শীতের কুয়াশা নেমে এলে গ্রামবাংলার অন্ধকার গলিগুলোয় ধীরে ধীরে জমে ওঠে ক্ষুধার শব্দ, যে শব্দ চোখে দেখা যায় না, কিন্তু কানে বাজে প্রতিটি মানবিক হৃদয়ে। আমাদের শহরের উজ্জ্বল আলোর নিচে, ফাস্টফুডের গন্ধে ভরা রেস্তোরাঁর ভিড়ে হয়তো সেটা শোনা যায় না; তবুও সেই শব্দ থামে না। এক কেজি ভাত যা আমাদের অনেকের কাছে দৈনন্দিন চায়ের কাপের মতোই সহজলভ্য কারও কাছে তা দিনের একমাত্র স্বপ্ন। কিন্তু শুধু ভাত দিলে কি ক্ষুধা মেটে? ক্ষুধা মেটে আস্থায়, নিরাপত্তায়, জানার অনুভূতিতে যে, এই পৃথিবীতে তাকে ভুলে যায়নি কেউ।
এক কেজি ভাত আর এক মুঠো আস্থায় দু’টো মিলেই গড়ে তোলে মানুষের মর্যাদা, বেঁচে থাকার অর্থ।
গাঁয়ের এক কোণে রুস্তম মিয়া নামে এক গরিব কৃষক থাকত। তার ছোট্ট একচিলতে উঠোন আর খড়ের ছাউনি দেওয়া নড়বড়ে ঘর, এটাই ছিল তার দুনিয়া। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই তার দিন শুরু হতো। কাকডাকা ভোরে ঘুম ভাঙত পাখির কিচিরমিচিরে, আর তারপরই তার প্রথম কাজ ছিল বাজারের পথে হাঁটা। কাঁধের উপর পুরনো একটা চটপটা ঝোলা, যার মধ্যে থাকে তার সারাদিনের স্বপ্ন আর পরিবারের একবেলার আহারের জন্য প্রয়োজনীয় সামান্য কিছু পুঁজি। এই পুঁজি বলতে দুটো জীর্ণ নোট আর কিছু খুচরো পয়সা, যা তার সারা দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির ফসল।
রুস্তম মিয়ার সংসারটা খুব বড় নয় সে, তার স্ত্রী ফতেমা, আর তাদের একমাত্র ছেলে, সাত বছরের ছোট্ট রহিম। এই তিনজনের জন্যই তার জীবন, তার সংগ্রাম। প্রতিদিন সকালে সে বাজারে যেত ১ কেজি চাল কিনে আনতে। এই ১ কেজি চাল তাদের কাছে শুধু চাল নয়, এটা যেন তাদের টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন। সকালে ভাত রান্না হলে ফতেমা একটা ছোট বাটিতে রুস্তমকে দিত, বাকিটা ভাগ করে খেত ফতেমা আর রহিম। দুপুরে বা রাতে খাওয়ার বিলাসিতা তাদের ছিল না। তাদের কাছে দু'বেলা পেট ভরে খাওয়াটা ছিল অনেকটা স্বপ্ন দেখার মতো। রুস্তমের প্রতিটি চালের দানার মূল্য ছিল তার পরিশ্রম আর ঘামে ভেজা জীবনের প্রতিচ্ছবি।
সেদিনও রুস্তম মিয়া হাসিমুখে চাল কিনে বাড়ি ফিরল। চালের বস্তাটা মাটির ওপর নামিয়ে সে যখন কলতলায় হাত-মুখ ধুতে গেল, তখন ফতেমা চালের বস্তাটা হাতে নিয়েই কেমন যেন থমকে গেল। ফতেমার হাত অভিজ্ঞ, সংসারের অভাবের তাড়নায় সে চাল মেপে মেপে রান্না করতে শিখেছে। সে জানে, এক কেজি চালে কতটা পরিমাণ হয়, ক’টা ভাত ফোটে, আর কতটুকু খেলে তিনজনের একবেলা পেট ভরে।
