দিনের গগনচুম্বী কোলাহল, হাজারো শব্দের স্রোত, আর ক্লান্তির বোঝা যখন ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়, তখন নেমে আসে রাত। রাত শুধু সময়ের একটি অংশ নয়, যেন এক অন্য জগতের প্রবেশদ্বার, যেখানে অচেনা অন্ধকারের ভেতর লুকিয়ে থাকে শান্তি, রহস্য আর অদেখা স্বপ্নের রাজ্য।
আলো নিভে এলে, শহরের রাস্তাগুলো হঠাৎ থেমে যায়, মানুষের কণ্ঠস্বর হারিয়ে যায় এক মৃদু স্তব্ধতায়। ঠিক তখনই অনুভব করা যায় রাতের নিজস্ব এক ভাষা আছে, যা দিনে শোনা যায় না। এই ভাষায় কথা বলে মন, জাগিয়ে তোলে হারিয়ে যাওয়া ভাবনা, খুলে দেয় আত্মার গোপন দরজা। দিনের ভিড়ে যে ‘আমি’ হারিয়ে যাই, রাতের নিস্তব্ধতায় সেই ‘আমি’ যেন ধীরে ধীরে ফিরে আসে নিজের কাছে।
এ ডাক সবার কানে পৌঁছায় না, কিন্তু যে শোনে, সে জানে এই ডাকে আছে এক গভীর প্রশান্তি, আছে সৃষ্টির অনন্ত সম্ভাবনা। অজানা রাতের আহ্বান তাই শুধু ঘুম পাড়ানোর নয়, বরং জাগিয়ে তোলারও।
রাতেরও এক নিজস্ব ভাষা আছে, এক অদ্ভুত হাতছানি আছে। দিনের কোলাহল, আলো আর যান্ত্রিকতা যখন ধীরে ধীরে স্তব্ধ হয়ে আসে, তখনই যেন রাত তার কালো ডানা মেলে ধরে আমাদের সামনে। এই রাত শুধু সময়ের একটি অংশ নয়, এটি যেন এক ভিন্ন জগত, এক অচেনা দিগন্ত, যেখানে আমরা নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করি। দিনের ব্যস্ততায় যে আমিটা হারিয়ে যায়, রাতের নীরবতায় সেই আমিটাই যেন আবার ফিরে আসে তার নিজের কাছে। এই যে 'অজানা রাতের আহ্বান', এ এক এমন ডাক যা হয়তো সবার কানে বাজে না, কিন্তু যার কানে বাজে, সে জানে এই ডাকে কত গভীর শান্তি, কত নির্জনতার আশ্রয় আর কত সৃষ্টির বীজ লুকিয়ে আছে।
দিন মানেই ছুটে চলা, অসংখ্য মানুষের ভিড়, নানা শব্দের কোলাহল। সূর্য ওঠার সাথে সাথেই শুরু হয় এক অন্তহীন প্রতিযোগিতা। কিন্তু রাত এলে সব যেন থেমে যায়। ব্যস্ত রাস্তাগুলো শান্ত হয়ে আসে, শহরের আলোকসজ্জা কিছুটা ম্লান হয়ে আসে তার তীব্রতা হারিয়ে, মানুষের উচ্চ কণ্ঠস্বর মিলিয়ে যায় মৃদুতায়। এই নীরবতা শুধু শব্দের অনুপস্থিতি নয়, এই নীরবতা যেন এক নতুন ভাষা। এই ভাষাতেই আমরা নিজেদের সাথে কথা বলি, নিজেদের প্রশ্ন করি, নিজেদের ভেতরের অপ্রকাশিত অনুভূতিগুলোকে ছুঁয়ে দেখি।
আমার মনে পড়ে, কত বিনিদ্র রজনী আমি কাটিয়েছি জানালার ধারে বসে। আকাশে তারাদের মিটিমিটি আলো, চাঁদনি রাতের মায়াবী পরিবেশ। এই দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যেন আমার মনটা শান্ত হয়ে আসতো। দিনের বেলায় যেসব দুশ্চিন্তা আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখতো, রাতের স্নিগ্ধতায় সেসব যেন কর্পূরের মতো উবে যেত। এই সময়টাতেই আমি আমার ভুলগুলো উপলব্ধি করতে পারতাম, নতুন করে পরিকল্পনা করতে পারতাম, এমনকি পুরনো আঘাতগুলোকেও একটু ভিন্ন চোখে দেখতে শিখতাম। রাত যেন আমার ভেতরের আয়না, যেখানে আমার প্রতিটি ভাবনা, প্রতিটি আবেগ স্পষ্ট হয়ে ধরা দিতো। দিনের কৃত্রিম হাসি আর ব্যস্ততার আড়ালে লুকিয়ে থাকা আসল আমিকে কেবল রাতের নীরবতাই চিনতে পারে।
