জীবনের প্রতিটি ঘূর্ণিপাকে আমরা এক অদৃশ্য বোঝা বয়ে চলি ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা, আর্থিক চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম। এসব চাপের মধ্যে একসময় আমরা কেবল একটা আশ্বাস খুঁজি কেউ যেন বলে, “তুমি একা নও, সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এই আশ্বাসটিই ইসলাম আমাদের দেয় এক অনন্য উপায়ে তাওয়াক্কুল নামক এক শক্তিশালী জীবনদর্শনের মাধ্যমে। এটি শুধু আধ্যাত্মিক শান্তির কথা বলে না; এটি আমাদের শেখায়, কীভাবে শূন্য থেকে শুরু করে স্বনির্ভরতার শিখরে পৌঁছানো যায়। এটি অলসতার নয়, বরং সচেষ্ট হওয়ার তাগিদ দেয়।
এই লেখাটি আপনাকে নিয়ে যাবে এমন এক সাহাবির জীবনে, যিনি হতাশা থেকে শুরু করে আশা ও সাফল্যের এক বিস্ময়কর যাত্রা পেরিয়েছিলেন। নবীজি (ﷺ)-এর প্রজ্ঞা, তাওয়াক্কুলের দর্শন এবং বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলা করার এক বাস্তবধর্মী পাঠ সবকিছু মিলে এই গল্পটি হয়ে উঠেছে আমাদের সময়ের জন্যও এক অনন্ত অনুপ্রেরণা।
এবার চলুন, ফিরে যাই সেই সময়ে, যখন সব পথ বন্ধ মনে হলেও, বিশ্বাসের আলোয় খোলা হয়েছিল এক নতুন দিগন্ত…
আমাদের আধুনিক জীবনটা যেন এক অন্তহীন দৌড়ের মাঠ। সাফল্য, নিরাপত্তা আর একটুখানি স্বস্তির পেছনে ছুটতে ছুটতে আমরা প্রায়ই ক্লান্ত, উদ্বিগ্ন আর দিশেহারা হয়ে পড়ি। চাকরির অনিশ্চয়তা, ব্যবসার মন্দা, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর ভবিষ্যতের অজানা ভয় এই সবকিছু মিলে আমাদের মনের ভেতর এক ধরনের ঝড় তৈরি করে। এই ঝড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা আশ্রয় খুঁজি, একটা অবলম্বন চাই, যা আমাদের বলতে পারে, "চিন্তা কোরো না, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।"
ইসলাম এই মানসিক আশ্রয়ের এক অসাধারণ ধারণা আমাদের দেয়, যার নাম তাওয়াক্কুল। শব্দটি ছোট, কিন্তু এর অর্থ মহাবিশ্বের মতোই বিশাল। সহজ ভাষায়, তাওয়াক্কুল মানে হলো আল্লাহর ওপর চূড়ান্ত এবং ভরসা রাখা। তবে এই ভরসা নিষ্ক্রিয়তা বা অলসতার নামান্তর নয়। এটি হলো নিজের সর্বাত্মক চেষ্টাটুকু করার পর ফলাফলের জন্য মহান আল্লাহর ওপর নির্ভর করা। এটি হলো এই বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আপনার চেষ্টার পর যা কিছুই ঘটবে, তা-ই আপনার জন্য কল্যাণকর, কারণ আপনার জীবনের পরিকল্পনাকারী স্বয়ং আল্লাহ।
এই ধারণার সবচেয়ে সুন্দর প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় নবীজি (ﷺ)-এর সাহাবিদের জীবনে। তাঁদের জীবন ছিল কঠিন, সংগ্রামমুখর, কিন্তু তাঁদের হৃদয় ছিল তাওয়াক্কুলের প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ। তেমনই এক সাহাবির গল্প আজও আমাদের শেখায়, কীভাবে হতাশার গভীর অন্ধকার থেকে বিশ্বাসের আলোয় ফেরা যায়।
