জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে বাবার চোখে অপমানের অশ্রু, বিদেশ যেতে গিয়ে ভাইয়ের সর্বস্ব বিক্রি, জমি রেজিস্ট্রেশনে মায়ের একাধিক বার ঘুষ—এটাই কি আমাদের সিস্টেম?
এই যে প্রতিটি ধাপে ‘দালাল’—একজন মধ্যস্বত্বভোগী—তার ছায়া আমরা দেখি, ঘৃণা করি, অথচ নিরুপায়ভাবে তাকে আশ্রয়ও করি। কেউ ঠকায়, আবার কেউ হয় পরিত্রাতা। একজন দালাল রাতভর কাগজপত্র ঘেঁটে একজন গরিব মানুষকে বিদেশ পাঠাতে সাহায্য করে—কিন্তু সেই একই দালাল অতিরিক্ত টাকা নিয়ে কখনও তার স্বপ্নও ভাঙে।
তাহলে প্রশ্ন হলো—এই দালাল আসলে কার সৃষ্টি?
আমরা, যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে shortcut খুঁজি?
না-কি রাষ্ট্র, যে সেবার গ্যারান্টি দিতে ব্যর্থ?
নাকি পুরো সমাজ, যেখানে নিয়মের চেয়ে ‘চেনাজানা’ বেশি কার্যকর?
বাংলাদেশে দালাল বলতে আমরা শুধু প্রতারক বোঝাই না—এটা এক ‘ব্যবস্থা’, যেটা কারও কাছে অপরাধ, আবার কারও কাছে পেশা। ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া নামজারি হয় না, সরকারি হাসপাতালে অপারেশন করতে গেলে ‘লোক’ ধরতে হয়, বিদেশ যেতে হলে ‘কোটা’ চাই—এবং এসব চাহিদার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষকে আমরা 'দালাল' বলি।
এই ব্লগে আমরা সেই সব দালালদের মুখোমুখি হবো—যাঁরা কারও চোখে অপরাধী, আবার কারও চোখে একমাত্র ভরসা।
তবে শেষ প্রশ্ন রয়ে যায়—যে ব্যবস্থায় দালাল অপরিহার্য, সেখানে প্রতারক কে? ব্যক্তি, সমাজ, না রাষ্ট্র?
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে—বিশেষ করে শ্রমবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি, বিচারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে—'দালাল'দের ভূমিকা, প্রভাব ও এই ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বাস্তবতা। ‘যে ব্যবস্থায় দালাল অপরিহার্য, সেখানে প্রতারক কে—ব্যক্তি, সমাজ, নাকি রাষ্ট্র?’
বাংলাদেশে দালাল, সরকারি সেবায় দালাল, বিদেশগামী শ্রমিক প্রতারণা, ভূমি অফিসে ঘুষ, স্বাস্থ্য খাতে দালাল, শিক্ষা খাতে দালাল, পাসপোর্টে দালাল, বাংলাদেশে দুর্নীতি, দালাল প্রতিরোধ, দালাল সংস্কৃতি, দালাল মুক্ত সমাজ,বাস্তবতায় বিষবাতি: দুর্নীতি আর ঘুষের সংস্কৃতির গল্প
একজন গৃহিণী ভূমি অফিসের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু কাজ হতে দেখছেন না। দৈনিক ইন্কিলাবে প্রকাশিত ভিডিও অনুসারে শেরপুরের শ্রীবরদীতে ভূমি অফিসে “ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হচ্ছে না”। আবেদন করার মাত্র প্রথম ধাপেই তাকে ৫০০–২০০০ টাকা দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে রাজশাহীর এক পাসপোর্ট অফিসে অভিযোগের সূচনা হয়েছে, সেখানে কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ফেরত দিয়ে হচ্ছে—পরে দালালের মাধ্যমেই ২ হাজার টাকা ঘুষ দিলে কাজ সেরে দেয়া হয়েছে। এই বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের ঘাড়ে মঞ্চ পেকে বসা দালাল সংস্কৃতির এক মর্মান্তিক ছবি তুলে ধরে। সাধারণ মানুষ যখন জীবন মান রক্ষা করার স্বপ্ন নিয়ে সরকারি সেবা নিতে যায়, তখন সেবার বদলে ঘুষ দেওয়ার হতাশার মুখোমুখি হচ্ছে।
