নির্বাচনের টাকা আছে, কিন্তু মানুষের জন্য নেই কেন?
“নির্বাচনের জন্য যত টাকা লাগবে, তা দেওয়া হবে”—এই কথাটি একজন সাধারণ মানুষ বললে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। কিন্তু যখন এটি আসে দেশের একজন প্রভাবশালী অর্থ উপদেষ্টার মুখ থেকে, তখন কেবল অবাক নয়, ব্যথিতও হতে হয়।
বাংলাদেশের প্রতিটি গরিব মানুষের চোখে একটাই প্রশ্ন:
মানুষ মরছে ওষুধের অভাবে, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে বেতন দিতে না পারায়, কৃষক মাঠে ফসল ফলিয়ে পাচ্ছে না দাম—তখন কোথায় থাকে এই ‘অসীম’ টাকা?
রাস্তা-ঘাটে হাঁটলেই দেখা যায়, ভাঙা ব্রিজ, অন্ধকার অলিগলি, কাদায় ডুবে থাকা স্কুলের উঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মশার ঝাঁক আর ফার্মেসির বদলে দুটো স্যালাইন।
অথচ নির্বাচনের জন্য বাজেট 'সমস্যা না'!
এই বৈপরীত্য কেবল অর্থনৈতিক না, এটি একটি নৈতিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
আমরা কি তবে এমন এক রাষ্ট্রে বাস করছি, যেখানে ভোটের নামে নাটক করতে টাকা আছে, কিন্তু বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর মানবতা নেই?
প্রশ্ন এখানেই:
রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার কী—জনগণের কল্যাণ, নাকি ক্ষমতার কারসাজি?
নির্বাচনী বাজেট, জনকল্যাণ, প্রতিবাদী ব্লগ, বাংলাদেশ রাজনীতি, অর্থনীতি বৈষম্য, রাষ্ট্র বনাম মানুষ, ভোটের মূল্য, মানবিক প্রতিবাদ,নির্বাচনের জন্য টাকা আছে, কিন্তু মানুষের জীবনের মূল্য নেই?
“নির্বাচনের জন্য যত টাকা লাগবে, তা দেওয়া হবে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।”
—অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ
এই একটি বাক্য আজও কাঁপিয়ে দেয় আমার মতো অসংখ্য নাগরিককে, যাদের জন্য প্রতিদিনের জীবন মানে লড়াই—ভাত জোটানো, বাসায় ওষুধ রাখা, সন্তানের স্কুলের ফি দেওয়া।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, আমাদের জন্য যখন বাজেট হয় "ঘাটতি", তখন নির্বাচনের জন্য তা হয় "উদার বাজেট"!
একজন রিকশাওয়ালা যখন রাত ২টায় খালি পেটে ঘুমাতে যায়,
একজন গার্মেন্টস কর্মী যখন স্যালারি না পেয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে চিন্তিত,
একজন কৃষক যখন ১০ টাকা কেজি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে বাজার থেকে ৫০ টাকায় কিনে আনেন...
তখন সেই রাষ্ট্রের মুখপাত্র বলছেন—“নির্বাচনের টাকা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই”।
এটা কেবল আর্থিক বৈষম্য নয়, এটি হল নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত রূপ।
এই দেশটি কি কেবলই ভোটের জন্য বাঁচে? নাকি মানুষের জন্য?
কোটি কোটি টাকা যখন ব্যয় হয় ব্যালট বাক্স, গাড়ি, নিরাপত্তা, প্রচারনা, সাজসজ্জা, ভুয়া প্রশিক্ষণ বা মিডিয়া কভারেজে— তখন হাসপাতালের বিছানায় একজন মায়ের মুখে কেবল একটাই প্রশ্ন জাগে:
"আমার ছেলেটার চিকিৎসার টাকা নেই বলে কি ও মরবে?"
আমরা কি ভুলে গেছি যে, নির্বাচন নয়—মানুষ রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি?
