সকালটা ছিল স্বপ্নময়। রোল নম্বর মিলিয়ে যখন বুঝলাম আমি মেডিক্যালে চান্স পেয়েছি—মুহূর্তের জন্য বিশ্বাসই করতে পারিনি। চোখ ভিজে গেলো নিজেরই অজান্তে। ছোটবেলা থেকে যারা বলত, “তোর পক্ষে সম্ভব না”, তাদের মুখ যেন নিজের সাফল্য দিয়ে বন্ধ করে দিলাম এক ঝটকায়।
আমার মা হাঁস মুরগি বিক্রি করে, বাবা একজন দিনমজুর। ওদের কাঁধে ভর দিয়েই আমি হেঁটেছিলাম আলোর পথে। বই কেনা, কোচিং ফি, পরীক্ষার ফরম—সব কিছু চলত ধার, ঋণ আর ত্যাগে। কিন্তু যখন মেডিকেলে চান্স পেলাম, তখন হঠাৎই সামনে দাঁড়াল সবচেয়ে নির্মম সত্য—ভর্তি হতে গেলে টাকা লাগে, স্বপ্নে না।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়াও গরিবদের জন্য এক অসম লড়াই। ভর্তি ফি, হোস্টেল খরচ, পোশাক, প্রয়োজনীয় বই—এসব তো আছেই। এরপর ক্লাস চলাকালীন প্রতিদিনের যাতায়াত কিংবা থাকার ব্যবস্থার খরচ গুনলে সংখ্যাগুলো শুধু ভয় ধরায় না, স্বপ্নকে গলা টিপেও ধরে।
আমার স্বপ্নটাকে ক্যান্সারের মতো খেয়ে ফেললো অভাব নামের এক অদৃশ্য ব্যাধি।
তাই আজ মেডিকেলের সাদা অ্যাপ্রন আমার গায়ে নয়, বরং আমার ট্রাঙ্কে ভাঁজ করে রাখা অ্যাডমিশন চিঠিটার পাশে পড়ে আছে—একটা নীরব স্বপ্নের কফিন হয়ে।
এই ঘটনা শুধু আমার একার না। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন হাজারো ছেলেমেয়ে, যারা মেধায় অদ্বিতীয়, কিন্তু টাকায় অপদার্থ।
তাদের গল্প পত্রিকার হেডলাইনে আসে না, ক্যাম্পেইনে ফান্ডিং হয় না।
তারা হারিয়ে যায়—অভিমান নিয়ে, চোখ ভেজা রেখেই।
এই লেখা তাদেরই হয়ে ওঠার চেষ্টা—যারা প্রতিদিন ভাঙে, অথচ কারও চোখে ধরা পড়ে না।
মেডিকেলে ভর্তি সমস্যা, গরিব শিক্ষার্থী, মেডিকেল চান্স, ভর্তি ব্যর্থতা, বাংলাদেশের শিক্ষা বাস্তবতা, মেডিকেল স্টুডেন্ট স্টোরি,প্রতিটা সকাল যেমন নতুন একটা দিনের আশা নিয়ে আসে, তেমনি প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ের চোখেও নতুন নতুন স্বপ্ন জন্মায়। কেউ আকাশে উড়তে চায়, কেউ জ্ঞান বিলিয়ে শিক্ষক হতে চায়, আবার কেউ মানুষের জীবন বাঁচিয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সেই স্বপ্নটা যখন বাস্তবতার কঠিন দেয়ালে ধাক্কা খায়, তখন কেমন লাগে?