বিদেশগামী শ্রমিক: স্বপ্নভাঙার সিঁড়ি
বিদেশে কাজের সুযোগকে জীবনের মুখ্য লক্ষ্যে পরিণত করেছেন লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক। কিন্তু এ স্বপ্নপূরণে গুরুদায়িত্ব নিয়েছেন দালালরা। গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্য বা সিঙ্গাপুরগামী কর্মীরা ভিসা-নিয়োগের প্রতিটি ধাপে দালালদের করাল কায়দায় আটকে পড়েন। একটি প্রতিবেদনে টিআইবি উল্লেখ করেছে, প্রবাসী পুরুষদের ৯০% দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হচ্ছেন, আর এক ভিসা প্রকৃত মূল্যের তুলনায় ৩–১২ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে দালালের হাত ধরে। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরবের সাধারণ ভিসা মাত্র ১.২০ লাখ টাকায় কেনা হলেও সাতস্তরীয় দালাল চেইন শেষে বাংলাদেশি শ্রমিকের পকেটে ৫–১২ লাখ টাকা খরচ হয়। শুধুমাত্র নির্ধারিত ফি অনুযায়ী যেতে পারলে খরচ অর্ধেকও হবে না। বরং বিদেশগামী শ্রমিকদের বিপরীতে স্থানীয় এই সিন্ডিকেট এই সুযোগকে অর্থকরে পরিণত করছে। প্রবাসীদের অভিযোগ, এলিজিবিলিটি চেক ও ছাড়পত্রের জন্য বিএমইটি-সহ বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা দালালদের সঙ্গেও হাত মিলিয়ে প্রত্যেক পদে ৫–১৫ হাজার টাকা বা তারও বেশি ঘুষ নিচ্ছেন। এমনকি মালয়েশিয়ায় পাসপোর্ট নবায়নে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতি গড় খরচ ৩০ হাজার টাকার ওপরে উঠে গেছে—সরকারি ফি মাত্র ৫১ রিংগিত হলেও দালালদের দাবি পড়েছে ১ হাজার রিংগিত (প্রায় ৩০ হাজার টাকা)। ফলশ্রুতিতে হাজারো প্রবাসীর ঘরে আর্থিক ক্ষতি তো বটেই, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও কমে যাচ্ছে।
ভূমি অফিসে দালালের দৌরাত্ম্য
দালাল সংস্কৃতির আরেক প্রাণমণ্ডল ভূমি অফিস। শ্রীবরদীতে ভূমিসংক্রান্ত সেবা নিতে আসা প্রত্যেকই জানেন, ভূমি অফিসে সরকারি ফি দিয়ে কাজ শেষ করা প্রায় অসম্ভব। প্রত্যেক ভূমি অফিসেই দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয়—জমিজমা নামজারি, খাজনা আদায়, জমির খাজনা মুক্তি বা দলিল সংশোধন সব ক্ষেত্রে স্থানীয় দলিল লেখক ও মডেল টাউটের মাধ্যমে ঘুষ আদায় হয়। উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা হাসিমুখে স্থানীয় দালাল থেকে টাকা গুনে নিচ্ছেন—ভিডিও ফুটেজে এই দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যায়। এসব সিন্ডিকেট জমির নথিপত্র নিয়ন্ত্রণে রাখার কারণে সাধারণ কৃষক বা দালালবিহীন আবেদনকারীকে মাসের পর মাস ঘুরতেই হয়। জীবনের অবলীলায় জমি বিক্রি-বন্টন থেকে শুরু করে হোল্ডিং নীলামের মতো কাজে পর্যন্ত প্রতিনিয়ত দালালের সাহায্য নিতে হচ্ছে—এখানে “ভূমি অফিসে ঘুষ” যেন নিয়ম, আর নিয়মের বাইরে যাওয়া দুঃস্বপ্ন। সংস্কারমূলক কোনো উদ্যোগ বিগত অনেক বছরেও তেমন ফল দেখায়নি। যেহেতু প্রতিটি কাজের গতি বাড়াতে দালালের কাছে টাকা দেওয়া হয়, তাই সাধারণ মানুষ অজান্তেই এই অনিয়মকে ‘নিয়ম’ বলে মেনে ফেলছে।