এই নীরবতার একটা ক্ষমতা আছে। এটা আমাদের ভেতরের সৃজনশীলতাকে উসকে দেয়। দিনের আলোর নিচে আমরা কাজের চাপে থাকি, কিন্তু রাতের গভীরে আমাদের মন যেন মুক্ত পাখির মতো উড়তে থাকে। তখন আসে নতুন নতুন আইডিয়া, নতুন নতুন ভাবনা। বিখ্যাত লেখক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ অনেকেই রাতের আঁধারেই তাদের সেরা কাজগুলো করেছেন। রাতের নীরবতা, তার একাকীত্ব আর নির্জনতা আমাদের মস্তিষ্কে এমন এক তরঙ্গ তৈরি করে, যা দিনের বেলায় সম্ভব নয়। একারণেই হয়তো অনেক কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী রাত জাগতে ভালোবাসেন। তাদের সেরা সৃষ্টিগুলো রাতের এই নিরবতারই ফসল।
যদি কোনো শিল্পীকে জিজ্ঞাসা করেন, "আপনার সেরা কাজগুলো কখন করেছেন?", অনেকেই উত্তর দেবেন, "রাতের বেলায়।" রাত যেন সৃষ্টির এক গোপন আঁতুড়ঘর। দিনের আলোয় যখন জীবন তার সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, রাত তখন কেবল নীরবতা আর নিস্তব্ধতা নিয়ে আমাদের সামনে আসে। এই নির্জনতাই শিল্পী, লেখক, সুরকারদের জন্য সেরা অনুপ্রেরণা।
আমি নিজেও দেখেছি, দিনের বেলায় যখন শব্দের জঞ্জাল আমাকে ঘিরে থাকে, তখন মনে হাজারো ভাবনা এলেও সেগুলোকে গুছিয়ে প্রকাশ করা কঠিন হয়। কিন্তু রাত গভীর হলে, যখন বাইরের সব শব্দ মিলিয়ে যায়, তখন মস্তিষ্কের ভেতর যেন এক অন্যরকম ছন্দ তৈরি হয়। সেই ছন্দে ভর করেই শব্দগুলো একে একে সাজতে থাকে, চিত্রকল্পগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে, সুরগুলো আপনা-আপনিই কানে বাজতে থাকে। আমার লেখালেখির একটা বড় অংশ রাতের নিস্তব্ধতারই ফসল। অনেক সময় মনে হয়েছে, দিনের বেলা যে ভাবনাটা শুধু একটা অস্পষ্ট ধারণার মতো ছিল, রাতের আঁধারে সেটাই যেন পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে জীবনানন্দ দাশ কত শত শিল্পী, লেখক রাতের আঁধারেই নিজেদের সেরা সৃষ্টিগুলো উপহার দিয়েছেন। রাতের গভীরতা তাদের মনের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছে, যেখানে লুকিয়ে ছিল অবচেতন মনের অসংখ্য অনুভূতি আর ভাবনা। এই সৃষ্টিশীলতা শুধু শিল্পীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। একজন বিজ্ঞানীও হয়তো রাতের গভীরেই তার জটিল গবেষণার সূত্র খুঁজে পান, একজন শিক্ষার্থী হয়তো রাতের নিস্তব্ধতার সুযোগে কঠিন অঙ্ক কষতে বসেন, বা একজন সাধারণ মানুষও হয়তো রাতের গভীরে কোনো সমস্যার সমাধান খুঁজে পান যা দিনের বেলায় তার কাছে অসম্ভব মনে হতো। রাত যেন এক এমন পথ, যা আমাদের নিজেদের ভেতরের সবচেয়ে গভীর জায়গায় নিয়ে যায়।
রাতের শুধু শান্ত আর সৃজনশীল রূপই নেই, তার আছে এক অন্যরকম রহস্যময় দিক। এই অজানা রাতের আহ্বানে কখনো কখনো মিশে থাকে এক ধরণের ভয়, এক ধরণের রোমাঞ্চ। ছোটবেলায় ভূতের গল্প শুনতে শুনতে রাতকে আমরা আরও বেশি রহস্যময় করে তুলেছিলাম। সেই ভয়টা এখনো যেন কোথাও লুকিয়ে আছে আমাদের অবচেতনে।
রাতের নিস্তব্ধতা যখন চারদিক গ্রাস করে, তখন সামান্য একটা শব্দও অনেক বড় হয়ে কানে বাজে। অন্ধকারের আড়ালে কী লুকিয়ে আছে, এই চিন্তাই আমাদের মনে এক অজানা ভয়ের জন্ম দেয়। শহুরে জীবনে হয়তো এই ভয়টা ততটা তীব্র নয়, কিন্তু গ্রামের নিস্তব্ধ রাতে, যখন চারদিক অন্ধকার আর শেয়ালের ডাক শোনা যায়, তখন সত্যিই যেন গা ছমছম করে ওঠে। প্রাচীনকাল থেকেই রাতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য লোককথা, কিংবদন্তি আর অলৌকিক গল্প। রাতের গভীরে নাকি অশরীরী আত্মারা ঘুরে বেড়ায়, জিন-ভূতেরা তাদের আস্তানা থেকে বেরিয়ে আসে। এসব গল্পগুলো হয়তো নিছকই কল্পনা, কিন্তু রাতের রহস্যময়তা সেগুলোকে আরও বেশি জীবন্ত করে তোলে।
