জীবনের একেকটি মুহূর্ত যেন অজানা সমুদ্রযাত্রা। কখনো ঢেউ শান্ত, আকাশ নীল; আবার হঠাৎই দিগন্তজোড়া কালো মেঘ, চারদিকে উত্তাল ঢেউ, আর মাঝখানে আপনি এক ভাঙাচোরা নৌকার একাকী নাবিক। কোথাও কোনো দিশা নেই, নেই কোনো স্থির ভূমি, নেই আলোর রেখা। এ সময় মনে প্রশ্ন জাগে এই অন্ধকারে আমি কাকে আঁকড়ে ধরব? কোথা থেকে আসবে সেই শক্তি, যা আমাকে ডুবন্ত অবস্থাতেও বাঁচিয়ে রাখবে?
এই প্রশ্নের উত্তর যুগে যুগে একটিই থেকেছে এক অদৃশ্য, অথচ অকাট্য সত্য। এক মহাশক্তি, যিনি আকাশ-জমিনের স্রষ্টা, মানব হৃদয়ের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়। তিনি ডাকেন নীরবে, গভীরে, এমনভাবে যে, এই ডাক শুনে মানুষ উঠে দাঁড়ায়, ঝড়ের মাঝেও দৃঢ় থাকে, আর ঘোষণা করে "আমার রব এক, তিনি অদ্বিতীয়।"
আমরা সবাই জীবনের কোনো না কোনো মুহূর্তে এক দিকচিহ্নহীন নাবিকের মতো অনুভব করি। চারদিকে যখন উত্তাল সমুদ্র, আকাশ কালো মেঘে ঢাকা আর নিজের নৌকাটিও ভাঙাচোরা, তখন এক টুকরো স্থির ভূমি বা একটি আলোকবর্তিকার জন্য মন কেঁদে ওঠে। আধুনিক জীবনের জটিলতা, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আর মানসিক চাপএই সবই সেই সমুদ্রের একেকটি ভয়াল ঢেউ, যা আমাদের অস্তিত্বকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। এই চরম অসহায়ত্বের মুহূর্তে মানুষ কী আঁকড়ে ধরে? কোথা থেকে সে পায় সেই মানসিক শক্তি, যা তাকে এই ঝড়ের মাঝেও অটল রাখে?
উত্তরটি লুকিয়ে আছে এক মহাজাগতিক ডাকে, যা মহাকালের শুরু থেকে প্রতিটি মানবাত্মার গভীরে প্রতিধ্বনিত হয়ে আসছে। এটি হলো এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টার ডাক। সেই পরম সত্তার প্রতি বিশ্বাস, যা ‘ঈমান’ নামে পরিচিত, কেবল একটি ধারণা বা বিশ্বাস নয়, এটি এক প্রচণ্ড শক্তিশালী মানসিক আশ্রয়, এক অটল দুর্গ, যা যেকোনো ঝঞ্ঝাতেও ভেঙে পড়ে না।
আসুন, এই ডাকের স্বরূপ এবং ঈমানের সেই অবিশ্বাস্য শক্তিকে একটু গভীরভাবে জানার চেষ্টা করি, যা সাধারণ মানুষকেও অসাধারণ সহনশীলতা দান করে।
এই ডাক কোনো টেলিফোন কল বা দরজায় কড়া নাড়ার মতো শব্দ নয়। এটি এক নীরব অনুভূতি, এক গভীর উপলব্ধি। কখনো কি বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে আপনার নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হয়েছে? কিংবা সদ্যোজাত শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে কি এক необясনীম পবিত্রতায় মন ভরে গেছে? অথবা কোনো বিপদে যখন সব পথ বন্ধ মনে হচ্ছিল, তখন হঠাৎ করেই কি সমাধানের একটি ক্ষীণ আলো দেখতে পেয়েছেন?