একটি দেশ তখনই মহান হয়, যখন তার সম্পদ আগে মানুষের জন্য, তারপরে নির্বাচনের জন্য।
কিন্তু এখানে যেন ঠিক উল্টোটা চলছে!
প্রশ্নটা খুব সরল:
👉 মানুষের জীবন কি এখন ভোটের চেয়েও মূল্যহীন?
🛑 মানুষ মরছে, অথচ ভোটের বাজেট নিয়ে সমস্যা নেই?
বন্ধুরা,
আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন রাষ্ট্রের মুখপাত্র নিঃসংকোচে বলেন—
“নির্বাচনের জন্য যত টাকা লাগবে, তা দেওয়া হবে। কোনো সমস্যা নেই।”
কিন্তু প্রশ্ন হল—
📌 তাহলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ কেন ত্রাণের অভাবে দিন কাটায়?
📌 হাসপাতালের দরজায় কেন মায়ের চোখে শিশুর ওষুধের টাকার অভাব ঝরে পড়ে?
📌 কেন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে ফি দিতে না পেরে?
📌 কেন কৃষক তার ফসলের দাম পায় না?
এমন একটি দেশে আমরা বাস করছি, যেখানে
একটি ব্যালট বাক্সের মূল্য
👉 একজন গরিব মানুষের জীবনের চেয়েও বেশি!
এটা শুধু অন্যায় নয়,
👉 এটা একটা জাতিগত অপমান,
👉 এটা একটি রাষ্ট্রের বিবেকহীনতার প্রমাণ!
✊ আজ যদি চুপ থাকি, কাল আমাদের সন্তানরাও একই প্রশ্ন করবে—
"আমার জীবন কি ভোটের চেয়ে কম মূল্যবান?"
❗বন্ধুরা, এখনই সময় প্রশ্ন করার—
✅ রাষ্ট্র কার জন্য?
✅ নির্বাচন কাদের জন্য?
✅ এই টাকাগুলো আসলে কার?
এখন সময় শুধু জানার নয়, প্রতিবাদ করার।
কলম, কণ্ঠ আর কীবোর্ডের শক্তি দিয়ে জানিয়ে দিন—
আমরা ভোটের জন্য নয়, মানুষের জন্য বাজেট চাই!
"নির্বাচনে যত টাকা লাগবে, আমরা দেবো।" - অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ
কথাটা শুনলে বুকের ভেতরটা কেমন ছ্যাঁৎ করে ওঠে, তাই না? মনে হয়, বাহ্! গণতন্ত্রের জন্য কী দারুণ নিঃস্বার্থতা (আত্মত্যাগ)! দেশের নির্বাচন কমিশন যখনই আবদার করে, শত শত, হাজার হাজার কোটি টাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যেন টাকার কোনো কমতি নেই, গুপ্তধন (খাজানা) একেবারে উথলে পড়ছে। পোস্টারে পোস্টারে শহর ঢেকে যায়, মাইকের গর্জনে কান পাতা দায় হয়, আর মিডিয়াতে চলে প্রচারণার ঝলমলে উৎসব। এক কথায়, ভোটের জন্য টাকার এ এক এলাহি কাণ্ড!