তবে এই ভয় শুধু নেতিবাচক নয়, অনেক সময় এই ভয়ও এক ধরণের রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেয়। রাতের বেলায় একা হেঁটে যাওয়ার সময় মনের ভেতরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়, তা এক ধরণের আলাদা অভিজ্ঞতা। আমাদের ভেতরের আদিম সত্তাটা যেন এই সময় জেগে ওঠে, যে সত্তাটা অন্ধকারকে ভয় পায় আবার অন্ধকারকে আবিষ্কারও করতে চায়। রাতের রহস্যময়তা আমাদের কল্পনাকে আরও বেশি উসকে দেয়, আমাদেরকে এমন সব বিষয় নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে যা দিনের বেলায় আমাদের মাথায় আসে না। তাই রাতের আহ্বান শুধু শান্তির বার্তা নিয়ে আসে না, সে নিয়ে আসে রহস্য আর এক অজানা রোমাঞ্চের হাতছানিও।
ভাবুন তো, রাতের নীরবতা যেমন আমাদের আত্মানুসন্ধানে সাহায্য করে, তেমনি এই রাতই আবার মানুষকে একত্রিত করে। দিনের বেলায় অফিসের মিটিং, কাজের চাপ, সামাজিক ব্যস্ততা এই সবকিছু আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। কিন্তু রাত গভীর হলে যখন সব কাজ শেষ হয়, তখন আমরা বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজনদের সাথে একত্রিত হই।
কত রাত কেটেছে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে! খোলা ছাদে বসে তারাদের নিচে গল্প করা, হাসাহাসি করা, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা। এই রাতগুলোই যেন আমাদের সম্পর্কের বাঁধনকে আরও মজবুত করে তোলে। রাতের আড্ডায় কোনো তাড়াহুড়ো থাকে না, কোনো কৃত্রিমতা থাকে না। দিনের আলোর সব মুখোশ খুলে ফেলে মানুষ তার আসল রূপে সামনে আসে। তখন মন খুলে কথা বলা যায়, নিজের দুঃখ-কষ্টগুলো ভাগ করে নেওয়া যায়, এমনকি গভীরতম স্বপ্নগুলোও অকপটে বলা যায়।
শহরের রাতের জীবনটাও কিন্তু কম আকর্ষণীয় নয়। রাতের নিওন আলোয় ঝলমলে শহরের রূপটাই যেন অন্যরকম। ক্যাফেগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা, রাস্তাঘাটে মানুষের হেঁটে চলা এই সবকিছুতেই যেন এক ধরণের ভিন্ন স্পন্দন থাকে। রাতের এই স্পন্দন মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসে, নতুন নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রেমিক-প্রেমিকারা রাতের নির্জনতাতেই একে অপরের আরও কাছে আসে, তাদের ভালোবাসা যেন রাতের স্নিগ্ধতায় আরও বেশি পূর্ণতা পায়। রাত যেন ভালোবাসার এক লুকানো বাগান, যেখানে সম্পর্কগুলো আরও সতেজ হয়ে ওঠে।
দিনের বেলায় সূর্য তার প্রখর আলো দিয়ে প্রকৃতিকে আলোকিত করে রাখে। কিন্তু রাত নামলে প্রকৃতির রূপটাই যেন বদলে যায়। চাঁদ আর তারার আলোয় ঝলমলে আকাশ, ঝিঁ ঝিঁ পোকার অবিরাম ডাক, দূর থেকে ভেসে আসা প্যাঁচার কূজন এই সবকিছুতেই যেন প্রকৃতির এক ভিন্ন সুর বেজে ওঠে।
