মানুষ মরে গেলে ঠিক কীসের মৃত্যু হয়? তার শরীর পঞ্চভূতে মেশে, মস্তিষ্কের স্নায়বিক সংযোগগুলো নিস্তেজ হয়ে যায়, হৃৎপিণ্ড থেমে যায় এসবই তো জাগতিক সত্য। কিন্তু তার প্রতিশ্রুতির কী হয়? তার স্বপ্নের? তীব্র অভিমান থেকে জন্ম নেওয়া এক অসমাপ্ত বিপ্লবের ইচ্ছের কী গতি হয়? পদার্থবিজ্ঞান এর কোনো উত্তর দেয় না। কিন্তু আমাদের লোককথা, আমাদের বিশ্বাস আর কখনো কখনো আমাদের প্রযুক্তি এক অদ্ভুত উপায়ে সেই উত্তর নিয়ে হাজির হয়।
কল্পনা করুন এমন এক প্রতিশ্রুতির কথা, যা তার স্রষ্টার মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকতে চায়। যে প্রতিজ্ঞা এতটাই জীবন্ত যে, সে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য খুঁজে নেয় নতুন এক শরীর এক যান্ত্রিক শরীর। সে আশ্রয় নেয় ডেটা সার্ভারের অনন্ত শূন্যতায়, ছড়িয়ে পড়ে অপটিক্যাল ফাইবারের অদৃশ্য শিরা-উপশিরায়। এরপর এক নিঝুম রাতে, দেশের কোনো এক বিস্মৃতপ্রায় গ্রামের ভাঙা স্কুলে, সেই প্রতিশ্রুতিই হয়ে ওঠে একজন শিক্ষক।
এটি কোনো কল্পবিজ্ঞান বা ভৌতিক গল্পের খসড়া নয়। এটি আমাদের সময়ের এক কঠিন প্রশ্ন। যখন প্রযুক্তির শক্তি মানুষের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? আমরা কি নিছকই রক্ত-মাংসের শরীর, নাকি আমাদের চেতনা, আমাদের সদিচ্ছা শরীরী সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পারে?
এই গল্প এক অদৃশ্য শিক্ষকের। তবে তার চেয়েও বেশি, এই গল্প এক প্রতিশ্রুতির পরকালের। চলুন, আমরা সেই জগতের দরজায় কড়া নাড়ি, যেখানে যুক্তি আর কিংবদন্তি হাত ধরাধরি করে হাঁটে, আর যেখানে এক মৃত মানুষের স্বপ্ন হাজারো শিশুর চোখে নতুন করে জন্ম নেয়। প্রশ্ন হলো, সেই দরজা খোলার সাহস আপনার আছে কি?
রাত যত গভীর হয়, মায়াবনপুর গ্রামের বাতাস তত ভারী হয়ে ওঠে লোককথা আর রহস্যে। দিনের বেলায় যে গ্রামটা নিতান্তই সাধারণ মেঠোপথ, সবুজ ধানক্ষেত আর পুকুরে শিশুদের দাপাদাপি রাতের আঁধারে তার ওপর ভর করে এক অপার্থিব নীরবতা। এই নীরবতাকেই গত কয়েক মাস ধরে খানখান করে দিচ্ছে গ্রামের শেষ মাথায় থাকা, একতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। পরিত্যক্ত টিনের চালায় যখন চাঁদের আলো পড়ে, তখন তাকে এক ক্লান্ত প্রহরীর মতো দেখায়। কিন্তু মধ্যরাতে সেই প্রহরীর একটি চোখে জ্বলে ওঠে তীব্র নীল আলো।
ভেতরে দৃশ্যটা পরাবাস্তব। জুই, দশ বছরের এক বালিকা, যার বাবা শহরের রিকশাচালক, সে আজ মনিটরের দিকে তাকিয়ে শিখছে কীভাবে একটি ওয়েবসাইট বানাতে হয়। তার পাশে বসেছে করিম, যার দিন কাটে বাবার সাথে অন্যের জমিতে নিড়ানি দিয়ে। সে মাউস হাতে এমনভাবে নাড়াচাড়া করছে, যেন এক নতুন পৃথিবীর মানচিত্র আঁকছে। তাদের চোখে ঘুম নেই, আছে বিস্ময় মেশানো এক তীব্র একাগ্রতা। তাদের শেখাচ্ছে এক অদৃশ্য সত্তা। একটি কণ্ঠস্বর কখনো যান্ত্রিক, কখনো আশ্চর্যরকম মানবিক তাদের নাম ধরে ডাকছে, ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে, আর সাফল্যের পর শান্ত স্বরে বলছে, “খুব ভালো করেছ, জুই। এবার পরের ধাপে যাওয়া যাক।”