স্বাস্থ্যখাতে দালাল: জীবনের সাথে বাণিজ্য
সরকারি হাসপাতালেও রয়েছে শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। দুদকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহু বছর ধরে একই হাসপাতালে কাজ করা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্থানীয় দালালদের সহযোগীতায় একটি চক্র গড়ে তুলেছেন। অসহায় রোগীদের দ্রুত সেবা দেওয়ার আশায় তারা বেআইনিভাবে অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে থাকা ক্লিনিকে বা জেলা হাসপাতালে গুরুতর রোগী হলে পরিবারগুলো ঘায়েল—দালালদের মোহমন্তে প্রলুব্ধ হয়ে সরকারি সেবার বদলে প্রাইভেট সেবা কিনে নিতে বাধ্য। এসব কেন্দ্রগুলোর দালালরা ‘প্রকাশ্যে’ সরকারি সুবিধা অজ্ঞ রোগীর কাছে ছেড়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়, বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সঙ্গে ভাগাভাগির কমিশন নেয়। ফলে দরিদ্র রোগীরা সরকারি হাসপাতালে সুলভ চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকার খাদ্য সহায়তার পুরনো ফি ‘কালোবাজারে’ বিক্রি করে নেওয়া হচ্ছে। ডাক্তার নিয়োগ–বদলিতেও অনিয়ম চলে, প্রশিক্ষণার্থী বাছাইয়ে দুর্নীতি আর ভর্তিতে নিছক অর্থের প্রলোভন—এসবই অভ্যস্ত দৃশ্য। রোগীদের সাথে বাণিজ্য করে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা আজ ক্রমেই বিলুপ্ত।
সরকারি সেবায় মধ্যস্থতা: দালাল ছাড়া নেই সমাধান
পাসপোর্ট, ভোটার আইডি, গাড়ি লাইসেন্স, বিদ্যুৎ–পানির সংযোগ—দেশের যে কোনো সরকারি সেবায় দালালকে সক্রিয়ভাবে দেখা যায়। একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন বলছে, পাসপোর্ট অফিসে কাজ করতে গিয়েও আবেদনকারীরা প্রায় ৯৮% সময়ই দালালের সাহায্য নিয়ে ঘুষ দিতে বাধ্য হচ্ছে। এজেন্সি ভাড়া, সুবিধা-অধিকার, ভর্তি প্রক্রিয়া থেকেও দালালের ছায়া মুছে না; অনেক জনপ্রিয় কলেজে দালাল নামধারি কোচিংবাবুদের মাধ্যমে ভর্তি হয়। এমনকি বিদেশগামীদের পাসপোর্ট চলেও গোটা সিন্ডিকেট কন্ট্রোলে—মালয়েশিয়া দূতাবাসের তুলনীয় গুজব যে বাস্তব হয়েছে, মালয়েশিয়ার পাসপোর্ট অফিসে বাংলাদেশিদের পছন্দমতো সেবা চালু রাখার জন্য ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। যে দেশে “সরকারি সেবা” মানেই জনসাধারণের দুর্নীতিমুক্ত অধিকার, সেখানে বাস্তবে সেবার প্রতিটা ধাপ দালালের দখলে—এমনিতে দায়ী কে? ব্যক্তি না কোনো অংশীদারী চক্র? সম্ভবত দোষী খুঁজতে গিয়ে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদেরও নাম আসবে। যেমন বিভিন্ন নিউজপত্রের সম্পাদকীয়তে উল্লেখ হয়েছে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঘুষ-দালাল যতটা সাধারণ মানুষের মধ্যে আছে, তবু তা নির্মূলের তেমন উদ্যোগ নেই—প্রশাসন ও আইনের শাসন করেই এ ব্যবস্থার প্রতিকার সম্ভব হওয়া উচিত ছিল।
দোষারোপ: ব্যক্তি না রাষ্ট্র?