আজকের গল্পটা এমনই এক স্বপ্নের, যা সত্যি হওয়ার আগেই টাকার অভাবে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছিল। এই গল্প শুধু একজনের নয়, আমাদের দেশের হাজার হাজার মেধাবী ছেলেমেয়ের গল্প, যাদের চোখে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও, অভাবের কারণে সেই স্বপ্ন আর সত্যি হয় না। চলুন, আজ সেই না বলা কষ্টগুলো আর বুকের ভেতর জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসগুলোর কথাই শুনি।
স্বপ্নের শুরু: একজোড়া উজ্জ্বল চোখ আর ভাঙা সংসারের আশা
আমাদের গল্পের মেয়েটির নাম জোনাকি। গ্রামের মেঠো পথ আর ধুলোবালিতেই তার বেড়ে ওঠা। মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই ছিল ভীষণ মেধাবী আর পড়ার জন্য পাগল। তার দাদি ছিলেন তার সবচেয়ে কাছের মানুষ। কিন্তু সেই দাদি যখন সামান্য অসুখে, ভালো চিকিৎসার অভাবে তার চোখের সামনেই মারা গেলেন, ছোট্ট জোনাকির মনে একটা জেদ চেপে বসেছিল—‘আমি ডাক্তার হব। গ্রামের আর কোনো মানুষকে এভাবে কষ্ট পেয়ে মরতে দেব না।’
সেই থেকেই বই তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। গ্রামের অন্য মায়েরা যখন তাদের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করত, জোনাকির মা তখন কেরোসিনের বাতির আলোয় মেয়ের পড়ার ব্যবস্থা করে দিতেন। তার বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর, অন্যের জমিতে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়েই চলত তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসার। কিন্তু মেয়ের পড়ার জন্য তিনি সবকিছু করতে পারতেন। প্রায়ই বলতেন, ‘আমার এই মেয়েই আমার ছেলে। ওকে আমি পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ বানাব।’ বাবার এই কথাগুলোই ছিল জোনাকির এগিয়ে চলার সাহস।
স্কুল, কলেজ—সবখানেই জোনাকি তার মেধার ছাপ রেখেছে। শিক্ষকরা বলতেন, ‘এই মেয়ে একদিন আমাদের গ্রামের নাম উজ্জ্বল করবে।’ দিনরাত ভুলে সে শুধু পড়েছে। একটাই লক্ষ্য—মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতেই হবে।
অবশেষে সেই দিনটা এলো। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল বের হলো। মেধাতালিকায় নিজের নামটা দেখে জোনাকির চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছিল। সে জানত না, তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটা তখনো বাকি।
বাস্তবতার কঠিন ধাক্কা: টাকার কাছে মেধার হার
সরকারি মেডিকেলে সুযোগ পেলেও ভর্তি হতে, বইপত্র কিনতে আর শহরে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যে পরিমাণ টাকার দরকার, তা জোনাকির বাবার পক্ষে জোগাড় করা ছিল প্রায় অসম্ভব। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা গ্রামের মহাজন, চেয়ারম্যান, মেম্বার—সবার কাছে হাত পেতেছেন। কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
বরং গ্রামের মানুষ আড়ালে-আবডালে বলতে শুরু করল, ‘মেয়ে মানুষকে এত পড়িয়ে কী হবে? শেষমেশ তো পরের বাড়িই চলে যাবে। এত টাকা নষ্ট না করে ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দাও, সব চিন্তা শেষ।’
এই কথাগুলো জোনাকির বুকে তীরের মতো বিঁধত। যে সমাজ তার সাফল্যে একদিন গর্ব করেছিল, আজ তারাই তার স্বপ্নকে শেকল পরাতে চাইছে। ভর্তির শেষ তারিখ যত এগিয়ে আসছিল, জোনাকির স্বপ্নটাও তত ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। যে চোখে একদিন সাদা অ্যাপ্রন পরে মানুষের সেবা করার স্বপ্ন ছিল, সেই চোখে আজ শুধুই অন্ধকার। তার এতদিনের পরিশ্রম, তার মেধা—সবকিছুই যেন টাকার কাছে মূল্যহীন হয়ে গেল।
এই গল্প শুধু জোনাকির নয়, এ আমাদের সমাজেরই অসুখ
জোনাকির এই গল্প কোনো বানানো কাহিনি নয়। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে এমন হাজারো জোনাকি আছে, যাদের স্বপ্নগুলো এভাবেই টাকার অভাবে হারিয়ে যায়। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য পথটা আরও অনেক বেশি কঠিন। একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে সমাজের বাঁকা চাহনি—এই দুইয়ের চাপে তাদের স্বপ্নগুলো ডানা মেলার আগেই ভেঙে যায়।
কিছুদিন আগেই হয়তো পত্রিকার পাতায় এমন একটা খবর আমাদের চোখে পড়েছে। ধরা যাক, কুড়িগ্রামের এক অদম্য মেধাবী মেয়ে শাপলা আক্তার। বাবা একজন ভ্যানচালক। শত কষ্টের মাঝেও মেয়েটা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ভর্তির টাকা জোগাড় করতে না পেরে পুরো পরিবার দিশেহারা। শাপলার কান্নাভেজা মুখ আর তার বাবার অসহায় চাহনির ছবিটা সেদিন পত্রিকার পাতায় ছাপা হয়েছিল। এই শাপলাই যেন আমাদের জোনাকি। এমন হাজারো শাপলা আর জোনাকির গল্প প্রতি বছর আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়ে যায়, কিন্তু পরদিনই আমরা আবার সব ভুলে যাই।
এর পেছনের কারণ কী?