ফতেমা চালের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল, “এই চাল তো কম মনে হচ্ছে গো, মিয়া! আগে তিনবেলা চলত, আজ একবেলাও চলবে না বলে মনে হচ্ছে!” তার কণ্ঠে স্পষ্ট উদ্বেগের ছাপ। রুস্তম মিয়া ফিরে এসে চালের দিকে তাকাল। তার সরল মনে কোনোরকম সন্দেহ উঁকি দিল না। তার বিশ্বাস ছিল, দোকানদার যা দিচ্ছে, তা-ই ঠিক। সে শুধু ফতেমার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই অভাবের সংসারে, সামান্য চাল কম হওয়া মানে আরও বেশি কষ্ট, আরও বেশি ক্ষুধা।
রুস্তম মিয়া আর কিছু বলল না। সারাদিন তার মনে এই কথাটা ঘুরপাক খেতে থাকল। রাতে ঘুমের মধ্যেও যেন তার কানে ফতেমার কথা বাজছিল, ‘চাল কম মনে হচ্ছে!’ পরের দিন সকালে, সে যখন ক্ষেতে যাচ্ছিল, তার নজর পড়ল পাশের বাড়ির এক হাতপাখা বিক্রেতা, মফিজ মিয়ার উপর। মফিজ মিয়ার হাতে একটা ছোট ডিজিটাল মাপার যন্ত্র। রুস্তম মিয়া দ্বিধাগ্রস্ত পায়ে মফিজ মিয়ার কাছে গিয়ে মিনতি করে বলল, “ভাই, একটা উপকার করবেন? আপনার ওই ওজন মাপার যন্ত্রটা কি আমাকে একটুক্ষণের জন্য ধার দেবেন?” মফিজ মিয়া কিছু জিজ্ঞেস না করেই যন্ত্রটা রুস্তমের হাতে তুলে দিল। রুস্তম মিয়া নিঃশব্দে সেটা নিয়ে বাজারের দিকে হাঁটা দিল।
বাজারে পৌঁছে রুস্তম মিয়া সেই পরিচিত দোকানটায় গেল। দোকানদার, কাদির মিয়া, রুস্তমকে দেখে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করল, “কী মিয়া সাহেব, আজ কী নেবেন?” রুস্তম মিয়া গতদিনের মতোই ১ কেজি চাল নিতে বলল। কাদির মিয়া হাসিমুখে চাল মেপে দিল। রুস্তম মিয়া চালের বস্তাটা হাতে নিয়েই হঠাৎ করে পকেট থেকে মফিজ মিয়ার কাছ থেকে ধার করা মাপার যন্ত্রটা বের করল।
দোকানির সামনেই রুস্তম মিয়া বলল, “ভাই, একটু মাপ দেখে নিই, কিছু মনে কইরেন না।” তার কণ্ঠস্বর ছিল শান্ত, কিন্তু দৃঢ়। সে চালের বস্তাটা মাপার যন্ত্রের উপর রাখতেই ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে উঠল ওজন: ৮৫০ গ্রাম।
দোকানির মুখ মুহূর্তেই লাল হয়ে গেল! সে এমন অপ্রস্তুত হলো যে কী বলবে বুঝতে পারল না। তার চেহারায় স্পষ্ট ধরা পড়ল অপরাধবোধ আর লজ্জার ছাপ।
কাদির মিয়া আমতা আমতা করে বলল, “ভাই, ভুল হয়ে গেছে, মাফ কইরেন! আসলে তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে… মাপটা ঠিক পড়েনি।” তার কথায় কোনো জোর ছিল না, কেবল মিনতি আর অপরাধ ঢাকতে চাওয়ার অক্ষম চেষ্টা।
রুস্তম মিয়া কিছু বলল না। তার মুখে কোনো রাগ বা ক্ষোভের চিহ্ন ছিল না। সে শুধু মাপার যন্ত্রটা পকেটে রেখে চালের বস্তাটা কাঁধে তুলে নিল। চলে যেতে যেতে কেবল একটি বাক্য উচ্চারণ করল, যা কাদিরের কানে নয়, যেন তার বিবেকের উপর হাতুড়ির মতো আঘাত হানল:
এই ছোট্ট বাক্যটি, যা রুস্তম মিয়া কোনো উচ্চস্বর, কোনো চিৎকারের মাধ্যমে বলেনি, বরং অত্যন্ত শান্তভাবে উচ্চারণ করেছিল, তা যেন মহাকালের এক কঠিন সত্যকে উন্মোচন করে দিল। এটা শুধু রুস্তম মিয়ার ব্যক্তিগত গল্প নয়; এটা হাজারো রুস্তম মিয়ার গল্প, যারা প্রতিনিয়ত ঠকে যাচ্ছে, যাদের অধিকার প্রতিনিয়ত খর্ব হচ্ছে শুধু পরিমাপের অভাবে।