এসব প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন ওঠে—যে ব্যবস্থা ‘দালাল’কে অপরিহার্য করে তুলেছে, সে ব্যবস্থার প্রতারক কে? খোজ নেওয়া হলে বোঝা যায়, দালালই শুধু নয়, সংস্কারহীন প্রতিষ্ঠান ও দুর্নীতিবাজ ব্যবস্থাও প্রতারক হয়ে উঠেছে। যেমন বলা হয়, “সরকারি অধিকাংশ সেবায় মানুষ দালালের কাছে টাকা দিলে কাজ করাতে পারে, এতে ভোগান্তি কমে”। অর্থাৎ এই অনিয়মকে গ্রহণ করে নিয়েই জনগণ আপাত শান্তি পেতে চায়। তবে এ অস্বাভাবিক সংস্কৃতি দীর্ঘমেয়াদি নয়; একসময় মুখ না খুললেও এখন অনেকে বলছে, “জীবন দাওয়ার আগে দালালদের প্রভাব কমাতে হবে।” সাংবাদিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, শাসকগোষ্ঠী থেকে প্রশাসন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অংশীদারিত্ব-সহ যে দুর্নীতির পরতে পরতে সংস্কৃতি পোষণ করা হয়, সেটিই মূল “প্রতারক” যেটা সমাজকে ক্রমশ ভরিয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে শুধু ব্যক্তিগত দালালকেই দোষ দিয়ে লাভ নেই—অনুকূল ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে এমন পরিবেশই প্রকৃত অপরাধী।
সমাধানের আহ্বান ও প্রতিশ্রুতি
এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ একটাই: সবাইকে সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। নাগরিকদের উচিত তথ্যজ্ঞান বাড়িয়ে সরকারি সেবা নেয়ার জন্য শুধু আইনগত পথ অনুসরণ করা এবং দালালের সহায়তা থেকে বিরত থাকা। আর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নজরদারিতে রেখে ঘুষ-বিরোধী ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। শিক্ষিত সমাজ, মিডিয়া ও সুশীল নেতাদেরও ভূমিকা নিতে হবে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা তৈরিতে। এগিয়ে এলে এক নতুন প্রজন্ম দাঁড়াবে; দেশকে দালালমুক্ত করতে পারলেই আমরা সত্যিই “স্বাধীন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ” অর্জনের দিকে এগিয়তে পারব।
নাগরিকদের: সরকারি সেবা নিতে গিয়ে কোনও মাধ্যমের মুখোশ ছুঁড়ে ফেলুন, ঘুষ-দালাল না দিয়ে নিয়মিত অভিযোগের পথ অনুসরণ করুন।
প্রশাসন ও নীতিনির্ধারকদের: প্রতিটি সরকারি অফিসে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে অডিট ও ডিজিটাল কৌশল অবলম্বন করুন। দালালপন্থা ঠেকাতে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিন।
সামাজিক আন্দোলন: শিক্ষিত সমাজ ও গণমাধ্যমকে দায়িত্ব নিতে হবে—প্রকাশ্যে দুর্নীতির খবর তুলে ধরে জনমত গঠন করুন, সবার সামনে সত্য তুলে ধরুন।
প্রতিটি স্তরে সংহতি ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমরা দালালমুক্ত সমাজ গড়া শুরু করতে পারি। সরকারি সেবা যদি সত্যিই মানুষের অধিকার হয়, তাহলে সব নাগরিক ও শাসনকর্তাদের মিলে সেই অধিকার নিশ্চিত করাই এখন সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
দালাল: খলনায়ক নাকি ভাগ্য গড়ার কারিগর? মুদ্রার অন্য পিঠের গল্প!
‘দালাল’— শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে একজন ধুরন্ধর, প্রতারক এবং অর্থলোভী মানুষের ছবি। সংবাদপত্রের পাতা খুললে বা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলে প্রায়শই দেখা যায় বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে সর্বস্বান্ত হওয়া মানুষের হাহাকার, আর সেই গল্পের প্রধান খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এই দালালদের। তাদের নিয়ে নেতিবাচক খবরের এত ছড়াছড়ি যে, আমরা ধরেই নিয়েছি এই মানুষগুলো সমাজের কীট, এদের কোনো ইতিবাচক ভূমিকা থাকতেই পারে না।
কিন্তু আসলেই কি তাই? মুদ্রার কি কেবল একটাই পিঠ হয়?