১. পড়াশোনার আকাশছোঁয়া খরচ: সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আর বেসরকারি মেডিকেলে পড়ার খরচ জোগানোর সামর্থ্য কয়টা সাধারণ পরিবারের আছে?
২. সাহায্যের অভাব: গরিব কিন্তু মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে যে পরিমাণ বৃত্তির ব্যবস্থা আছে, তা খুবই সামান্য।
৩. সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি: এখনো আমাদের সমাজের অনেকেই মনে করেন, মেয়েদের পড়াশোনার পেছনে টাকা খরচ করা মানে টাকাটা জলে ফেলা। এই মানসিকতাই হাজারো জোনাকির স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করে।
৪. সঠিক তথ্যের অভাব: কোথায় গেলে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে বা কারা গরিব মেধাবীদের নিয়ে কাজ করে, এই খবরগুলোই গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলোর কাছে পৌঁছায় না।
বদলাতে হবে, নাহলে আমরা সবাই হেরে যাব
এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে আমাদের সবাইকে মিলে চেষ্টা করতে হবে:
সরকারের ভূমিকা: সরকারকে আরও বেশি সরকারি মেডিকেল কলেজ তৈরি করতে হবে এবং গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য, বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সমাজের ধনী ব্যক্তিদের ভূমিকা: সমাজের ধনী ব্যক্তিরা বা বড় বড় কোম্পানিগুলো যদি কয়েকটি গরিব মেধাবী মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়, তাহলে হাজারো জোনাকির ভাগ্য বদলে যেতে পারে।
আমাদের করণীয়: আমাদের সবাইকে মানসিকতা বদলাতে হবে। মেয়েদের স্বপ্ন নিয়ে উপহাস না করে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার: ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে বা ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও কিন্তু জোনাকিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা যায়। দশের লাঠি, একের বোঝা—এই কথাটা তো আমরা সবাই জানি।
আসুন, স্বপ্নগুলোকে বাঁচতে দিই
একটা স্বপ্নের মৃত্যু মানে শুধু একজন মানুষের হেরে যাওয়া নয়, এর মানে পুরো সমাজের হেরে যাওয়া। জোনাকির মতো একজন মেধাবী মেয়ে যখন ডাক্তার হতে পারে না, তখন আমাদের সমাজ একজন অসাধারণ সেবককে হারায়। যে মেয়েটা হয়তো একদিন হাজারো মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারত, টাকার অভাবে তার সেই সম্ভাবনা অন্ধকারে হারিয়ে যায়।
আসুন, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি, যাতে আর কোনো জোনাকিকে তার স্বপ্নগুলো এভাবে বিসর্জন দিতে না হয়। আমাদের একটু সাহায্য আর একটু সহানুভূতিই পারে একটা সুন্দর স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে। কারণ, একটা মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হওয়া মানে, একটা দেশ ও সমাজের এগিয়ে যাওয়া।
এমন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আছে যারা মেডিক্যালে চান্স পেলেও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারে না — আর সেই “মেধা ছিল, স্বপ্ন ছিল, টাকা ছিল না” গল্পটা হয়ে যায় থেমে যাওয়া স্বপ্নের উপাখ্যান। তবে আশার কথা হলো, বাংলাদেশে কিছু সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, ফাউন্ডেশন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ আছে যারা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে। নিচে এমন কিছু উদ্যোগ ও তাদের সাহায্য পাওয়ার উপায় উল্লেখ করা হলো:
✅ বাংলাদেশে মেধাবীদের সাহায্যকারী কিছু প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগ:
🎓 ১. Prime Minister’s Education Assistance Trust (PMEAT)
👉 প্রতিষ্ঠা ও অধীনতা: ২০১২ সালে গঠিত, এটি বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত সরকারি ট্রাস্ট ।