কিন্তু এই মুদ্রার অপর পিঠটা যখন দেখি, তখন সেই ছ্যাঁৎ করে ওঠা অনুভূতিটা এক তীব্র যন্ত্রণা আর ক্ষোভে পরিণত হয়। এই অপর পিঠেই বাস করে আমার, আপনার মতো সাধারণ মানুষ।
যে বাবা তার অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে সরকারি হাসপাতালের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, যার কাছে একটা জরুরি ইনজেকশন কেনার পয়সা নেই, তিনি যখন শোনেন ভোটের জন্য "যত টাকা লাগে" দেওয়া হবে, তখন তার কাছে এই গণতন্ত্রকে একটা নিষ্ঠুর রসিকতা বলে মনে হয়।
যে শিক্ষিত তরুণ বছরের পর বছর জুতার তলা ক্ষয় করে একটা চাকরির জন্য ঘুরছে, যার সার্টিফিকেটগুলো ফাইলের নিচে চাপা পড়ে হলুদ হয়ে যাচ্ছে, সে যখন দেখে ভোটের বাজারে টাকার ছড়াছড়ি, তখন তার নিজের শিক্ষাকে অর্থহীন মনে হয়।
যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সোনার ফসল ফলিয়েও আড়তদারের কারসাজিতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন, ঋণের বোঝায় যার কোমর ভেঙে পড়ছে, তিনি যখন দেখেন ভোটের প্রচারণায় কোটি কোটি টাকা উড়ছে, তখন তার কাছে এই রাষ্ট্রকে অচেনা, পরজীবী এক ব্যবস্থা বলে মনে হয়।
এই বৈপরীত্যই আজকের বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা। একদিকে নির্বাচনের নামে টাকার মহাযজ্ঞ, অন্যদিকে জনজীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণে সীমাহীন উদাসীনতা। প্রশ্নটা তাই আজ দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে—এই গণতন্ত্র কার জন্য? টাকার থলি নিয়ে ঘুরতে থাকা নেতাদের জন্য, নাকি খালি থালি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা জনতার জন্য?
ভোটের বাজার: যেখানে টাকার কাছে বিবেক বিক্রি হয়
নির্বাচন মানে এখন আর আদর্শের লড়াই নয়, নীতির প্রতিযোগিতা নয়। নির্বাচন এখন হয়ে উঠেছে পেশিশক্তি আর টাকার খেলার এক নির্লজ্জ প্রদর্শনী। নির্বাচন কমিশন প্রতি ভোটের জন্য যে খরচ নির্ধারণ করে দেয়, তা যে হিমশৈলের চূড়ামাত্র, তা এ দেশের শিশুরাও জানে। একজন প্রার্থী যে পরিমাণ টাকা খরচ করেন, তা দিয়ে ছোটখাটো একটা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব, কয়েকশ বেকারের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।
এই টাকার উৎস কী? এর গন্তব্যই বা কোথায়?
এই টাকা আসে মূলত কালো টাকার মালিক, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী আর ক্ষমতার সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর কাছ থেকে। তারা এই টাকা লগ্নি করে, কারণ তারা জানে, নির্বাচনে জিততে পারলে এই লগ্নি করা টাকা সুদেমূলে শতগুণ হয়ে ফেরত আসবে। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লুটপাট, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ-বাণিজ্য—এইসবই তো সেই টাকা উসুলের মাধ্যম।