আজ আমরা সেই গল্পের গভীরে ডুব দেব, যা সাধারণত আলোচনার আড়ালে থেকে যায়। আমরা খতিয়ে দেখব, কেন হাজারো বদনাম সত্ত্বেও গ্রামের একজন সাধারণ তরুণ স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ হিসেবে একজন দালালের হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে। এই লেখায় আমরা দালালদের কেবল খলনায়ক হিসেবে না দেখে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাদের অস্তিত্বের কারণ এবং তাদের সেই ‘অদৃশ্য’ অবদানগুলোকেও নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব, যা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নীরবে কাজ করে যায়।
কেন ‘দালাল’ শব্দটি একটি গালি? বাস্তবতার ভয়াবহ চিত্র!
দালালদের নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা সমাজে প্রচলিত, তার পেছনে শক্ত কারণ রয়েছে। এই দিকটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ তাদের প্রতারণার শিকার হন, যা তাদের এবং তাদের পরিবারকে ঠেলে দেয় এক অকল্পনীয় দুর্গতির দিকে।
সর্বস্বান্ত হওয়ার গল্প: সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো আর্থিক প্রতারণা। একজন কর্মীকে বিদেশে পাঠাতে যেখানে সরকারিভাবে একটি নির্দিষ্ট খরচ বেঁধে দেওয়া আছে, সেখানে দালালরা প্রায়ই সেই খরচের তিন থেকে চারগুণ, এমনকি পাঁচগুণ পর্যন্ত টাকা হাতিয়ে নেয়। গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলো ভালো-মন্দ না বুঝেই জমিজমা বিক্রি করে বা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সেই টাকা তুলে দেয় দালালের হাতে।
মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ফাঁদ: "এসি রুমে কাজ, মাসে লাখ টাকা বেতন, থাকা-খাওয়া ফ্রি"—এই ধরনের আকাশকুসুম প্রতিশ্রুতির জাল বুনে কর্মীদের আকর্ষণ করা হয়। কিন্তু বিদেশে পৌঁছানোর পর তারা দেখতে পায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাস্তবতা। যে কাজের কথা বলা হয়েছিল, তার বদলে করতে হয় অমানুষিক পরিশ্রম, বেতনও মেলে নামমাত্র।
ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ পথে প্রেরণ: অনেক সময় বৈধ পথের পরিবর্তে অবৈধভাবে, বিপদসংকুল পথে কর্মীদের বিদেশে পাঠানো হয়। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বা ভূমধ্যসাগরের তীরে যে গণকবরের সন্ধান মেলে, তা এই নির্মম বাস্তবতারই সাক্ষী। জীবন বাজি রেখে স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে অনেকেই হারিয়ে যান চিরতরে।
মানবিক বিপর্যয়: বিদেশে পৌঁছানোর পর সমস্যায় পড়লে অনেক দালালেরই আর খোঁজ পাওয়া যায় না। পাসপোর্ট আটকে রাখা, নিয়োগকর্তার নির্যাতন, অসুস্থতা বা মৃত্যুর মতো পরিস্থিতিতে কর্মীরা হয়ে পড়েন অসহায়। তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ থাকে না।
এই চিত্রগুলোই ‘দালাল’ শব্দটিকে একটি সামাজিক গালিতে পরিণত করেছে। তারা হয়ে উঠেছে শোষণ এবং প্রতারণার প্রতীক। কিন্তু এই গল্পের এখানেই শেষ নয়।
মুদ্রার অপর পিঠ: যে অবদান আড়ালেই থেকে যায়
যদি দালালরা এতই খারাপ হবে, তাহলে প্রশ্ন জাগে—কেন আজও বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে এবং শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে তাদের এত শক্তিশালী উপস্থিতি? কেন একজন মানুষ সবকিছু জেনেও একজন লাইসেন্সধারী এজেন্সির চেয়ে পাশের বাড়ির ‘সফিক দালাল’ বা ‘করিম ভাই’কে বেশি বিশ্বাস করে?