এগুলোই সেই ডাকের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর পরিচয় আমাদের কাছে তুলে ধরেন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে। তিনি বলেন:
"আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না; বরং সিজদা করো আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা حقاً তাঁরই ইবাদত করো।" (সূরা ফুসসিলাত: ৩৭)
এই ডাক আমাদের যুক্তিতেও নাড়া দেয়। একজন চিত্রকর ছাড়া যেমন কোনো চিত্রকর্ম হয় না, একজন স্থপতি ছাড়া যেমন কোনো সুরম্য অট্টালিকা হয় না, তেমনি এই সুবিশাল, সুশৃঙ্খল মহাবিশ্বসূর্য, চন্দ্র, কোটি কোটি নক্ষত্র, ঋতুর পরিবর্তন, প্রাণের চক্রএসবের পেছনে কি কোনো মহান পরিকল্পনাকারী নেই? এই যৌক্তিক প্রশ্নই মানুষকে তার স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করতে বাধ্য করে।
এই ডাক আমাদের সহজাত প্রকৃতি, আমাদের ‘ফিতরাত’-এর গভীরে প্রোথিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "প্রত্যেক সন্তান ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে।" (সহীহ বুখারী)। অর্থাৎ, প্রতিটি মানবাত্মা তার স্রষ্টাকে চেনার ও তাঁর কাছে নত হওয়ার এক সহজাত প্রবণতা নিয়েই জন্মায়। পারিপার্শ্বিকতা পরে সেই প্রকৃতির ওপর পর্দা ফেলে দেয়। কিন্তু জীবনের কোনো এক বাঁকে, সেই পর্দা সরে গেলে মানুষ তার মূলের দিকে ফিরে আসতে চায়।
ঈমান আনা বা বিশ্বাস স্থাপন করা কোনো জাদুকরী ঘটনা নয়। এটি একটি যাত্রা। যেমনটা হয়েছিল মানব ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর জীবনে। তিনি এমন এক সমাজে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে মানুষ নিজেদের হাতে গড়া মূর্তির পূজা করত। কিন্তু তাঁর অনুসন্ধিৎসু মন এই অসারতাকে মেনে নিতে পারেনি।
কুরআনে তাঁর এই আধ্যাত্মিক যাত্রার এক অসাধারণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তিনি প্রথমে রাতের আকাশে উজ্জ্বল তারকা দেখে ভাবলেন, এটাই কি আমার রব? কিন্তু যখন তারকা ডুবে গেল, তিনি বললেন, "অস্তগামী জিনিস আমি পছন্দ করি না।" এরপর তিনি আরো বড় ও উজ্জ্বল চাঁদকে দেখে একই কথা ভাবলেন, কিন্তু চাঁদেরও একই পরিণতি হলো। অবশেষে যখন ঝলমলে সূর্য উঠল, তিনি ভাবলেন, "এটাই আমার রব, কারণ এটা সবচেয়ে বড়।" কিন্তু দিনের শেষে যখন সূর্যও দিগন্তে মিলিয়ে গেল, তখন তাঁর আত্মা সেই পরম সত্যকে খুঁজে পেল। তিনি ঘোষণা করলেন:
"হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা যাকে আল্লাহর শরিক কর, আমি তা থেকে মুক্ত। আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফেরাচ্ছি, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।" (সূরা আল-আনআম: ৭৮-৭৯)
ইবরাহিম (আঃ)-এর এই যাত্রা আমাদের শেখায় যে, ঈমান অন্ধ বিশ্বাস নয়। এটি সত্যানুসন্ধান, যুক্তি, পর্যবেক্ষণ এবং অবশেষে এক গভীর উপলব্ধির ফসল। এই উপলব্ধি যখন অন্তরে আসে, তখন তা এক অবিশ্বাস্য দৃঢ়তার জন্ম দেয়।
ঈমানের ঘোষণা দেওয়াই শেষ কথা নয়, বরং এটি এক নতুন অধ্যায়ের শুরু। এই পথ ফুল বিছানো নয়। এখানে আসে পরীক্ষা, আসে বাধা। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
"মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরও পরীক্ষা করেছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী এবং অবশ্যই জেনে নেবেন কারা মিথ্যাবাদী।" (সূরা আল-আনকাবূত: ২-৩)
এই পরীক্ষাই বিশ্বাসকে খাঁটি সোনায় পরিণত করে। ইতিহাসের পাতা এমন অসংখ্য মানুষের গল্পে ভরা, যারা ঈমানের জন্য অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করেছেন, কিন্তু এক চুলও নিজেদের বিশ্বাস থেকে সরে আসেননি।
হযরত বিলাল ইবনে রাবাহ (রাঃ) ছিলেন একজন হাবশি ক্রীতদাস। ইসলাম গ্রহণ করার ‘অপরাধে’ তাঁর মনিব উমাইয়া ইবনে খালাফ তাঁকে মধ্যাহ্নের তপ্ত বালিতে শুইয়ে দিত। বুকের ওপর চাপিয়ে দিত এক বিশাল ভারি পাথর, যা তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস প্রায় বন্ধ করে দিত। উদ্দেশ্য ছিল একটাইযাতে তিনি ইসলাম ত্যাগ করে লাত ও উজ্জার নাম নেন। কিন্তু যন্ত্রণায় নীল হয়ে যাওয়া ঠোঁট দিয়ে বিলালের মুখ থেকে কেবল একটি শব্দই বের হতো"আহাদুন আহাদ" (তিনি এক, তিনি অদ্বিতীয়)।