সময়টা ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগ। মদিনার ছোট্ট সমাজে তখন দারিদ্র্য আর সচ্ছলতা পাশাপাশি বসবাস । এমনই এক দিনে, আনসার গোত্রের একজন সাহাবি চরম হতাশা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন। তাঁর চেহারায় ছিল রাজ্যের ক্লান্তি আর বিষণ্ণতার ছাপ। পরনের পোশাকেও ছিল দৈন্যতার স্পষ্ট চিহ্ন।
তিনি নবীজি (ﷺ)-কে বললেন, "হে আল্লাহর রাসুল! আমি এবং আমার পরিবার চরম অভাবে আছি। আমাদের ঘরে খাওয়ার মতো কিছুই নেই। আমি কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছি না। আমার সব পথ যেন বন্ধ হয়ে গেছে।"
এই কথাগুলো যখন তিনি বলছিলেন, তাঁর কণ্ঠে ছিল একরাশ অসহায়ত্ব। এটা সেই অনুভূতি, যা আজকের দিনেও একজন চাকরি হারানো মানুষ বা ব্যবসায় লোকসান করা উদ্যোক্তা অনুভব করেন। যখন মনে হয়, সামনে কেবলই দুর্ভেদ্য দেয়াল।
নবীজি (ﷺ) তাঁর কথাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তিনি তাঁকে কোনো অলৌকিক সমাধানের আশ্বাস দিলেন না বা শুধু দোয়ার ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে বললেন না। বরং তিনি এমন এক প্রশ্ন করলেন, যা ছিল বাস্তবসম্মত এবং আত্ম-জাগরণের প্রথম ধাপ।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "তোমার ঘরে কি একেবারেই কিছু নেই?"
এই প্রশ্নটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নবীজি (ﷺ) তাঁকে বোঝাতে চাইলেন যে, কোনো মানুষের অবস্থাই শূন্য থাকে না। আল্লাহ প্রত্যেককে কিছু না কিছু সম্পদ বা সামর্থ্য দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। আমাদের কাজ হলো সেটাকে খুঁজে বের করা।
সাহাবি কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলেন, "ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার ঘরে মাত্র দুটি জিনিস আছে। একটি মোটা চাদর, যার একাংশ আমরা গায়ে দিই এবং বাকিটা বিছিয়ে শুই। আর একটি কাঠের পেয়ালা, যাতে আমরা পানি পান করি।"
একটু ভাবুন, একটি পরিবারের মোট সম্পদ বলতে এই দুটি মামুলি জিনিস! আজকের যুগে এর কোনো আর্থিক মূল্যই হয়তো নেই। কিন্তু নবীজি (ﷺ)-এর চোখে এগুলোই ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর প্রথম পুঁজি।
তিনি বললেন, "যাও, ওই দুটি জিনিস আমার কাছে নিয়ে এসো।"
সাহাবি দ্বিধাগ্রস্ত হলেন না। কারণ রাসুলের প্রতি তাঁর বিশ্বাস ছিল অটুট। তিনি বাড়ি গিয়ে তাঁর শেষ সম্বলটুকু নিয়ে ফিরে এলেন।
নবীজি (ﷺ) সেই চাদর আর পেয়ালাটি হাতে নিলেন এবং উপস্থিত সাহাবিদের মাঝে সেগুলোকে নিলামে তুললেন। তিনি উচ্চস্বরে ঘোষণা করলেন, "কে আছ, যে এই জিনিস দুটি কিনে নেবে?"