এর উত্তর পেতে হলে আমাদের বুঝতে হবে বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামো এবং সরকারি ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতা। দালালরা মূলত সেই ব্যবস্থার ‘ফাঁক’ বা ‘গ্যাপ’ পূরণ করে, যা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া করতে পারে না।
১. তথ্যের শেষ মাইল সংযোগকারী (The Last-Mile Connector):
বাংলাদেশের অধিকাংশ রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস ঢাকা কেন্দ্রিক। প্রত্যন্ত গ্রাম বা চরাঞ্চলের একজন মানুষের পক্ষে ঢাকায় এসে এজেন্সির অফিসে যোগাযোগ করা, তথ্য সংগ্রহ করা এবং পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। এখানেই দালালরা ‘ব্রিজ’ বা সেতু হিসেবে কাজ করে। তারা গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাড়ির উঠোন পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কোন দেশে লোক লাগবে, কী কাজ, কত টাকা খরচ হতে পারে—এই প্রাথমিক তথ্যগুলো তাদের মাধ্যমেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়। তারা সেই সংযোগটি ঘটায়, যা কোনো চকচকে করপোরেট অফিস ঘটাতে পারে না।
২. প্রক্রিয়াগত জটিলতার সহজ সমাধান:
পাসপোর্ট তৈরি, মেডিকেল টেস্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ভিসা আবেদন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট—বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। একজন স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষের জন্য এই ধাপগুলো একা সম্পন্ন করা দুঃস্বপ্নের মতো। দালালরা এই পুরো প্রক্রিয়াটি একটি ‘প্যাকেজ’ হিসেবে অফার করে। কর্মীকে শুধু টাকা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বুঝিয়ে দিতে হয়, বাকি সব কাজ দালালই দৌড়ঝাঁপ করে সম্পন্ন করে। এই ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’ অনেক কর্মীর কাছে বিশাল এক স্বস্তি।
৩. আর্থিক মধ্যস্থতাকারী:
বিদেশে যাওয়ার জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়, তা জোগাড় করা অনেক পরিবারের পক্ষেই কঠিন। দালালরা অনেক সময় স্থানীয় মহাজন বা পরিচিতদের কাছ থেকে ঋণ জোগাড় করে দেওয়ার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করে। যদিও এর জন্য চড়া সুদ গুনতে হয়, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে টাকার সংস্থান করার অন্য কোনো উপায় না থাকায় কর্মীর পরিবার এই পথই বেছে নেয়।
৪. সামাজিক বিশ্বাস এবং ভরসা:
লাইসেন্সধারী এজেন্সিগুলো কর্মীর কাছে একটি অচেনা সত্তা। কিন্তু গ্রামের দালাল প্রায়শই পরিচিত মুখ—হয়তো দূর সম্পর্কের আত্মীয়, প্রতিবেশী বা গ্রামের প্রভাবশালী কেউ। এই চেনা-জানার কারণে এক ধরনের সামাজিক বিশ্বাস কাজ করে। মানুষ ভাবে, “পরিচিত লোক, অন্তত টাকা মেরে দেবে না।” যদিও এই বিশ্বাস অনেক সময়ই ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে এই সামাজিক পুঁজিই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
৫. গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তি:
একজন দালাল যখন সফলভাবে ১০ জন কর্মীকে বিদেশে পাঠাতে পারে, তখন সেই ১০টি পরিবারে রেমিট্যান্স আসতে শুরু করে। তাদের দেখাদেখি গ্রামের আরও ৫০ জন অনুপ্রাণিত হয়। এভাবেই একটি চক্র তৈরি হয়, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়ায়। জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে হলেও, এই দালালরা গ্রামীণ বাংলাদেশ থেকে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে কর্মী সরবরাহের এক বিশাল নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে।
দালাল কি ব্যক্তি, নাকি ব্যবস্থার ফসল?