রুস্তম মিয়াদের এই সরল গল্পটা আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরে এক ভয়ংকর সত্য। পরিমাপের অভাব শুধু ওজনে কম হওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এর ব্যাপ্তি অনেক গভীর। যখন সমাজে পরিমাপের স্বচ্ছতা থাকে না, তখন তা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতিই করে না, মানুষের বিশ্বাস, আত্মমর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিমূলকেও নাড়িয়ে দেয়।
১. জ্বালানি তেলের খেলাপ:
ধরুন, আপনি আপনার বাইকে বা গাড়িতে তেল ভরতে গেছেন। মিটার দেখছে লিটার, কিন্তু আসলে কি আপনি ঠিক ততটুকু তেল পাচ্ছেন? দেশের আনাচে-কানাচে অনেক পাম্পেই এই কারচুপি ঘটে থাকে। যখন আপনি দশ লিটার তেলের জন্য টাকা দিচ্ছেন, তখন হয়তো আপনি পাচ্ছেন সাড়ে নয় লিটার। ছোট ছোট এই চুরিগুলো দিনের শেষে কোটি কোটি টাকার মুনাফা এনে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে, আর আপনার মতো হাজার হাজার রুস্তম মিয়ারা নীরব শোষণের শিকার হয়। এই পরিমাপের ত্রুটি শুধুমাত্র আপনার পকেট কাটে না, আপনার যাতায়াতের সময়ও প্রভাবিত করে, এবং আপনার দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটায়।
২. পোশাকের দোকানে কাপড়ের কারচুপি:
আজকাল অনেক টেইলার্স বা পোশাকের দোকানে দেখা যায়, আপনি এক মাপের কাপড় কিনতে গেছেন, তারা আপনাকে কম দিয়ে বেশি দাম নিচ্ছে। "দু'গজ" বলে হয়তো আপনাকে দেওয়া হচ্ছে এক ফুট কম। সাধারণ মানুষ, যারা মাপ সম্পর্কে খুব একটা ওয়াকিবহাল নন, তারা সহজেই এর শিকার হন। বিয়ে-শাদির জন্য যখন মোটা অঙ্কের বাজেট নিয়ে কাপড় কেনা হয়, তখন এই সামান্য কম কাপড়ই অনেক বড় লোকসানে পরিণত হয়। এই লুকানো ঠকানো শুধু পণ্যের মূল্যেই প্রভাব ফেলে না, বরং ক্রেতার আস্থা ভঙ্গ করে এবং ব্যবসায়িক সম্পর্কের স্বচ্ছতা নষ্ট করে।
৩. নির্মাণকাজে মজুরির বঞ্চনা:
গ্রামাঞ্চলে দিনমজুরদের ক্ষেত্রে এই পরিমাপের অভাব এক করুণ বাস্তবতা। একজন শ্রমিক হয়তো দিনের পর দিন রোদ-বৃষ্টিতে কাজ করে, কিন্তু তার কাজের পরিমাপ ঠিকমতো করা হয় না। যে কাজগুলো সে করেছে, তার সঠিক মূল্যায়ন না করে তাকে কম মজুরি দেওয়া হয়। "আজ তোদের কাজের গতি কম ছিল," বা "তোরা এতটুকু কাজ করেছিস?" এমন অজুহাতে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হয়। এই ধরনের বঞ্চনা সরাসরি মানুষের জীবন-জীবিকায় আঘাত হানে এবং শ্রমিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলে।
৪. কৃষি পণ্যের ওজন সমস্যা:
কৃষি বাজারে কৃষকদের দুর্দশা আরও ভয়াবহ। একজন কৃষক কষ্ট করে ফসল ফলায়, কিন্তু যখন সে বাজারে সেই ফসল বিক্রি করতে যায়, তখন ওজন মাপার সময় তাকে ঠকানো হয়। ১০০ কেজি ধানের জন্য তাকে হয়তো ৯৫ কেজির দাম দেওয়া হয়। এই ৫ কেজির পার্থক্য কৃষকের সারা বছরের পরিশ্রমের ফসল থেকে অনেকটাই কেড়ে নেয়। আধুনিক ডিজিটাল মাপার যন্ত্র ব্যবহার না করে পুরনো ও ভুল কাঁটা বা পাথর ব্যবহার করে এই কারচুপি করা হয়, যেখানে কৃষকের পক্ষে প্রতিবাদ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
রুস্তম মিয়ার মতো সাধারণ মানুষদের কাছে এই পরিমাপের স্বচ্ছতা তাই শুধু একটি বাণিজ্যিক দিক নয়, এটি তাদের মৌলিক অধিকার এবং মর্যাদার প্রশ্ন। যখন মাপজোকে কারচুপি হয়, তখন কেবল পণ্যই কমে যায় না, মানুষের পারস্পরিক বিশ্বাসটাও কমে যায়। যে সমাজে বিশ্বাস নেই, সে সমাজে কোনো সম্পর্কই টেকসই হতে পারে না, তা সে ব্যবসায়িক হোক বা সামাজিক।
একজন দোকানদার যখন ৮৫০ গ্রাম চাল দিয়ে ১ কেজির দাম নেয়, তখন সে শুধু রুস্তম মিয়ার কাছ থেকে টাকা চুরি করে না, সে রুস্তম মিয়ার বিশ্বাসকে চুরি করে। সে চুরি করে রুস্তম মিয়ার সরলতাকে, তার আত্মমর্যাদাকে। এই ছোট ছোট চুরিগুলো সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়, আর ধীরে ধীরে তা এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করে যেখানে কেউ কাউকে আর বিশ্বাস করতে চায় না।
সমাজ যখন পরিমাপহীনতার জালে আটকা পড়ে, তখন সেখানে জবাবদিহিতাও হারিয়ে যায়। কাদির মিয়ার মতো দোকানদাররা জানে যে, সাধারণ মানুষের কাছে মাপার যন্ত্র নেই, তাদের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা সীমিত। তাই তারা নির্ভয়ে এই কারচুপি করে যায়। এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা সাধারণ মানুষের সচেতনতা, সরকারের কঠোর নজরদারি, এবং একটি দৃঢ় আইনি কাঠামো।
রুস্তম মিয়ার কাজটি ছিল একটি নীরব বিপ্লব। সে কোনো গন্ডগোল করেনি, উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করেনি। সে শুধু একটি মাপার যন্ত্র এনে সত্যটা উন্মোচন করেছে। তার এই কাজটি দেখিয়ে দিয়েছে যে, জ্ঞান ও সচেতনতা কতটা শক্তিশালী হতে পারে। যখন একজন সাধারণ মানুষ তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় এবং তা প্রমাণ করার সাহস দেখায়, তখন অসাধু ব্যবসায়ীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
রুস্তম মিয়া হয়তো শিক্ষিত ছিল না, কিন্তু তার কাছে ছিল জীবনের নির্মম অভিজ্ঞতা আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস। সে জানত, এই সামান্য ৮৫০ গ্রাম চাল তার পরিবারের মুখের খাবার থেকে কতটা কেড়ে নিচ্ছে। তাই সে ধার করে হলেও একটা যন্ত্র এনেছে, যা তার নীরব প্রতিবাদকে শক্তি দিয়েছে। তার এই কাজটি অন্যান্য গরিব কৃষকদের মনেও আশা জাগিয়েছে, যারা এতদিন মুখ বুঁজে সব সহ্য করে গেছে।