একজন সাহাবি বললেন, "আমি এক দিরহামের বিনিময়ে এগুলো নিতে পারি।"
নবীজি (ﷺ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, "কেউ কি এর চেয়ে বেশি দাম দিতে প্রস্তুত?" তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ওই অভাবী মানুষটির জন্য সর্বোচ্চ মূল্য নিশ্চিত করা।
আরেকজন সাহাবি দাঁড়িয়ে বললেন, "আমি দুই দিরহাম দেব।"
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) দুই দিরহামের বিনিময়ে জিনিস দুটি সেই সাহাবির কাছে বিক্রি করে দিলেন। তারপর তিনি অর্থটুকু সেই আনসার সাহাবির হাতে তুলে দিয়ে এক অসাধারণ কর্মপরিকল্পনা বাতলে দিলেন। এটি ছিল তাওয়াক্কুলের প্রায়োগিক পাঠ।
তিনি বললেন, "এই নাও দুই দিরহাম। এক দিরহাম দিয়ে তোমার পরিবারের জন্য খাবার কিনে নিয়ে যাও। আর বাকি এক দিরহাম দিয়ে একটি কুড়ালের মাথা কিনে আমার কাছে নিয়ে এসো।"
এখানে লক্ষণীয়, নবীজি (ﷺ) তাঁকে পুরো অর্থ দিয়ে ভোগ করতে বলেননি। তিনি শিখিয়েছেন, কীভাবে আয়ের একটি অংশ নিজের প্রয়োজন মেটাতে এবং অন্য অংশটি পুনরায় বিনিয়োগ করে সম্পদ তৈরি করতে হয়। এটি ছিল ক্ষুদ্র ব্যবসার এক নিখুঁত মডেল।
সাহাবি নবীজি (ﷺ)-এর নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন। তিনি এক দিরহাম দিয়ে পরিবারের জন্য খাবার কিনলেন এবং অন্য দিরহাম দিয়ে একটি ধারালো কুড়ালের মাথা নিয়ে এলেন।
নবীজি (ﷺ) যখন কুড়ালের মাথাটি হাতে পেলেন, তখন তিনি নিজের পবিত্র হাতে সেটিতে একটি কাঠের হাতল লাগিয়ে দিলেন। তিনি শুধু পথনির্দেশকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন কর্মীর সহযোদ্ধা। নিজের হাতে হাতল লাগিয়ে তিনি শ্রমের মর্যাদাকে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিলেন।
তারপর তিনি কুড়ালটি সেই সাহাবির হাতে তুলে দিয়ে বললেন, "এবার এটি নিয়ে জঙ্গলে যাও। কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করো। আগামী পনেরো দিন যেন আমি তোমাকে এখানে না দেখি।"
এই শেষ বাক্যটি ছিল চূড়ান্ত তাওয়াক্কুলের ডাক। নবীজি (ﷺ) তাঁকে শুধু একটি হাতিয়ার দেননি, বরং একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁকে শিখিয়েছেন, আল্লাহর ওপর ভরসা করে নিরবচ্ছিন্নভাবে নিজের কাজ করে যেতে হবে। ফলাফলের জন্য অধৈর্য হলে চলবে না।
সেই সাহাবি নবীজি (ﷺ)-এর দেখানো পথে যাত্রা শুরু করলেন। তাঁর হাতে ছিল একটি কুড়াল আর হৃদয়ে ছিল আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা। তিনি প্রতিদিন জঙ্গলে যেতেন, কঠোর পরিশ্রমে কাঠ কাটতেন এবং সেগুলো বাজারে বিক্রি করতেন। তাঁর ঘাম আর তাওয়াক্কুল মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।
দিনগুলো কাটতে লাগল। তিনি আর নবীজি (ﷺ)-এর কাছে সাহায্যের জন্য ফিরে যাননি। কারণ তিনি এখন আর সাহায্যপ্রার্থী নন, তিনি একজন পরিশ্রমী কর্মী।
ঠিক পনেরো দিন পর, তিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে ফিরে এলেন। এবার তাঁর চেহারায় অসহায়ত্বের ছাপ ছিল না, বরং ছিল আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রমের উজ্জ্বল আভা। তাঁর হাতে ছিল দশ দিরহাম।
তিনি নবীজি (ﷺ)-কে জানালেন যে, এই পনেরো দিনে তিনি কঠোর পরিশ্রম করে এই অর্থ উপার্জন করেছেন। এই অর্থ দিয়ে তিনি নিজের পরিবারের জন্য খাবার কিনেছেন এবং নতুন পোশাকও কিনেছেন। তাঁর জীবনে স্বনির্ভরতার সূর্য উদিত হয়েছে।