সমস্যাটা কি কেবল কতিপয় লোভী দালালের, নাকি আমাদের পুরো ব্যবস্থার মধ্যেই গলদ রয়েছে? গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায়, দালালরা কোনো বিচ্ছিন্ন চরিত্র নয়, বরং তারা এই ব্যবস্থারই একটি উপজাত (by-product)।
ব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণ: আমাদের অভিবাসন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ঢাকাকেন্দ্রিক। যদি প্রতিটি জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে তথ্য কেন্দ্র এবং সহায়তা ডেস্ক থাকত, তাহলে মানুষকে দালালের দ্বারস্থ হতে হতো না।
তথ্যের অভাব: নিরাপদ অভিবাসন কী, সঠিক খরচ কত, কোন এজেন্সি বৈধ—এই তথ্যগুলো আজও সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য নয়। সরকার বা এনজিওর প্রচারণার চেয়েও দালালের মুখের কথাই তাদের কাছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
জটিল আমলাতন্ত্র: সরকারি প্রক্রিয়া অনেক সময় এত বেশি জটিল এবং ধীরগতির হয় যে, মানুষ দ্রুত সমাধানের জন্য দালালের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি: প্রতারণার শিকার হয়েও বিচার পাওয়া এক দীর্ঘ এবং যন্ত্রণাদায়ক প্রক্রিয়া। ফলে প্রতারক দালালরা খুব কম ক্ষেত্রেই শাস্তি পায়, যা তাদের আরও বেপরোয়া করে তোলে।
যতদিন এই কাঠামোগত দুর্বলতাগুলো থাকবে, ততদিন দালালদের অস্তিত্বকেও মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তারা এই ভাঙা সিস্টেমের অনিবার্য অংশ হয়েই থাকবে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: এ শুধু বাংলাদেশের গল্প নয়
এই দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীর ধারণাটি কেবল বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা। ফিলিপাইনে এদের বলা হয় ‘ফিক্সার’, মেক্সিকো থেকে আমেরিকায় মানব পাচারে নিয়োজিতদের বলা হয় ‘কoyote’। ভারত, নেপাল, পাকিস্তান থেকে শুরু করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ—সর্বত্রই শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে এই অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক সক্রিয়। এটি প্রমাণ করে যে, যেখানেই তথ্য ও পরিষেবার ঘাটতি থাকে, সেখানেই এই ধরনের মধ্যস্বত্বভোগীর জন্ম হয়।
সমাধান কোন পথে? খলনায়ক নয়, প্রয়োজন সংস্কারের
দালালদের পুরোপুরি নির্মূল করা হয়তো বাস্তবসম্মত নয়। এর চেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে তাদের ভূমিকার সংস্কার এবং পুরো অভিবাসন প্রক্রিয়াকে মানবিক ও সহজ করে তোলা।
১. দালালদের নিবন্ধীকরণ ও প্রশিক্ষণ: ‘দালাল’ শব্দটির পরিবর্তে তাদের ‘অভিবাসন সহযোগী’ বা ‘কমিউনিটি রিক্রুটমেন্ট এজেন্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে। তাদের নিবন্ধনের আওতায় এনে, প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং তাদের কাজের একটি নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ করে দিলে এই পেশায় স্বচ্ছতা আসতে পারে।
২. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: প্রতিটি জেলায় ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা, যেখানে পাসপোর্ট থেকে শুরু করে বিএমইটি কার্ড পর্যন্ত সব সেবা পাওয়া যাবে।
৩. ব্যাপক জনসচেতনতা: ডিজিটাল এবং প্রচলিত মিডিয়া ব্যবহার করে নিরাপদ অভিবাসনের প্রক্রিয়া, খরচ এবং প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে দেশব্যাপী প্রচারণা চালাতে হবে।
৪. প্রযুক্তির ব্যবহার: একটি সমন্বিত অ্যাপ বা ওয়েবসাইট তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে বৈধ এজেন্সির তালিকা, বিভিন্ন দেশের চাকরির খবর এবং খরচের বিবরণ দেওয়া থাকবে।