আর এই টাকা খরচ হয় ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য। কোথাও শাড়ি-লুঙ্গি বিলি হয়, কোথাও যুবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ টাকা, কোথাও চলে বিরিয়ানির দেদার আয়োজন। ভোটের আগে হুট করে এলাকার রাস্তাঘাট মেরামত হয়, যেনতেনভাবে কাজ শেষ করে বিল তুলে নেওয়া হয়। এই সাময়িক সুবিধার বিনিময়ে আমরা বিকিয়ে দিই আমাদের পাঁচ বছরের ভবিষ্যৎ। আমরা ভুলে যাই, যে নেতা আজ ৫০০ টাকার একটা নোট হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন, তিনি আগামী পাঁচ বছর আমাদের পকেট থেকে লক্ষ কোটি টাকা কেটে নেবেন।
এই ব্যবস্থাকে কি গণতন্ত্র বলা যায়? একে বড়জোর "টাকা-তন্ত্র" বা Plutocracy বলা যেতে পারে। এখানে টাকার জোরে নীতি কেনা হয়, বিবেক কেনা হয়, এমনকি ভোটও কেনা হয়। যে প্রার্থীর টাকা ছিটানোর ক্ষমতা যত বেশি, তার জেতার সম্ভাবনাও ততটাই উজ্জ্বল। একজন সৎ, যোগ্য কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষের জন্য এই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া প্রায় অসম্ভব। ফলে, সংসদ বা স্থানীয় সরকার পরিণত হয় ব্যবসায়ীদের ক্লাবে, যেখানে জনসেবার বদলে আত্মসেবাই মূল মন্ত্র হয়ে দাঁড়ায়।
চিকিৎসার হাহাকার: জনতার পয়সার ভিন্ন ব্যবহার
এবার তাকানো যাক সেই জায়গাগুলোতে, যেখানে "যত টাকা লাগে দেবো" শোনার জন্য মানুষ চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে।
১. স্বাস্থ্যখাত: লাইনে দাঁড়ানো জীবন
আপনি যেকোনো একটি সরকারি হাসপাতালে যান। দেখবেন, জরুরি বিভাগে উপচে পড়া ভিড়। ওয়ার্ডে একটা বেডের জন্য হাহাকার। মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন রোগী। ডাক্তার আছেন, কিন্তু পর্যাপ্ত নন। নার্স আছেন, কিন্তু রোগীর অনুপাতে নগণ্য। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো যন্ত্রপাতির অভাব আর ওষুধের সংকট। কোটি টাকা দামের মেশিন হয়তো সামান্য ত্রুটির জন্য বছরের পর বছর অকেজো পড়ে আছে। ফার্মেসিতে গেলে বলা হয়, "এই ওষুধটা সাপ্লাই নাই, বাইরে থেকে কিনে আনেন।" একটা স্যালাইন, একটা সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক বা একটা ব্যথানাশক ইনজেকশনের জন্যেও রোগীর পরিবারকে দৌড়াতে হয় বাইরের দোকানে।
অথচ একটা জাতীয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক বাজেটই থাকে হাজার হাজার কোটি টাকা। প্রার্থীদের অনানুষ্ঠানিক খরচের হিসাব তো বাদই দিলাম। এই টাকার মাত্র ১০ শতাংশও যদি প্রতি বছর স্বাস্থ্যখাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো কোনো বাবাকে তার সন্তানের চিকিৎসার জন্য কিডনি বিক্রি করার কথা ভাবতে হতো না। কোনো মায়ের কোল খালি হতো না শুধু একটা অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাবে।
ভোটের পোস্টারে যে টাকা খরচ হয়, সেই টাকায় হয়তো একটা উপজেলার পুরো বছরের শিশুদের ভ্যাকসিনের জোগান দেওয়া যেত। নেতাদের গাড়ি বহরের তেলের খরচে হয়তো একটা গোটা হাসপাতালের জেনারেটরের জ্বালানি হয়ে যেত। কিন্তু হয় না। কারণ, মৃত মানুষের তো ভোটের প্রয়োজন হয় না!