নবীজি (ﷺ) তাঁর কথা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। তিনি তাঁর পিঠ চাপড়ে দিয়ে সেই ঐতিহাসিক উক্তিটি করলেন, যা আজও প্রতিটি মুসলমানের জন্য পথপ্রদর্শক:
“তুমি নিজের ঘামে রুজি উপার্জন করো ভিক্ষার হাত পাতার চেয়ে এটা তোমার জন্য অনেক সম্মানের। কিয়ামতের দিন যেন তোমার হাতে শ্রমের গৌরব থাকে, সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা নয়।” মনে রেখো, সাহায্য চাওয়া কেবল তিন শ্রেণির মানুষের জন্য বৈধ: যে চরম অভাবে পড়েছে, যার ওপর ঋণের বোঝা চেপেছে, অথবা যার ওপর রক্তপণ দেওয়ার দায়িত্ব এসেছে।" (সুনানে আবু দাউদ)
এই গল্পটি ১৪০০ বছর আগের হতে পারে, কিন্তু এর আবেদন চিরন্তন। আমাদের আজকের জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জের সমাধান এই গল্পের গভীরে লুকিয়ে আছে।
১. শূন্য থেকে শুরু করার মানসিকতা: আমরা প্রায়ই ভাবি, "আমার তো কিছুই নেই।" কিন্তু এই গল্প আমাদের শেখায়, আমাদের সবারই কিছু না কিছু আছে। আপনার দক্ষতা, আপনার জ্ঞান, আপনার স্মার্টফোন, আপনার সামান্য সঞ্চয় এগুলোই আপনার "চাদর আর পেয়ালা"। হতাশ না হয়ে নিজের যা আছে, তা নিয়েই ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করুন।
২. তাওয়াক্কুল মানে নিষ্ক্রিয়তা নয়: গল্পটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, তাওয়াক্কুল মানে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা নয়। বরং নিজের সামর্থ্যের শেষ বিন্দু দিয়ে চেষ্টা করার নামই তাওয়াক্কুল। সাহাবিকে কুড়াল নিয়ে জঙ্গলে যেতে হয়েছিল, কাঠ কাটতে হয়েছিল। আল্লাহ তাঁর এই চেষ্টাকেই বরকতময় করেছেন। আপনি যদি চাকরির জন্য চেষ্টা না করেন, ব্যবসার জন্য পরিকল্পনা না করেন, তাহলে শুধু দোয়ার মাধ্যমে সাফল্য আসবে এই ধারণাটি ভুল। আল্লাহ বলেছেন, "মানুষ তাই পায়, যা সে চেষ্টা করে।" (সূরা নাজম: ৩৯)
৩. সঠিক বিনিয়োগের গুরুত্ব: নবীজি (ﷺ) দুই দিরহামকে দুই ভাগে ভাগ করে একটি অংশ ভোগ এবং অন্য অংশ বিনিয়োগ করতে শিখিয়েছেন। আমাদের জীবনেও এটি প্রযোজ্য। আমাদের আয়ের একটি অংশ দিয়ে প্রয়োজন মেটানো উচিত এবং অন্য অংশটি নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি, নতুন কিছু শেখা বাเล็ก পরিসরে কোনো উদ্যোগে বিনিয়োগ করা উচিত। এটিই টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি।
৪. শ্রমের মর্যাদা: কোনো কাজই ছোট নয়। কাঠ কাটার মতো একটি সাধারণ কাজকেও নবীজি (ﷺ) ভিক্ষার চেয়ে উত্তম বলেছেন। আজকের সমাজে আমরা প্রায়ই নির্দিষ্ট কিছু কাজকে "সম্মানজনক" আর বাকিগুলোকে "ছোট কাজ" বলে ধরে নিই। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সততার সাথে করা যেকোনো হালাল উপার্জনই সম্মানের।
৫. ধৈর্য এবং অধ্যবসায়: নবীজি (ﷺ) সাহাবিকে পনেরো দিনের একটি লক্ষ্য দিয়েছিলেন। তিনি তাঁকে শিখিয়েছেন যে, সাফল্যের জন্য ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হয়। আমরা প্রায়ই খুব দ্রুত ফল আশা করি। একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেই পরের মাস থেকে আয় করতে চাই, একটি ব্যবসা শুরু করেই রাতারাতি লাভবান হতে চাই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রতিটি বড় সাফল্যের পেছনে থাকে নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম আর ধৈর্যের গল্প।