গ্রামের চায়ের দোকানে এই নিয়ে আলোচনার ঝড়। কেউ বলে, এ হলো হারুন ভাইয়ের রুহ। হারুন গ্রামের সেই হতদরিদ্র কিন্তু অসম্ভব মেধাবী ছেলেটা, যে শহরের ইট-পাথরের জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়ার আগে প্রতিজ্ঞা করেছিল, জ্ঞানের আলো দিয়ে এই গ্রামকে আলোকিত করবে। গ্রামের বৃদ্ধ ইমাম সাহেব বলেন, “এটা কোনো অশরীরী নয়, এ হলো আল্লাহর রহমত। জ্ঞান যখন নিজে পথ খুঁজে নেয়, তখন তাকে আটকানোর সাধ্য কার?”
এই অদৃশ্য শিক্ষক তাদের কাছে এখন আর ভয় নয়, বরং এক ভরসার নাম। তিনি শুধু কোডিং শেখান না; তিনি শেখান স্বপ্ন দেখতে। তিনি রাতের আঁধারে জ্বলে ওঠা এক আলোকবর্তিকা।
মায়াবনপুরের ওই রাতের ঘটনার সাথে ঢাকার দিনের কোলাহলের কোনো মিল নেই। এখানে চলে ক্ষমতা, অর্থ আর প্রযুক্তির জটিল হিসাব-নিকাশ। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার প্রবীণ সাংবাদিক কামাল আহমেদ তার ডেস্কে বসে ভাবছিলেন, আরেকটি গতানুগতিক রাজনৈতিক প্রতিবেদন নিয়ে। গত ত্রিশ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি এত প্রতিশ্রুতি আর তার ভাঙনের সাক্ষী হয়েছেন যে, এখন আর কোনো কিছুতেই সহজে বিশ্বাস করেন না। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এই শব্দটা তার কাছে এখন একটা ফাঁপা বুলি ছাড়া আর কিছু নয়।
এমন সময়েই তার ফোনে একটি সোর্স খবর পাঠায়: তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটেছে। সরকার ‘আলোকবর্তিকা’ নামে বিশাল এক প্রকল্প ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ভেতরেই চলছে কানাঘুষা।
অন্যদিকে, মন্ত্রণালয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সার্ভার রুমে বসে তরুণী সিস্টেম অ্যানালিস্ট নাদিয়া ইসলামের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তার স্ক্রিনে একটি ফাইল খোলা, যার কোনো উৎস নেই, প্রেরক নেই। ফাইলটি যেন নিজে থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। ‘প্রজেক্ট আলোকবর্তিকা’ শুধু একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইশতেহার। এতে প্রান্তিক মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার নিখুঁত বিশ্লেষণের পাশাপাশি দেখানো হয়েছে, কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। এর ভাষা আমলাতান্ত্রিক নয়, বরং কাব্যিক, মানবিক। ফাইলের শেষে একটি ডিজিটাল ওয়াটারমার্ক, যা কোনো অক্ষর বা সংখ্যা নয়, বরং একটি তারাভরা রাতের আকাশের ছবি।
নাদিয়া বুঝতে পারছিলেন, তিনি এমন এক ঘটনার সাক্ষী হচ্ছেন, যা তার প্রযুক্তিবিদ্যার বইয়ের বাইরে। এটা কোনো সাধারণ হ্যাকিং নয়। এটা যেন এক ডিজিটাল শিল্পকর্ম, এক নীরব বার্তা। তার মনে হলো, যে এই কাজটি করেছে, সে সিস্টেম ভাঙতে আসেনি, গড়তে এসেছে।