২. কর্মসংস্থান: শিক্ষিত বেকারের দীর্ঘশ্বাস
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ লক্ষ তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগ কি তৈরি হচ্ছে? সরকারি চাকরির বিজ্ঞাপন যেন সোনার হরিণ। আর বেসরকারি খাতেও স্বজনপ্রীতি আর মামা-চাচা ছাড়া ভালো চাকরি পাওয়া দুরূহ। লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। কেউ কেউ পা বাড়াচ্ছে অপরাধের পথে, কেউবা ঝুঁকিপূর্ণ পথে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে।
এই বিশাল কর্মক্ষম জনশক্তি দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হতে পারত। কিন্তু আমরা তাদের জন্য কী করছি? নির্বাচনের সময় এই যুবকদেরকেই ব্যবহার করা হয় পোস্টার লাগানোর কাজে, মিছিলের স্লোগান দেওয়ার জন্য। তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় সামান্য কিছু টাকা, আর দেখানো হয় ক্ষমতার রঙিন স্বপ্ন। নির্বাচন শেষ হলে সেই যুবকদের আর কেউ চেনে না।
ভেবে দেখুন, একজন এমপির নির্বাচনী অনানুষ্ঠানিক খরচের টাকায় কতগুলো ছোট বা মাঝারি উদ্যোগ (SME) তৈরি করা যেত? কতজন তরুণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করা যেত? এই টাকা যদি কর্মসংস্থান তৈরিতে বিনিয়োগ করা হতো, তাহলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে কতটা এগিয়ে যেত? কিন্তু বেকারদের দীর্ঘশ্বাসের চেয়ে নেতাদের ক্ষমতার গর্জন অনেক বেশি শক্তিশালী।
৩. কৃষি: ফসলের মাঠে কৃষকের কান্না
কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে—এই কথাটা আমরা বইয়ের পাতায় পড়ি, মঞ্চের ভাষণে শুনি। কিন্তু বাস্তবতা কী? কৃষক তার উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পায় না, পাটের দাম পায় না, সবজি বিক্রি করতে হয় পানির দরে। অথচ সার, বীজ, কীটনাশকের দাম আকাশছোঁয়া। মহাজনের ঋণ আর এনজিওর কিস্তির চাপে তাদের জীবন দুর্বিষহ।
যখন একজন কৃষক এক মণ ধান বিক্রি করে একটা ভালো শার্ট কিনতে পারেন না, তখন তার কাছে উন্নয়নের গল্প ফাঁপা শোনায়। যখন মধ্যস্বত্বভোগীরা রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যায় আর কৃষক ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করে, তখন এই ব্যবস্থাকে শোষণের যন্ত্র বলে মনে হয়।
নির্বাচনের সময় যে টাকা অনুৎপাদনশীল খাতে ঢালা হয়, তার একটা অংশ দিয়েও যদি প্রতি ইউনিয়নে একটি করে হিমাগার বা শস্যগুদাম তৈরি করা হতো, তাহলে কৃষকরা তাদের ফসল সংরক্ষণ করে ভালো দামের জন্য অপেক্ষা করতে পারতেন। যদি ভর্তুকি দিয়ে তাদের হাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি তুলে দেওয়া যেত, তাহলে উৎপাদন খরচ কমে আসত। কিন্তু কৃষকের কান্না নেতাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না, কারণ তাদের চোখ থাকে ভোটের গণিতে।
সমাধান কোথায়? জনতার জাগরণই একমাত্র পথ
এই চক্র থেকে বের হওয়ার পথ কী? সমস্যাটা গভীরে, তাই সমাধানও হতে হবে মৌলিক।
নির্বাচনী ব্যয়ের কঠোর নিয়ন্ত্রণ: শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ এবং তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। কোনো প্রার্থী বা দল সীমা লঙ্ঘন করলে তার প্রার্থিতা বাতিলসহ কঠোর শাস্তির বিধান থাকতে হবে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: প্রার্থীদের ব্যয়ের প্রতিটি পয়সার হিসাব জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে হবে। কোথা থেকে টাকা এলো এবং কোথায় খরচ হলো, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ অডিট হতে হবে।