আমার মনে আছে, একবার পাহাড়ের চূড়ায় ক্যাম্পিং করতে গিয়েছিলাম। সেদিন ছিল পূর্ণিমা রাত। মাথার ওপরে সুবিশাল আকাশ, অসংখ্য তারায় ঝলমল করছে। চাঁদের আলোয় চারপাশের পাহাড়গুলো রূপালী রঙ ধারণ করেছে। সে এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য! সেই রাতে আমি প্রকৃতির এক অন্যরকম রূপ দেখেছি। রাতের স্নিগ্ধ বাতাস, গাছের পাতার মর্মর শব্দ, সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত শান্তি আমার মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। মনে হচ্ছিল, যেন প্রকৃতির কোলে আমি নিজেকে পুরোপুরি সমর্পণ করে দিয়েছি। দিনের ব্যস্ততা, কোলাহল, কৃত্রিমতা সব যেন সেই রাতের নীরবতায় মিলিয়ে গিয়েছিল।
শুধু পাহাড়ে নয়, শহরের ছোট বাগান, এমনকি জানালার বাইরে দেখা গাছগুলোও রাতের আঁধারে এক ভিন্ন রূপ ধারণ করে। দিনের বেলায় তাদের সবুজ রঙ হয়তো সাধারণ মনে হয়, কিন্তু রাতের আঁধারে তাদের ছায়াগুলো যেন রহস্যময় হয়ে ওঠে। রাতের গন্ধটাও যেন অন্যরকম। বাতাসে ফুলের হালকা সুগন্ধ, মাটির সোঁদা গন্ধ সব মিলিয়ে এক নতুন ঘ্রাণ ইন্দ্রিয়কে সতেজ করে তোলে। নিশাচর পাখিরা তখন তাদের খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে, বাদুড়েরা উড়ে বেড়ায়। প্রকৃতির এই রাতের জীবনটা যেন আমাদের কাছে এক অজানা জগত। এই জগতকে আবিষ্কার করা এক অন্যরকম আনন্দের বিষয়।
আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে রাতের সাথে মিশে আছি। রাত আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের সবারই রাতের সাথে জড়িয়ে আছে অসংখ্য স্মৃতি, অসংখ্য গল্প।
আমার দাদাবাড়ি ছিল গ্রামে। সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না। সন্ধ্যায় হারিকেনের ক্ষীণ আলোয় পড়তে বসতাম। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঝিঁ ঝিঁ পোকার অবিরাম ডাক। কখনো কখনো শিয়াল ডাকতো। সেই অন্ধকার আর শব্দের মাঝে আমি যেন এক অন্যরকম জগত খুঁজে পেতাম। মনে হতো, এই অন্ধকারেই যেন লুকিয়ে আছে অসংখ্য রূপকথার চরিত্র।
কলেজ জীবনে বন্ধুদের সাথে সারা রাত জেগে পড়াশোনা করার স্মৃতি আজও অমলিন। পরীক্ষার আগে রাতের পর রাত জেগে গ্রুপ স্টাডি করা, চা খেতে খেতে মজার গল্প করা সেসব দিনগুলো রাতের আলো-আঁধারেই যেন আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয়।
আর প্রথম প্রেমের সেই রাতগুলো! হাতে হাত রেখে শহরের রাস্তায় হেঁটে চলা, নির্জন পার্কের বেঞ্চে বসে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা। রাতের তারাদের সাক্ষী রেখে কত শপথই না নেওয়া হয়েছে! সেই রাতগুলো ছিল আবেগের, ভালোবাসার, স্বপ্নের। দিনের আলোর ব্যস্ততায় যা প্রকাশ করা কঠিন, রাতের নীরবতায় সেটাই যেন অবলীলায় প্রকাশ পেত।
এমনকি দুঃখের রাতও আছে। যখন মন খারাপ থাকে, যখন কোনো প্রিয়জনকে হারানোর ব্যথা আমাকে আচ্ছন্ন করে, তখন রাতই আমার একমাত্র সঙ্গী হয়। নির্জন রাতের নীরবতা আমাকে নিজেকে খুঁজে নিতে সাহায্য করে, নিজের দুঃখগুলো নিয়ে একা একা ভাবতে সাহায্য করে। রাত যেন আমার নীরব কান্নাগুলোর একমাত্র সাক্ষী।
এই প্রতিটি অভিজ্ঞতাই রাতের ভিন্ন ভিন্ন রূপকে আমাদের সামনে তুলে ধরে। রাত শুধু এক সময় নয়, রাত যেন এক অনুভূতি, এক দীর্ঘশ্বাস, এক স্বপ্ন, এক আশ্রয়।