আজকের ডিজিটাল যুগেও এই পরিমাপের সমস্যা প্রকট। ইন্টারনেটের গতি, মোবাইল ডেটার ব্যবহার, বিদ্যুতের বিল প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিমাপের স্বচ্ছতা জরুরি। যখন আপনি ১ জিবি ডেটার জন্য টাকা দেন, তখন কি আপনি সত্যিই ১ জিবি ডেটা পান, নাকি আপনার ডেটা দ্রুত শেষ হয়ে যায়? যখন আপনি বিদ্যুতের বিল দেখেন, তখন কি আপনার মনে হয়, মিটার রিডিং ঠিক আছে? এসবই পরিমাপের অদৃশ্য হাতছানি, যা আমাদের অজান্তেই ঠকিয়ে যাচ্ছে।
রুস্তম মিয়ার গল্পটি তাই কেবল একজন গরিব কৃষকের গল্প নয়, এটি ন্যায়বিচার, সততা এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের গল্প। এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পরিমাপ শুধু সংখ্যা বা ওজন নয়, এটি বিশ্বাস, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রতীক। আর যখন পরিমাপ না থাকে, তখন সত্যিই গরিবের অধিকার হারিয়ে যায়, আর সমাজ ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়।
এই সমস্যার সমাধান এককভাবে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন বহুমুখী পদক্ষেপ:
জনসচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষকে পরিমাপের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝানো এবং তাদের ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো এ বিষয়ে প্রচারণা চালাতে পারে।
সহজলভ্য পরিমাপ যন্ত্র: ছোট ছোট ডিজিটাল মাপার যন্ত্রের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, যাতে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনে নিজেরা পরিমাপ যাচাই করতে পারে।
কঠোর আইন প্রয়োগ: অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী করা।
প্রযুক্তিগত সমাধান: আধুনিক ডিজিটাল পরিমাপ যন্ত্রের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং নিয়মিতভাবে সেগুলোর মান যাচাই করা।
রুস্তম মিয়ার মতো মানুষেরা যখন সাহসী পদক্ষেপ নেয়, তখনই সমাজে পরিবর্তনের সূচনা হয়। তার নীরব প্রতিবাদ কেবল কাদির মিয়াকে নয়, আরও অনেক অসাধু ব্যবসায়ীকে হয়তো ভাবিয়েছে। পরিমাপের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা মানে শুধু অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা নয়, মানুষের বিশ্বাস আর আত্মমর্যাদাকে ফিরিয়ে আনা। এই গল্পের শিক্ষাই হোক আমাদের সমাজের পথপ্রদর্শক, যেখানে পরিমাপের অভাবে আর কোনো গরিবের অধিকার হারিয়ে যাবে না।