তাঁর শারীরিক কষ্ট ছিল তীব্র, কিন্তু তাঁর ঈমানের শক্তি ছিল তার চেয়েও হাজার গুণ বেশি। তাঁর কাছে এই বিশ্বাসই ছিল একমাত্র সত্য, একমাত্র বাস্তবতা। এই বিশ্বাস তাঁকে এমন এক মানসিক স্তরে উন্নীত করেছিল, যেখানে জাগতিক কোনো কষ্টই আর তাঁকে পরাস্ত করতে পারত না। তিনি জানতেন, এই দেহের কষ্ট একদিন শেষ হবে, কিন্তু রবের প্রতি ঈমানের পুরস্কার অনন্তকালের। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, ঈমান যখন অন্তরের গভীরে প্রোথিত হয়, তখন তা মানুষকে এক অজেয় শক্তি দান করে।
হযরত খাব্বাব ইবনুল আরাত (রাঃ) ছিলেন একজন কামার। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। কাফিররা লোহা গরম করে, সেই জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর তাঁকে চিৎ করে শুইয়ে দিত। তাঁর পিঠের চর্বি গলে সেই আগুন নিভে যেত। অনেক দিন পর তিনি যখন রাসূল (সাঃ)-এর কাছে এসে নিজের পিঠ দেখালেন, তখন দেখা গেল তাঁর পিঠের চামড়া শ্বেতী রোগীর মতো সাদা হয়ে গেছে।
একবার তিনি ও অন্য সাহাবীরা রাসূল (সাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, "হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন না? আমাদের জন্য দোয়া করবেন না?" একথা শুনে রাসূল (সাঃ)-এর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেল। তিনি বললেন, "তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের এমন অবস্থাও হয়েছে যে, একজনকে ধরে এনে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে দেওয়া হতো, তারপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে তাকে দুই টুকরো করে ফেলা হতো। লোহার চিরুনি দিয়ে তার শরীরের মাংস ও হাড় আলাদা করে ফেলা হতো। কিন্তু এতকিছুর পরেও তা তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না।" (সহীহ বুখারী)
এই ঘটনা আমাদের শেখায়, ঈমানের পথ কতটা কঠিন হতে পারে এবং সেই পথে সাহাবীদের ধৈর্য ও সহনশীলতা কোন স্তরের ছিল।
ইসলামের জন্য প্রথম যে নারী নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তিনি হলেন হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রাঃ)। তিনি, তাঁর স্বামী ইয়াসির (রাঃ) এবং পুত্র আম্মার (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করার পর কাফিরদের, বিশেষ করে আবু জাহলের, চরম আক্রোশের শিকার হন। তাঁদেরকে মক্কার উত্তপ্ত মরুতে নির্যাতন করা হতো। একদিন রাসূল (সাঃ) তাঁদের এই অবস্থা দেখে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেছিলেন, "হে ইয়াসিরের পরিবার, ধৈর্য ধরো! তোমাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি।"
এক পর্যায়ে আবু জাহল হযরত সুমাইয়া (রাঃ)-কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং ইসলাম ত্যাগ করতে চাপ দেয়। কিন্তু এই মহীয়সী নারী ছিলেন ঈমানের ওপর অটল। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে আবু জাহল তাঁর লজ্জাস্থানে বর্শা দিয়ে আঘাত করে, এবং তিনি শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। তিনি হলেন ইসলামের প্রথম শহীদ। তাঁর রক্ত এই বার্তা দিয়ে গেছে যে, ঈমানের জন্য জীবন দেওয়া যায়, কিন্তু ঈমান ছাড়া যায় না।
হয়তো আমাদের বিলালের (রাঃ) বা খাব্বাবের (রাঃ) মতো শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় না, কিন্তু আমাদের সংগ্রামগুলোও কম কঠিন নয়। আজকের দিনের ‘উত্তপ্ত বালি’ হলো ক্যারিয়ারের তীব্র প্রতিযোগিতা: যেখানে সফল হওয়ার জন্য অনৈতিক পথে পা বাড়ানোর প্রলোভন আসে।
সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ: যেখানে অন্যের বানানো সুখী জীবনের ছবির সাথে নিজের বাস্তবতাকে তুলনা করে আমরা হতাশায় ভুগি।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা: যা আমাদের মনে সার্বক্ষণিক উদ্বেগ তৈরি করে।
সম্পর্কের ভাঙন ও একাকীত্ব: যা আমাদের ভেতর থেকে নিঃস্ব করে দেয়।
এই আধুনিক সংকটগুলোর মাঝে ঈমান কীভাবে আমাদের সাহায্য করে? আল্লাহ বলেন:
"যারা ঈমান আনে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তি লাভ করে। জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।" (সূরা আর-রাদ: ২৮)
