটা,
ওখানেই তো উঠে দাঁড়ায়
নতুন সূর্যের প্রথম ঘামভেজা কণ্ঠস্বর।
ওদের ডাক শোন,
ওরা বলছে:
"আমরা আসছি,
ভাঙতে সকল বৈষম্যের কাঁটাতার,
আমরা আসছি,
আমরা হই বাংলার নতুন লাল-সন্তান!"
🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।
শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com