আমরা যারা এই দেশের নাগরিক, আমরা কি পারি না ক্ষুধার শব্দটাকে নিঃশব্দে মিলিয়ে দিতে? হয়তো আমাদের পকেটের সামান্য খরচ বাঁচিয়ে আমরা একজন মানুষের রাতের খাবার জোগাতে পারি, কিন্তু তার চেয়েও বেশি আমরা তাকে ফিরিয়ে দিতে পারি বিশ্বাস, যে সমাজ এখনও মানুষের জন্য দাঁড়াতে জানে। আজ যদি আমরা এক কেজি ভাত আর এক মুঠো আস্থা একসাথে পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে আগামীকাল হয়তো এই ভূখণ্ডের শিশুরা ক্ষুধার ইতিহাস বইয়ে পড়বে, বাস্তবে নয়।
এই আহ্বান শুধু দান নয়, এটা এক প্রতিজ্ঞা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, মানবতার পাশে দাঁড়ানোর। আসুন, আমরা প্রত্যেকে সেই প্রতিজ্ঞার অংশীদার হই।
🥺
এই ছোট্ট ঘটনাই বলে দেয় মেট্রোলজি মানে শুধু ওজন নয়, এটা হলো আস্থা, ন্যায্যতা আর মানুষের অধিকার।
পরিমাপ সঠিক না হলে
❌ গরিব বঞ্চিত হয়
❌ রোগী ভুল ওষুধে আক্রান্ত হয়
❌ ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়
❌ বিজ্ঞান দাঁড়ায় ভুল ভিত্তির উপর
🌐 তাই এবারের প্রতিপাদ্য ‘সর্বকালেই পরিমাপ সকলের জন্য’ বলছে—
✔️ সময় যাই হোক,
✔️ প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক,
সঠিক পরিমাপ সব মানুষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
📣 আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই।
👉 প্রতিটি মাপে চাই ন্যায্যতা
👉 প্রতিটি লেনদেনে চাই নির্ভুলতা
👉 প্রতিটি পদক্ষেপে চাই সঠিক তথ্য
কারণ, একটি সঠিক পরিমাপ বদলে দিতে পারে হাজারো জীবনের গতি।
আমরা ভাবি, “মাত্র দেড়শো গ্রাম চাল কম তাতেই বা কী এমন?” কিন্তু এই ‘মাত্র’ শব্দটাই গরিবের ঘরে ক্ষুধার দায়ী হয়। রুস্তম মিয়ার মতো কত মানুষ প্রতিদিন আমাদের চারপাশে ওজনের দাঁড়িপাল্লায়, মজুরির খাতায়, বা ন্যায্যমূল্যের দরে ঠকছে কেউ খবর রাখি না।
আপনি আমি হয়তো তিনবেলার খাবার নিয়ে কখনো ভাবি না, কিন্তু রুস্তম মিয়ার জন্য প্রতিটি দানা চাল হিসেবের বিষয়।
ন্যায্য ওজন, ন্যায্য দাম এ শুধু বাণিজ্যের শর্ত নয়, এটি মানুষের অধিকার।
আজ থেকে আপনি যখন বাজারে যাবেন, দাঁড়িপাল্লার দিকে একবার তাকান। দোকানিকে বলুন"মাপটা ঠিক আছে তো?" কারণ আপনার একটুখানি সতর্কতা হয়তো কারও ঘরে একবেলার ভাত হয়ে পৌঁছাবে।
ন্যায়বিচার কেবল আদালতে হয় না হয় দাঁড়িপাল্লার দুই পাতে, হয় বাজারের গলিতে, হয় প্রতিটি সৎ ক্রেতার চোখে।
পরিমাপের ভারসাম্য রক্ষা মানে মানবতার ভারসাম্য রক্ষা।
📏 মেট্রোলজি মানে শুধু মাপজোক নয়, এটা বিশ্বাসের মাপকাঠি।
#MetrologyForAll
#WorldMetrologyDay2025
#MeasurementMatters
#পরিমাপে_আস্থা
#সঠিক_পরিমাপ_সবার_অধিকার
#২০মে_বিশ্ব_মেট্রোলজি_দিবস
🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।
শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com