রাত কেবল দিনের বিপরীত দিক নয়, রাত নিজেই একটি সম্পূর্ণ সত্তা। এটি আমাদের আত্মানুসন্ধানের পথ খুলে দেয়, সৃষ্টিশীলতাকে উসকে দেয়, রহস্যের জাল বুনে আমাদের মনে রোমাঞ্চ জাগায়। আবার এই রাতই মানুষকে একত্রিত করে, প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে। আমাদের জীবনের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি অভিজ্ঞতার সাক্ষী এই রাত।
অজানা রাতের এই আহ্বান তাই চিরন্তন। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ এই রাতের রহস্যে মুগ্ধ হয়েছে, এর নীরবতাকে আশ্রয় করেছে, এর অন্ধকারে নতুন কিছুর জন্ম দিয়েছে। প্রতিটি মানুষই রাতের কোনো না কোনো রূপে নিজেকে খুঁজে পায়। কেউ রাতের নীরবতায় নিজের ভেতরের শান্তি খুঁজে পায়, কেউ তারার আলোয় ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে, আবার কেউ বা রাতের আঁধারে লুকিয়ে থাকা রহস্যের উন্মোচন করতে চায়।
এই রাত আমাদের শেখায়, জীবনের সবটুকু আলোতে থাকে না। কিছু গভীর সত্য, কিছু সুন্দর অনুভূতি, কিছু অনুপ্রেরণা হয়তো লুকিয়ে থাকে অন্ধকারের আড়ালে। তাই রাতের এই আহ্বানকে উপভোগ করুন, এর গভীরে প্রবেশ করুন। কে জানে, হয়তো এই অজানা রাতের আহ্বানেই আপনি নিজেকে আরও নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবেন।
আমরা প্রতিদিন ছুটে চলি আলো, শব্দ আর কাজের পেছনে এমন এক প্রতিযোগিতায়, যেখানে থামার সময় নেই, শ্বাস নেওয়ার ফুরসত নেই। অথচ রাত নেমে এলে প্রকৃতি যেন আমাদের হাতে এক সোনালি সুযোগ তুলে দেয় নিজেকে শোনার, ভেতরের সত্যটাকে চিনে নেওয়ার সুযোগ। এই সুযোগ আমরা কতবার হাতছাড়া করি কেবল ব্যস্ততার অজুহাতে!
আজকের এই লেখার লক্ষ্য শুধু রাতের সৌন্দর্য বর্ণনা নয়; বরং আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া রাতের নিস্তব্ধতা কেবল অন্ধকার নয়, এটি এক আয়না, যেখানে আপনি দেখতে পাবেন আপনার গভীরতম স্বপ্ন, ভুলে যাওয়া প্রতিজ্ঞা আর অনাবিষ্কৃত সৃজনশীলতার আলো।
আসুন, আমরা রাতকে কেবল ঘুমের সময় হিসেবে না দেখে, এক আত্ম-অনুসন্ধানের মঞ্চ হিসেবে দেখি। আসুন, রাতের নীরবতায় আমরা নিজেদের হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে খুঁজে বের করি, নতুন করে বাঁচার প্রতিজ্ঞা করি।
কারণ, দিনের আলো যতই উজ্জ্বল হোক না কেন জীবনের কিছু সত্য কেবল রাতের অন্ধকারেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রিয় পাঠক, অজানা রাতের এই যাত্রা কেবল লেখকের একার নয় এটি আমাদের সবার অভিজ্ঞতার, সবার অনুভূতির। আপনার জীবনের কোনো রাত কি এমন ছিল, যা আপনাকে বদলে দিয়েছে? এমন কোনো নীরব মুহূর্ত কি এসেছে, যা আপনার ভিতরে নতুন আলো জ্বালিয়েছে?
আপনার গল্প, আপনার অনুভূতি আমাদের সাথে ভাগ করে নিন। নিচের মন্তব্যে লিখুন আপনার সেই বিশেষ রাতের কথা। আর যদি মনে হয় এই লেখা কারো হৃদয় ছুঁতে পারে, তবে সেটি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে হয়তো আপনার শেয়ারই কারো জীবনে এনে দেবে নতুন অনুপ্রেরণা।
রাত, নীরবতা, আত্মানুসন্ধান, সৃষ্টিশীলতা, প্রকৃতি, রহস্য, মানবিক আবেগ, সম্পর্ক, রাতের সৌন্দর্য।


🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।
শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com