👉 উদ্দেশ্য: দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি সহায়তা ও অনুদান প্রদানের জন্য।
👉 সহায়তার পরিমাণ (বিগত আপডেট অনুযায়ী):
o মাধ্যমিক স্তরে: টাকায় প্রায় ৫,০০০ টাকা
o উচ্চ মাধ্যমিকে: প্রায় ৮,০০০ টাকা
o স্নাতক (সমমান) পর্যায়ে: প্রায় ১০,০০০ টাক।
👉 আবেদনের নিয়মাবলী:
o ‘ই ভর্তি সহায়তা’ পোর্টালে আবেদন করতে হয়।
o আবেদনকারীর ছবি, স্বাক্ষর, জন্ম নিবন্ধন, অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশ মূলক ফর্মসহ অন্য প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করতে হয় ।
o নির্বাচিত হলে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে অর্থ প্রেরণ করা হয়। ধারণা করা হয় ৪ ৬ মাসের মধ্যে ড্যাশবোর্ডে আবেদন স্ট্যাটাস থেকে জানানো হয়।
👉 অফিসিয়াল আবেদন লিংক:
👉 https://www.eservice.pmeat.gov.bd/admission (ই ভর্তি সহায়তা সিস্টেমের ষ্টাডেন্ট রেজিস্ট্রেশন ও আবেদন পোর্টাল)
🧪 ২. Science and Technology Fellowship Trust (STFT)
👉 প্রতিষ্ঠা ও অধীনতা: ২০১৬ সালে “Bangabandhu Science & Technology Fellowship Trust Act” দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, পরবর্তীতে ২০২৫-এর মার্চে “Science and Technology Fellowship Trust” নামে নাম পরিবর্তন করা হয়।
👉 উদ্দেশ্য: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার উন্নয়নে গবেষণা ও ফেলোশিপ প্রদান, উচ্চ শিক্ষার গবেষণা সাপোর্ট করা।
👉 অধিষ্ঠান ও পরিচালনা: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (MOST) এর অধীনে পরিচালিত, ট্রাস্ট বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
👉 অর্থায়ন ও বৃত্তি প্রদান: ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ৫১৯ জন গবেষক পেলো ~১৫৫৪.৫ মিলিয়ন টাকা (প্রায় $18.3M) বৃত্তি।
যোগাযোগ ও ঠিকানা:
👉 অফিস: Science and Technology Complex, আগারগাঁও, ঢাকা
👉 ফোন: +৮৮০২৪ ১০২৫৮৫৫
👉 ই মেইল: info@bstft.gov.bd
আবেদন পদ্ধতি:
👉 MOST-এর ডিজিটাল সার্ভিস পোর্টালের ‘Grants/Fellowship’ বিভাগ থেকে আবেদন করতে হয় grant.most.gov.bd।
👉 পূর্বের আবেদন তথ্য ও নির্দেশিকা দেখার জন্য BSTFT এর নিজস্ব ওয়েবসাইট (teletalk পোর্টাল) ব্যবহার করা যায় bstft.teletalk.com.bd; test103.teletalk.com.bd।
✉️ আবেদন লিংক:
• MOST Grants Portal: grant.most.gov.bd → তারপর NST/Fellowship সেকশন থেকে আবেদন করুন।
• BSTFT Teletalk পোর্টাল (সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তি ও আবেদন): bstft.teletalk.com.bd;
🎓 ৩. Bangladesh Sweden Trust Fund
লক্ষ্য ও কার্যক্রম: বিদেশে ভর্তি হওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একমুখী বিমান ভ্রমণ খরচ (air travel grant) দেয়। গ্র্যাজুয়েট, পোস্টগ্র্যাজুয়েট বা PhD পঠনরত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে।
যোগ্যতা: বিদেশে ভর্তি, যাদের এ ধরনের ভ্রমণ ভাতা আগে পাননি, এবং অ্যাকাডেমিক পাবলিক পরীক্ষায় কোনো ‘third division/class’ নেই।
আবেদনের নিয়ম: ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে আবেদন ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।
🔬 ৪. Bangladesh Research and Education Network (BdREN)
প্রতিষ্ঠা ও কাঠামো: মূলত একটি সরকারি অনব্যবসায়িক ট্রাস্ট, ২০০৯ সালে প্রকল্প হিসেবে শুরু, ২০১৯ সালে ট্রাস্ট আকারে অঙ্গীভূত হয়। ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত হয় bstf.erd.gov.bd ।
উদ্দেশ্য: বাংলাদেশের ৭৮টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সংযুক্ত করে গবেষণা ও শিক্ষার মান উন্নয়ন করা।