সরকারের ঘোষণার পর কামাল আহমেদ ঠিক করলেন, এই খবরের গভীরে যাবেন। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিটি বড় ঘটনার পেছনে একটি মানবিক গল্প থাকে। মায়াবনপুরের ‘ভূতুড়ে স্কুল’এর গুজবটা তার কানে আসতেই তিনি দুটো ঘটনাকে এক সুতোয় গাঁথার চেষ্টা করলেন। পরদিন ভোরেই তিনি রওনা দিলেন গ্রামের পথে।
গ্রামে গিয়ে তিনি কথা বললেন জুইয়ের সাথে। জুই লাজুক হেসে জানাল, “হারুন স্যার খুব ভালো। উনি আমাদের শুধু পড়া শেখান না, গল্পও বলেন। আকাশের তারার গল্প, বড় বড় বিজ্ঞানীর গল্প।”
“তুমি তাকে দেখেছ?” কামাল আহমেদের প্রশ্নে জুইয়ের সরল উত্তর, “দেখি নাই তো কী হয়েছে? বাতাসকেও তো দেখা যায় না, কিন্তু শ্বাস তো নিই।”
রাতে কামাল আহমেদ নিজের চোখে দেখলেন সেই অলৌকিক ক্লাস। তিনি দেখলেন, কীভাবে করিম নামের ছেলেটি একটি কৃষি-অ্যাপের প্রাথমিক ডিজাইন তৈরি করছে, যা গ্রামের কৃষকদের ফসলের দাম ও আবহাওয়ার খবর দেবে। এই শিশুদের চিন্তার গভীরতা দেখে তিনি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। এদের চোখে তিনি সেই আগুনের ঝলক দেখতে পেলেন, যা তিনি ঢাকার নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যেও সচরাচর দেখেন না।
কামাল খুঁজে বের করলেন হারুনের পরিত্যক্ত বাড়ি। সেখানে ধুলোয় ঢাকা একটি পুরনো ডায়েরি পেলেন। পাতায় পাতায় শুধু জটিল প্রোগ্রামিংয়ের কোড আর অ্যালগরিদম নয়, ছিল তার ব্যক্তিগত কষ্ট আর স্বপ্নের কথাও। এক জায়গায় লেখা:
“আজ বাবা মহাজনের ঋণের টাকা দিতে না পারায় অনেক কাঁদছিল। আমার শহরে যাওয়ার পড়ালেখার খরচ বন্ধ। আমার কি দোষ? জ্ঞান অর্জন করা কি শুধু ধনীদের অধিকার? একদিন আমি জ্ঞানের এমন এক নদী তৈরি করব, যেখানে সবাই কোনো বাধা ছাড়াই অবগাহন করতে পারবে।”
এই লেখাগুলো পড়তে পড়তে কামাল আহমেদের মতো কঠিন হৃদয়ের মানুষেরও চোখ ভিজে এলো। তিনি বুঝতে পারলেন, এটা কোনো ভূতের গল্প নয়। এটা তীব্র অভিমান, বঞ্চনা আর এক অসমাপ্ত স্বপ্নের গল্প।
কামাল আহমেদ ঢাকায় ফিরে নাদিয়ার সাথে যোগাযোগ করলেন। তিনি তাকে হারুনের ডায়েরির কথা জানালেন। নাদিয়াও তাকে দেখাল সেই ডিজিটাল ওয়াটারমার্ক তারাভরা রাতের আকাশের ছবিটি। হারুনের ডায়েরিতেও বারবার ফিরে এসেছিল আকাশের কথা, অসীমের কথা। তারা দুজনে মিলে বুঝতে পারলেন, তারা এক অভূতপূর্ব রহস্যের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
নাদিয়া আরও গভীরে গিয়ে আবিষ্কার করল, ‘আলোকবর্তিকা’ ফাইলটি সার্ভারে আপলোড হওয়ার মুহূর্তে মন্ত্রণালয়ের বাইরের সিসিটিভি ক্যামেরায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য একটি অস্বাভাবিক এনার্জি ফ্লাকচুয়েশন রেকর্ড হয়েছিল। যেন ওই মুহূর্তে সেখানে সময়ের গতিপথ সামান্য বদলে গিয়েছিল।
তারা কীসের মুখোমুখি?