তাওয়াক্কুল কোনো অলৌকিক চেরাগ নয় যে ঘষা দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এটি হলো এক জীবনদর্শন। এটি আমাদের শেখায়, কীভাবে ভয়কে শক্তিতে, উদ্বেগকে প্রশান্তিতে এবং চেষ্টাকে সফলতায় রূপান্তর করা যায়।
যখন জীবন আপনার ওপর কঠিন হয়ে ওঠে, যখন মনে হয় সব দরজা বন্ধ, তখন আনসার সাহাবির এই গল্পটি স্মরণ করুন। নিজের জীবনের দিকে তাকান এবং আপনার "চাদর ও পেয়ালা" খুঁজে বের করুন। হতে পারে সেটা আপনার কোনো পুরোনো শখ, কোনো ভুলে যাওয়া দক্ষতা, বা সামান্য কিছু জমানো টাকা।
সেটিকে পুঁজি করে নিজের জন্য একটি "বিশ্বাস" তৈরি করুন। অর্থাৎ, এমন একটি পদক্ষেপ নিন যা আপনাকে আয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারপর আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে নিজের সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করুন। ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হবেন না। কারণ আপনি যখন আপনার দায়িত্বটুকু পালন করবেন, তখন আল্লাহ তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনিই তো বলেছেন, "আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।" (সূরা আত-তালাক: ২-৩)
আপনার এবং আমার, আমাদের সবার জীবনেই এমন মুহূর্ত আসে যখন একটি কুড়াল আর পনেরো দিনের অবিচল পরিশ্রমই পারে সব সমীকরণ বদলে দিতে। প্রশ্ন হলো, আপনি কি আপনার কুড়ালটি খুঁজে নিতে প্রস্তুত?
জীবনে কোনো একসময় আমরা সবাই সেই হতাশ সাহাবির মতো হয়ে যাই হতবুদ্ধি, ক্লান্ত, আর সব দরজা বন্ধ মনে হয়। কিন্তু আজকের এই গল্পটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কোথাও না কোথাও লুকিয়ে থাকে একখানা "চাদর আর পেয়ালা" একটু সামর্থ্য, অল্প কিছু সম্ভাবনা, কিংবা কোনো পুরনো স্বপ্ন। প্রশ্ন হলো, আমরা কি সেটাকে খুঁজে বের করছি?
তাওয়াক্কুল মানে অলৌকিক কিছু ঘটে যাওয়ার প্রতীক্ষায় বসে থাকা নয়। বরং এটি হলো সেই নির্ভরতা, যে আপনি নিজের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করছেন এবং বাকিটা একমাত্র আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিচ্ছেন এই বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
আজ যখন আপনার জীবন কঠিন লাগছে, তখন নিজেকে প্রশ্ন করুন:
👉 আমার হাতে কি এখনো কিছু আছে যা দিয়ে আমি শুরু করতে পারি?
👉 আমি কি নিজের জন্য একটি ‘বিশ্বাস’ তৈরি করেছি?
👉 আমি কি চেষ্টা করছি, নাকি শুধু দুঃখের ওপর ভর করে বসে আছি?
কারণ, তাওয়াক্কুল শুধু একটি ধর্মীয় শব্দ নয় এটি এক সাহসী সিদ্ধান্ত, এক নতুন সূচনা।
আর আপনি যখন সেই সিদ্ধান্তটা নেবেন, তখন হয়তো সাফল্য আসতে সময় নেবে… কিন্তু প্রশান্তি আসবে ঠিক তখনই।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার আপনি কি কুড়াল হাতে তুলে নিতে প্রস্তুত?
আপনি কি সেই পনেরো দিনের যাত্রা শুরু করতে প্রস্তুত, যা আপনার পুরো জীবনটাই বদলে দিতে পারে?
🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।
শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com