সেবা: উচ্চগতির ইন্টারনেট, রিসার্চ নেটওয়ার্ক, সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ সুযোগ।
🏅 ৫. Bangladesh Krirashebi Kalyan Foundation (BKKF)
প্রতিষ্ঠা ও অধীনতা: ১৯৭৫ সালে গঠিত, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত জাতীয় ক্রীড়া কল্যাণ ফাউন্ডেশন ।
লক্ষ্য: দেশের খেলোয়াড় ও ক্রীড়াবিদদের কল্যাণমূলক সহায়তা ও বৃত্তি প্রদান।
সেবা: প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা।
📚 ৬. Bangabandhu Memorial Trust
প্রতিষ্ঠা: ১৯৯৪ সালে শেখ হাসিনার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত, বঙ্গবন্ধুর স্মরণে গঠিত ট্রাস্ট।
কার্যক্রম: বঙ্গবন্ধু ভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর, বিশেষ হাসপাতাল স্থাপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ইত্যাদি।
আর্থিক অবস্থা: কর সুবিধা বাতিল ও ২০২৫ সালে রাজস্ব অনুসন্ধানের মুখে পড়েছে। Bangabandhu Museum অংশ অংশে ধ্বংস হয়েছে।
৭. ড. মোহাম্মদ ইউনুস ফাউন্ডেশন / Grameen Shikkha
গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে থাকে।
আবেদন পদ্ধতি: স্থানীয় গ্রামীণ ব্যাংক বা গ্রামীণ শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করতে হয়।
ওয়েবসাইট: [https://www.grameenfoundation.org]
৮. বি.ডি. এডুকেশন ট্রাস্ট (BD Education Trust)
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাংলাদেশি সংস্থা। মেধাবীদের এককালীন অথবা সেমিস্টারভিত্তিক আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
আবেদন পদ্ধতি: ই-মেইল বা ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হয়, পরিবারের আর্থিক তথ্যসহ।
ওয়েবসাইট: [https://bdeducationtrust.org.uk]
৯. TMSS (ঠাকুরগাঁও মহিলা সমিতি)
বিভিন্ন মেডিকেল শিক্ষার্থীকে সহায়তা দিয়ে থাকে।
যোগাযোগ: স্থানীয় TMSS অফিসে যোগাযোগ করে আবেদন করা যায়।
ওয়েবসাইট: [https://tmss-bd.org]
১০. Manusher Jonno Foundation (মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন)
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী অধিকারসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তা দিয়ে থাকে।
কিছু অংশীদার সংস্থা শিক্ষা খাতে আর্থিক অনুদান দেয়।
যোগাযোগ: ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংস্থা অনুযায়ী আবেদন করা যায়।
ওয়েবসাইট: [https://www.manusherjonno.org](https://www.manusherjonno.org)
১১. কিছু জনপ্রিয় ব্যক্তিগত / প্রবাসী উদ্যোগ (ফেসবুক-ভিত্তিক):
“বন্ধু সমাজ”, “স্বপ্নপূরণ ফাউন্ডেশন”, “মানবিক সাহায্য চাই” (Facebook Group)
নিয়মিত মেডিকেল-চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে পোস্ট হয়।
আপনাকে শিক্ষাগত প্রমাণপত্র, চান্সপ্রাপ্তির প্রমাণ ও অভাবের কারণসহ পোস্ট দিতে হবে।
✍️ সাহায্য পাওয়ার জন্য কী কী প্রস্তুতি রাখা উচিত:
✅ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের প্রমাণ (ফলাফল বা রোল নম্বর)
কলেজে ভর্তি ফরম বা কললেটার (যদি থাকে)
পরিবারের আয় সংক্রান্ত কাগজ (ইনকাম সার্টিফিকেট / ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র)
নিজের ও অভিভাবকের NID কপি
আবেদনপত্র (অনলাইন/অফলাইন)
“মায়ের চোখে আজ জল। বাবার মুখে নির্বাক ব্যথা। অথচ আমি মেডিক্যালে চান্স পেয়েছি—দেশের একজন ডাক্তার হওয়ার প্রথম ধাপটা পেরিয়েছি।
আমি [আপনার নাম], দরিদ্র ঘরের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই বইয়ের ভেতর ডুবে থেকেছি, কল্পনায় নিজের নামের আগে 'ডা.' জুড়ে দিয়েছিলাম বহু আগেই।
কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ ঝড়ের মুখে... কারণ আমার পরিবার মেডিকেল কলেজে ভর্তির খরচটা দিতে পারছে না। আমার বাবা একজন [পেশা], মাসিক আয় দিয়ে সংসারই চলে না, ভর্তি ফি, জামা-কাপড়, বাসাভাড়া, বই কেনার খরচ—সব কিছু একসাথে সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
আজ আমি একটাই অনুরোধ করতে এসেছি—আপনারা কেউ যদি পারেন, একটু পাশে থাকুন। আমি বাঁচতে চাই, ডাক্তার হতে চাই, গরীবের পাশে দাঁড়াতে চাই।
সাহায্য হয়তো সামান্যই হবে কারও কাছে, কিন্তু আমার কাছে সেটা হবে জীবন বদলে দেওয়া এক আলো।
আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসাই আমার শক্তি।"
[TEXT ফরম্যাট]: দরখাস্ত - বৃত্তির জন্য আবেদন (বাংলা ভার্সন)
তারিখ: ০৫ আগস্ট ২০২৫
বরাবর,
মানবিক সাহায্য প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ,
[সংস্থার নাম]
বিষয়: মেডিকেল কলেজে ভর্তি সহায়তার জন্য আর্থিক অনুদানের আবেদন।
মান্যবর,
আমি, [আপনার পুরো নাম], পিতা: [পিতার নাম], মাতা: [মাতার নাম], গ্রামের বাড়ি: [ঠিকানা], একজন গরীব ও মেধাবী ছাত্র/ছাত্রী হিসেবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় [বছর] সালে উত্তীর্ণ হয়ে [মেডিকেল কলেজের নাম]-এ চান্স পেয়েছি (রোল নম্বর: [রোল নম্বর])।
দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আমার পরিবার অত্যন্ত আর্থিক অসচ্ছল। বাবা একজন [পেশা], যার মাসিক আয় মাত্র [টাকা] টাকা। এই আয় দিয়ে পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোই কঠিন, সেখানে আমার মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় খরচ ([প্রায় কত টাকা]) জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমি মেডিকেল পেশায় নিজেকে উৎসর্গ করে ভবিষ্যতে দেশের অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই। তাই বিনীত অনুরোধ, আমাকে প্রয়োজনীয় ভর্তি ফি ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করলে আমি চিরঋণী থাকবো।
আপনার সদয় বিবেচনার জন্য কৃতজ্ঞ থাকবো।
সাদর বিনীত,
[আপনার নাম]
মোবাইল: [ফোন নম্বর]
ইমেইল: [ইমেইল ঠিকানা]
ঠিকানা: [বর্তমান/স্থায়ী ঠিকানা]
সংযুক্তি:
১. মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট
২. জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মসনদ
৩. ইনকাম সার্টিফিকেট
৪. প্রয়োজনীয় অন্য কাগজপত্র
✅ আবেদন করার আগে করণীয়:
যেকোনো ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট বা অফিসিয়াল সোর্স চেক করুন।
প্রয়োজনে ফেসবুকে/মিডিয়ায় পোস্ট করে গণমানুষের সহানুভূতি নিন।
সময়মতো যোগাযোগ করুন এবং সব তথ্য সঠিকভাবে দিন।
🔗 অতিরিক্ত টিপস:
যদি কোনো সংস্থা আপনাকে সাহায্য করতে না পারে, তবুও হাল ছাড়বেন না। অনেক সময় ফেসবুকে বা মিডিয়ায় লেখা বা ভিডিও ভাইরাল হলে ব্যক্তি পর্যায় থেকেও সাহায্য আসে।
আপনার গল্পটি সুন্দরভাবে হিউম্যান টাচ দিয়ে লিখে প্রকাশ করুন — তাতে মানুষের মন গলে যায়।
আপনি একা নন। আপনার মতো অনেকেই আছে। কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে কেউ কিছু করতে পারবে না। হাল ধরলে কেউ না কেউ একদিন এগিয়ে আসবেই।
🔻 পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি ছোট্ট অনুরোধ
আপনার মতামত আমাদের জন্য অমূল্য।
এই বিষয়টি নিয়ে আপনি কী ভাবেন? আপনার অভিজ্ঞতা, প্রশ্ন বা মতামত নিচে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।
🟢 পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন।
আপনার একটি শেয়ার হয়তো আরেকজনের জানার দরজা খুলে দিতে পারে।
ধন্যবাদ 💚
🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।
শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com