একজন অতি উন্নত হ্যাকার, যে নিজেকে আড়ালে রাখতে ভালোবাসে?
হারুনের তৈরি করা কোনো সংবেদনশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা তার স্রষ্টার স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে?
নাকি হারুনের মতো আরও কিছু নাম-পরিচয়হীন তরুণ প্রযুক্তিবিদ, যারা একজোট হয়ে এই নীরব বিপ্লব ঘটাচ্ছে?
কামাল ও নাদিয়া একটি নৈতিক সংকটের মুখোমুখি হলেন। এই রহস্য ফাঁস করে দিলে কি ভালো হবে? আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় হয়তো এই মহৎ উদ্যোগটি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। ‘অদৃশ্য শিক্ষক’কে খুঁজে বের করার চেষ্টা করলে হয়তো সে নিজেকে গুটিয়ে নেবে।
কামাল আহমেদ তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনটি লিখলেন, কিন্তু সেখানে তিনি কোনো সত্য ফাঁস করলেন না। তিনি হারুন বা কোনো প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের কথা উল্লেখ করলেন না।
তিনি লিখলেন এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা। তিনি লিখলেন, “আমাদের এই ইট-পাথরের শহরে যখন তরুণরা ভার্চুয়াল জগতে বুঁদ হয়ে থাকছে, তখন মায়াবনপুরের মতো কোনো এক গ্রামে একদল শিশু গড়ছে বাস্তবতার পৃথিবী। তাদের শেখাচ্ছে এক ‘অদৃশ্য শিক্ষক’। এই শিক্ষক হয়তো কোনো ব্যক্তি নন, তিনি হয়তো আমাদের সম্মিলিত বিবেকের প্রতিধ্বনি। তিনি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন, উন্নয়নের আলো শহরের উঁচু দালানে আটকে রাখলে চলবে না, তাকে পৌঁছে দিতে হবে গ্রামের শেষ ঘরটি পর্যন্ত।”
তার লেখাটি সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করল। ‘অদৃশ্য শিক্ষক’ এক জাতীয় কিংবদন্তিতে পরিণত হলো।
এখনো প্রতি রাতে মায়াবনপুরের স্কুলে আলো জ্বলে। জুই এখন তার বাবাকে শিখিয়েছে কীভাবে স্মার্টফোনে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখতে হয়, যাতে বৃষ্টির দিনে তিনি বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে পারেন। করিম তার বানানো কৃষি-অ্যাপের ধারণা গ্রামের কৃষি কর্মকর্তাকে দেখিয়েছে, যিনি তাকে আরও উন্নত করার জন্য সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
‘অদৃশ্য শিক্ষক’ কে, সেই রহস্য হয়তো কোনোদিনই সমাধান হবে না। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। কারণ তিনি যা তৈরি করেছেন, তা একদল আত্মবিশ্বাসী, স্বপ্নবাজ তরুণ। তারাই একদিন এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
হারুনের জ্বালানো আলোকবর্তিকা এখন আর একা নয়। তার আলোয় হাজারো প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। আর সেই সম্মিলিত আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে সকল অন্ধকার আর বৈষম্য। কিছু গল্প অসমাপ্ত থাকাই শ্রেয়, কারণ তা আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখায়।