১. মানসিক স্থিতিশীলতা: যখন একজন মানুষ বিশ্বাস করে যে তার জীবনের ভালো-মন্দ সবকিছুই এক পরম করুণাময় সত্তার পরিকল্পনার অংশ, তখন সে সহজে ভেঙে পড়ে না। সে জানে, এই কষ্ট সাময়িক এবং এর পেছনেও কোনো কল্যাণ নিহিত আছে। এই বিশ্বাস তাকে ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটির মতো মানসিক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
২. সঠিক পথের দিশা: ঈমানদার ব্যক্তি জানে যে, তাকে তার প্রতিটি কাজের জন্য স্রষ্টার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এই বিশ্বাস তাকে সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও নৈতিকতার পথে চলতে উৎসাহিত করে। হাজারো প্রলোভনের মাঝেও সে ভুল পথ বেছে নেয় না, কারণ তার কাছে পরকালীন সাফল্য জাগতিক সাফল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।
৩. কৃতজ্ঞতার শক্তি: ঈমান আমাদের শেখায়, যা হারিয়ে গেছে তার জন্য শোক করার চেয়ে যা আছে তার জন্য কৃতজ্ঞ হতে। একজন বিশ্বাসী তার ছোট ছোট প্রাপ্তিগুলোর জন্যও স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তার জীবনে প্রশান্তি নিয়ে আসে।
৪. প্রার্থনার আশ্রয়: দিনে পাঁচবার যখন একজন মুসলিম পৃথিবীর সব ব্যস্ততা ভুলে তার রবের সামনে দাঁড়ায়, তখন সে এক অবিশ্বাস্য মানসিক শক্তি লাভ করে। নিজের সব দুঃখ, কষ্ট ও আর্তি সরাসরি স্রষ্টার কাছে পেশ করার মাধ্যমে সে নিজেকে ভারমুক্ত অনুভব করে। এই প্রার্থনা হলো আত্মার জন্য এক থেরাপির মতো।
কীভাবে ঈমানকে দৃঢ় রাখবেন?
ঈমান একটি গাছের মতো। এর নিয়মিত যত্ন প্রয়োজন। কয়েকটি উপায়ে আমরা আমাদের ঈমানের বৃক্ষকে সতেজ ও শক্তিশালী রাখতে পারি:
জ্ঞানার্জন: ইসলাম ও কুরআনকে না বুঝে শুধু অন্ধভাবে অনুসরণ করলে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। কুরআনকে অর্থসহ পড়ুন, মহানবী (সাঃ)-এর জীবনকে জানুন। জ্ঞান আপনার বিশ্বাসকে যুক্তির ভিত্তিতে শক্তিশালী করবে।
আল্লাহর স্মরণ (যিকর): সারাদিনের কাজের ফাঁকে ফাঁকে আল্লাহকে স্মরণ করুন। ছোট ছোট তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার) পাঠ করুন। এই অভ্যাস আপনার মনকে সর্বদা স্রষ্টার সাথে সংযুক্ত রাখবে।
দোয়া ও তাওয়াক্কুল: নিজের সব প্রয়োজন ও আকুতি দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পেশ করুন এবং ফলাফলের জন্য তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা (তাওয়াক্কুল) রাখুন। রাসূল (সাঃ) দোয়া করতেন, "হে অন্তর পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর দৃঢ় রাখুন।"
সৎ সঙ্গ: এমন মানুষদের সাথে চলুন, যারা আপনাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ভালো বন্ধু এবং একটি ইতিবাচক সামাজিক পরিমণ্ডল ঈমানকে সজীব রাখতে সাহায্য করে।
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা: বিপদে ধৈর্য ধারণ করুন এবং সুখে-শান্তিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। এই দুটি গুণ ঈমানের ভিত্তি।
এক আল্লাহর প্রতি ঈমান কোনো দুর্বল বা পলায়নপর মানুষের আশ্রয় নয়। বরং এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষদের সবচেয়ে বড় শক্তি। এটি এমন এক মানসিক আশ্রয়, যা কোনোদিন কেড়ে নেওয়া যায় না। এটি এমন এক সম্পর্ক, যা কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না।
জীবনের সমুদ্রে যখনই ঝড় উঠবে, যখনই নিজেকে একা ও অসহায় মনে হবে, তখন কান পেতে শুনুন। আপনার আত্মার গভীর থেকে ভেসে আসা সেই চিরচেনা ডাক সেই এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ডাক। সেই ডাকে সাড়া দিন, তাঁর দড়িকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরুন। দেখবেন, সবচেয়ে ভয়াল ঢেউটিও আপনার বিশ্বাসের দুর্গে ধাক্কা খেয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। কারণ যে নৌকার মাঝি স্বয়ং আল্লাহ, সে নৌকা কখনো ডোবে না।
এক আল্লাহ, ঈমানের দৃঢ়তা, ইসলামিক অনুপ্রেরণা, মানসিক শান্তি, জীবন সংগ্রাম, ইসলাম।
🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।
শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com