৫. লাইসেন্সিং-এর উচ্চ ব্যয় এবং সরকারি উদ্যোগের অভাব: বিদেশে কর্মী পাঠানোর জন্য একটি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স পেতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়, যা সাধারণ উদ্যোক্তাদের নাগালের বাইরে। অন্যদিকে, এই পর্যন্ত সরকার নিজ উদ্যোগে কোনো নতুন শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে পারেনি। যে দেশগুলোতেই আমাদের কর্মীরা যাচ্ছেন, তার প্রায় সবগুলোই কোনো না কোনো ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে উন্মোচিত হয়েছে। সরকার কেবল সেই শ্রমবাজারগুলোতে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করার পরিবর্তে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে সময়ে সময়ে নতুন নিয়মকানুন চালু করে সেটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোও নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি বা কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে, সরকার কেবল রেমিট্যান্স আদায়ে আগ্রহী বলে মনে হয়, কিন্তু সাশ্রয়ী ও সহজ উপায়ে কর্মী পাঠানোর একটি টেকসই ব্যবস্থা তৈরিতে তাদের আন্তরিকতার অভাব স্পষ্ট।
৬. দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা: প্রতারণার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে, যাতে ভুক্তভোগীরা দ্রুত বিচার পায় এবং প্রতারকরা শাস্তি ভোগ করে।
শেষ কথা ঃ
গল্পের শুরুতে যে তরুণের কথা বলেছিলাম, তার মতো লাখো তরুণ আজও একটি উন্নত জীবনের আশায় দিন গোনে। তাদের কাছে দালালরা একই সাথে আশা এবং আশঙ্কার নাম। তারা একদিকে যেমন স্বপ্ন দেখায়, অন্যদিকে তেমনি সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করার ক্ষমতাও রাখে।
তাই, দালালদের ঢালাওভাবে ‘খলনায়ক’ বা ‘সমাজের কীট’ বলে গালি দেওয়ার আগে আমাদের গভীরে তাকাতে হবে। তারা সেই সমাজেরই আয়না, যেখানে সুযোগের অভাব এবং তথ্যের অপ্রাপ্যতা মানুষকে সহজ কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিতে বাধ্য করে।
যতদিন না আমরা একটি স্বচ্ছ, মানবিক এবং সহজলভ্য অভিবাসন ব্যবস্থা তৈরি করতে পারব, ততদিন এই দালালরা থাকবে। তারা হয়তো কারো কাছে প্রতারক, কিন্তু অন্য কারো কাছে তারাই ভাগ্য গড়ার কারিগর, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। তাদের অবদানকে স্বীকার না করলেও, তাদের অস্তিত্বের পেছনের নির্মম সত্যকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। এই ধূসর চরিত্রগুলোকে নিয়েই আমাদের অভিবাসন খাতের জটিল এবং আবেগঘন বাস্তবতা।
উৎস: বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে উপস্থাপিত।
📌 পাঠকদের প্রতি আন্তরিক অনুরোধ
এই লেখা কল্পকথা ৩৬০-এর একটি অনুভবময়, পাঠকবান্ধব উপস্থাপন। বিষয়বস্তু ভিন্ন ভিন্ন হলেও, প্রতিটি লেখায় আমরা পাঠকের সঙ্গে ভাবনার বন্ধন গড়তে চাই। আপনার মতামত, পরামর্শ ও সংশোধন আমাদের কাজকে আরও সমৃদ্ধ করবে। অনিচ্ছাকৃত কোনো ত্রুটি বা অসঙ্গতি থেকে থাকলে, দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
✍️ আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রেরণা — আপনার সংক্ষেপণ, পরামর্শ বা মতামত কমেন্টে জানালে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব। এতে আমাদের কাজ আরও নির্ভুল, মানবিক ও পাঠকবান্ধব হবে।
🤝 আপনার সহযোগিতা আমাদের চলার পথ — পাঠকই লেখার প্রাণ। ভালো লেগে থাকলে জানাতে ভুলবেন না, ত্রুটি থাকলে তা ধরিয়ে দিন। আমরা সবসময় শেখার চেষ্টা করি।
❤️ কল্পকথা ৩৬০ – পাঠকের ভালোবাসায় পথ চলে