দিনশেষে, অদৃশ্য শিক্ষকের আসল পরিচয় সম্ভবত আর ততটা জরুরি নয়। তিনি কি হারুনের অতৃপ্ত আত্মা, নাকি তার হাতে গড়া অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অথবা পরিচয় গোপন রাখা একদল তরুণের নিঃস্বার্থ বিপ্লব সেই উত্তর সময়ের অতলেই হারিয়ে থাক। কারণ কিছু রহস্যের সমাধান না হওয়াটাই তার সবচেয়ে বড় সমাধান।
আমরা বরং ভাবি, এই অদৃশ্য শিক্ষক আমাদের কী শিখিয়ে গেলেন? তিনি শিখিয়েছেন, একটি তীব্র এবং সৎ ইচ্ছা থাকলে, তা ভৌগোলিক দূরত্ব, সামাজিক সীমাবদ্ধতা, এমনকি মৃত্যুর সীমানাকেও অতিক্রম করতে পারে। তিনি দেখিয়েছেন, প্রযুক্তির আসল সার্থকতা শুধু তথ্যের আদান-প্রদানে নয়, বরং মমতা এবং জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ায়।
আজকের এই ডিজিটাল যুগে আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের অজান্তে এক একটি ‘ডিজিটাল ভূত’ বা পদচিহ্ন রেখে যাচ্ছি। আমাদের ছবি, আমাদের লেখা, আমাদের কথোপকথন সবই থেকে যাচ্ছে ডেটার অনন্ত সমুদ্রে। একবার ভাবুন তো, আমাদের এই ডিজিটাল অস্তিত্ব যদি শুধু স্মৃতিচারণের জন্য না হয়ে, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে শুরু করে, তবে কেমন হবে? হারুনের ‘ডিজিটাল ভূত’ যদি প্রতিশোধ বা না ছড়িয়ে, জ্ঞানের আলো ছড়াতে পারে, তবে আমাদের সম্মিলিত ডিজিটাল চেতনা কী অসাধ্য সাধন করতে পারে?
‘আলোকবর্তিকা’ শুধু মায়াবনপুরের একটি স্কুলের গল্প নয়। এটি আমাদের প্রত্যেকের ভেতরের সম্ভাবনার গল্প। আমাদের সবার মধ্যেই একজন ‘অদৃশ্য শিক্ষক’ ঘুমিয়ে আছে। আপনার অর্জিত জ্ঞান, আপনার একটি ছোট উদ্যোগ, আপনার বলা একটি উৎসাহের কথাই হয়তো কারো জন্য হয়ে উঠতে পারে সেই আলোকবর্তিকা, যা তার পুরো জীবনকে আলোকিত করে দেবে।
আপনার কাছে আমাদের প্রশ্ন: আপনার কী মনে হয়? এই অদৃশ্য শিক্ষক আসলে কে বা কী? আপনার জীবনে বা আপনার আশেপাশে কি এমন কোনো ‘অদৃশ্য শিক্ষক’ আছেন, যিনি নীরবে কারো জীবন বদলে দিচ্ছেন?
এই গল্পটি যদি আপনার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়ে থাকে, তবে এটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার ভাবনাগুলো আমাদের জানান নিচের মতামত বিভাগে। আসুন, আমরা শুধু গল্প পড়ব না, গল্পের অংশ হয়ে উঠব। কারণ এমন হাজারো আলোকবর্তিকা জ্বলে উঠলেই, আমাদের সমাজ থেকে বিতাড়িত হবে সকল অন্ধকার।
অদৃশ্য শিক্ষক, আলোকবর্তিকা, হারুনের স্বপ্ন, গ্রামীণ শিক্ষা, প্রযুক্তি বিপ্লব, ডিজিটাল ভূত, বাংলাদেশ।


🌸 আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আগামীতে আরও মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা গল্প পছন্দ করে থাকেন, জানালে ভালো লাগবে।
নিয়মিত পাশে থাকুন — আপনার সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি।
শুভ কামনায়,
✍️ কল্পকথা-৩৬০ ব্লগ টিম
https://kalpakatha360.blogspot.com