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নির্বাচনী ব্যয়: উন্নত অনেক দেশের মতো প্রার্থীদের ব্যক্তিগত খরচের বদলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আনুপাতিক হারে সীমিত আকারে তহবিল সরবরাহ করা যেতে পারে। এতে টাকার খেলা অনেকাংশে কমে আসবে এবং সৎ প্রার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
জনতার সচেতনতা: সবচেয়ে বড় সমাধান হলো জনতার জাগরণ। আমাদের বুঝতে হবে, যে নেতা টাকা দিয়ে ভোট কেনেন, তিনি আমাদের বন্ধু নন, শোষক। তাৎক্ষণিক লাভের লোভ ত্যাগ করে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণের কথা ভাবতে হবে। প্রার্থীদের কাছে এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানতে চাইতে হবে।
ভোট গণতন্ত্রের উৎসব, কিন্তু সেই উৎসব যদি জনগণের লাশের উপর দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়, তবে তা উৎসবে নয়, শোকযাত্রায় পরিণত হয়। যে টাকা দিয়ে গরিবের ঘরে চাল পৌঁছানোর কথা, শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়ার কথা, রোগীর মুখে ওষুধ দেওয়ার কথা, সেই টাকা যখন ভোটের বাজারে ওড়ে, তখন বুঝতে হবে আমাদের গণতন্ত্র অসুস্থ, আমাদের রাষ্ট্র পথভ্রষ্ট।
আমাদের সেই গণতন্ত্র চাই না, যা শুধু পাঁচ বছর পর পর আঙ্গুলে কালি লাগানোর সুযোগ দেয়। আমরা সেই শাসন চাই, যা মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। আমরা সেই রাষ্ট্র চাই, যা বলবে—"মানুষের চিকিৎসায় যত টাকা লাগে দেবো", "তরুণদের চাকরির জন্য যত টাকা লাগে দেবো", "কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে যত টাকা লাগে দেবো।"
যতদিন পর্যন্ত এই কথাগুলো আমরা শাসকদের মুখ থেকে না শুনছি, ততদিন পর্যন্ত আমাদের প্রশ্ন করে যেতেই হবে। কারণ #জনতার_পয়সা_জনতার_চাহিদা পূরণের জন্যই ব্যবহৃত হওয়া উচিত, নেতাদের ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে নয়। দেশ বাঁচলে ভোট হবে, কিন্তু শুধু ভোটের জন্য দেশটাকে বাঁচতে দিন।
🛑 শেষ প্রশ্নটা আপনার কাছে:
বন্ধুরা,
এই লেখা কেবল একটি ক্ষোভ নয়, একটি মনের আর্তি।
এই কনটেন্টের মূল লক্ষ শুধু সমালোচনা নয়—চোখ খুলে দেওয়া।
আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি, যেখানে
ভোটের আয়োজনই রাষ্ট্রের কাছে মানুষকে বাঁচানোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
আজ যদি আমরা প্রশ্ন না তুলি—
আগামীকাল আমাদের সন্তানরাও একদিন জিজ্ঞাসা করবে—
"বাবা, কেন আমার জন্য রাষ্ট্র দাঁড়ায়নি?"
এই লেখার আহ্বান—
📣 প্রতিবাদ করুন, কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে।
📣 প্রশ্ন তুলুন, কিন্তু মানবিকভাবে।
📣 কথা বলুন, কিন্তু সত্যকে আলিঙ্গন করে।
রাষ্ট্রের কাছে মানুষই হওয়া উচিত সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।
আর যদি তা না হয়—তবে নির্বাচন নয়, প্রয়োজন বিপ্লব!
📌 এখন আপনার পালা—
আপনার মন্তব্য দিন, শেয়ার করুন, আলোচনা শুরু করুন।
কারণ, আপনার একবার প্রশ্ন তোলাই কাউকে নীরবতা ভাঙার সাহস দিতে পারে।
🔗 আরও জানুন: http://kalpakatha360.blogspot.com/
✊ ভোট নয়, মানুষ আগে। প্রতিবাদ নয়, পরিবর্তনের জন্য চেতনা জাগাও।
📢 আপনার মতামত দিন, প্রশ্ন তুলুন, শেয়ার করুন।
আপনার আওয়াজই বদলে দিতে পারে আগামীকাল।
#Kalpakatha360 #মানুষ_প্রথমে #জবাব_দিতে_হবে #StateVsPeople, #ব্যয়ের_গণতন্ত্র #নির্বাচন_না_তেলছড়ি #প্রথমে_মানুষের_দায়িত্ব_তারপর_ভোট #ভোটের_নাম_নিয়ে_টাকায়_চুরি_চাই_না

_converted.webp)
🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।
শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com